সংগীত-শরীরচর্চা শিক্ষক ফেরানোর দাবিতে শাহবাগে প্রতিবাদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১১:২০
বাঙলাদেশ লেখক শিবির ও ছাত্র ফেডারেশনের প্রতিবাদ কর্মসূচি।
প্রাথমিক শিক্ষায় সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক পদ পুনর্বহালের দাবিতে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাঙলাদেশ লেখক শিবির ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে এক প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে।
শনিবার বিকাল ৪টায় আয়োজিত সমাবেশে লেখক, গবেষক, সংস্কৃতিকর্মী, শিক্ষক ও শিক্ষানুরাগীরা অংশ নেন।
সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন বাঙলাদেশ লেখক শিবিরের সভাপতি কাজী ইকবাল এবং সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লেখক ও শিক্ষাবিদ চৌধুরী মুফাদ আহমেদ, গবেষক ওমর তারেক চৌধুরী, চিত্রপরিচালক আকরাম খান, প্রকাশক আফজালুল বাশার, অনুবাদক জাভেদ হুসেন, লেখক শফি রহমান, এডভোকেট মনোয়ারুল ইসলাম, ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল বালো, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৌরভ রায় এবং জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিমসহ অন্যরা।
বক্তারা বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক বাতিলের সিদ্ধান্ত শিক্ষার সামগ্রিক বিকাশের পরিপন্থী। তাদের অভিযোগ, যারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাদের নিজেদের সন্তান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে না, অথচ এই সিদ্ধান্তের ক্ষতি বহন করবে সাধারণ পরিবারের শিশুরা।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, “৮০-র দশকে আমরা স্বৈরাচারী এরশাদের প্রতিক্রিয়াশীল শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জানতে চাই প্রশাসনের মধ্যে কারা আমাদের শিশুদের কুপমুন্ডকতার মধ্যে নিতে চায়? প্রাথমিক শিক্ষায় সঙ্গীত শিক্ষক ও শরীর চর্চা শিক্ষক পুনর্বহালের দাবিতে স্কুল ছাত্রদের কাছে যেতে হবে। তাদের সচেতন ও সংগঠিত করার জন্য। আমাদের সব থেকে বড় শিক্ষক হচ্ছে সমাজ। ইহকালের সমস্যার সমাধান বাদ দিয়ে যারা পরকালের কর্মসূচি দিয়ে জনগণকে ব্যস্ত রাখতে চায় তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করতে হবে।”
তিনি নববর্ষের সাংস্কৃতিক আক্রমণ, মাতৃভাষাভিত্তিক শিক্ষার সংকট এবং বিজ্ঞানবিরোধী প্রবণতার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তোলার আহ্বান জানান বাঙলাদেশ লেখক শিবিরের সাধারণ সম্পাদক শফি রহমান দাবি করেন, এই শিক্ষক নিয়োগ হলে প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষের কাজের ব্যবস্থা হবে। তিনি বলেন, “যারা বিজ্ঞান মানতে চান না তাদের কাছে মাথা নত করা যাবে না। বিজ্ঞানমনস্করা বিজ্ঞান বিরোধীদের কাছে হার মানবে না। গণমানুষের শিল্পী শাহ আব্দুল করিম ও লালনের গানের বিরুদ্ধে এরা দাঁড়ায়।”
এ ছাড়া তিনি মাদ্রাসা কারিকুলামে ব্রিটিশবিরোধী কৃষক আন্দোলনের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করারও দাবি জানান।
চিত্র পরিচালক আকরাম খান বলেন, “আমরা ভাবছিলাম প্রাথমিক শিক্ষায় চলচ্চিত্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, অথচ এখন সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। আদিম সমাজে যখন মানুষের মুখের ভাষা হয়নি তখন মানুষ গান, চিত্রাঙ্কন এর মাধমে তাদের মনোভাব প্রকাশ করতো। এইগুলো তাঁদের ভাষা দিত। এছাড়া সমাজে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা না থাকায় মানুষের মধ্যে সহনশীলতা কমে যাচ্ছে। সৌদি আরবে ১৭ হাজার নারী সংগীত শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে অথচ আমাদের দেশে বাতিল করা হচ্ছে।”
অভিভাবক ইসমত জাহানসহ কয়েকজন বক্তা বলেন, শিশুদের সামগ্রিক বিকাশে গান, ছবি আঁকা ও শরীরচর্চার কোনো বিকল্প নেই। তারা মনে করেন, অভিভাবকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া এই সিদ্ধান্ত বাতিল হবে না।
সমাবেশে সংহতি জানান শিক্ষক ও লেখক খালেকুজ্জামান ইলিয়াস, চিত্রপরিচালক মোহাম্মদ কাইয়ুম এবং জাতীয় গণ ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সদস্য কামরুজ্জামান ফিরোজ।
সমাবেশের সমাপনী বক্তব্যে সভাপতি কাজী ইকবাল বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রাথমিক শিক্ষায় সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক পদ পুনর্বহাল না করলে শিক্ষক, অভিভাবক ও সংস্কৃতি কর্মীদের নিয়ে লাগাতার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”
