Logo
×

Follow Us

প্রতিবেদন

ব্যতিক্রমী উদ্যোগে পাল্টে যাচ্ছে নড়াইলের কৃষি ব্যবস্থা

Icon

ফরহাদ খান

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:৩৪

ব্যতিক্রমী উদ্যোগে পাল্টে যাচ্ছে নড়াইলের কৃষি ব্যবস্থা

কৃষকদের একটি ভালো উদ্যোগে বদলে গেছে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পিরোলী এলাকার ১২৫ একর জমির কৃষি ব্যবস্থা। প্রায় ২০ বছর পর বোনা আউস ও আমন ধানের ব্যাপক ফলন হয়েছে সেখানে। এতে দুই শতাধিক কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। এ অঞ্চলের কৃষকদের উঠোনজুড়ে পাকাধানের ম ম ঘ্রাণ। ব্যস্ততা বেড়ে গেছে কৃষকের।

এলাকার কৃষক ইসরাইল শেখ পাঁচ একর জমিতে আউস ধান চাষাবাদ করেছিলেন।  তিনি বলেন, ২০ বছর পর জমিতে ধান চাষাবাদ করতে পেরে খুশি হয়েছি। ফলনও ভালো হয়েছে। এছাড়া আফজাল শেখ, কিবরিয়া মোল্লা, সুরত মোল্লা দুই একর জমিতে আমন ধান এবং খাজা মজুমদার পাঁচ একর জমিতে আমন চাষ করেছেন।

দীর্ঘ ২০ বছর ধরে নবগঙ্গা নদী থেকে লবণাক্ত পানি বিলে প্রবেশ করায় নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পিরোলী বিলসহ পাশের অভয়নগর (যশোর) উপজেলার সিদ্ধিপাশা ইউনিয়নের নাউলি বিল, আমতলা বিল এবং শুভরাড়া ইউনিয়নের গোপীনাথপুর, ইছামতি বিলে আউস ও আমন ধান চাষাবাদ করা সম্ভব হতো না।

এমন পরিস্থিতিতে পিরোলী গ্রামের গোলাম মোর্শেদ শেখ প্রায় পাঁচ বছর আগে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশেদুজ্জামান এবং তৎকালীন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিভা মল্লিককে এ এলাকার ১২৫ একর জমি অনাবাদী থাকার বিষয়টি অবগত করেন। ইউএনও এবং কৃষি কর্মকর্তা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে নদী থেকে বিলে লবণাক্ত পানি প্রবেশ বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এরপর পিরোলী বাজারের পাশে চিত্রা নদীর মোহনায়  স্লুইচগেটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এদিকে অভয়নগর উপজেলার সিদ্ধিপাশা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল কাসেম ও শুভরাড়া ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল হককে বিষয়টি অবগত করা হলে তারাও অনুপ্রাণিত হয়ে তিনটি স্লুইচগেট বন্ধ করে দিলে বিলে লবণাক্ত পানি ঢোকা বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে এ অঞ্চলের দুই শতাধিক কৃষক প্রায় ২০ বছর পর পিরোলী, নাউলি, আমতলা, গোপীনাথপুর ও ইছামতি বিলে আউস এবং আমন ধান চাষের সুযোগ পান। পিরোলী ও সিদ্ধিপাশার চন্দ্রপুরবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ ধরনের উদ্যোগ সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। 

স্থানীয়রা জানান, বিলে লোনা পানি ঢোকা বন্ধ হওয়ার পর এলাকায় মাইকিং করে ধান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। আউস ও আমন ধানের ভালো ফলন হওয়ায় আগামী দিনেও এই বিলে কৃষকরা চাষাবাদ করবেন বলে জানিয়েছেন।

প্রবীণ কৃষক আব্দুল হান্নান শেখ, আব্বাস শেখ, গোলাম মোস্তফা মোল্লা ও মেইলজার শেখ বলেন, ‘বাপ-দাদারা এই বিলে আমন ও আউস ধান চাষ করেছেন। আমরাও বড় হয়ে করেছি। তবে ২০ বছর ধরে নদী থেকে লোনা পানি ঢোকায় জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। বিগত বছরগুলোতে এক শ্রেণির অসাধু জেলেরা এলাকার প্রভাবশালীদের সঙ্গে নিয়ে ধানের মৌসুমে সøুইচগেট খুলে রাখায় লবণাক্ত পানি ঢুকে বিল সয়লাব হয়ে যেত। নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়ার লোভে এলাকার প্রভাবশালীদের সঙ্গে নিয়ে জেলেরা স্লুইচগেট খুলে রাখত। যাতে নদীর মাছগুলো বিলে সহজে প্রবেশ করতে পারে। এ কারণে বিল লোনাপানিতে সয়লাব হয়ে যায়। ফলে আমন ও আউস ধান চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যায়। এবার উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় চলতি মৌসুমে আউস ও আমন ধান চাষাবাদ করেছি। ভালো ফলনের পাশাপাশি বিছালীর (খড়) অভাব দূর হয়েছে। এ ছাড়া বিলে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছের উৎপাদন বেড়েছে।  

এ ব্যাপারে কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশেদুজ্জামান বলেন, কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে পিরোলী অঞ্চলে নদী থেকে বিলে লোনাপানি প্রবেশ বন্ধে উপজেলা প্রশাসন, কৃষি ও মৎস্য অফিস এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় কৃষকরা আউস ও আমন ধান চাষাবাদে সফল হয়েছেন। কৃষকরা এর সুফল পেয়েছেন বলে আমরা আনন্দিত। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫