Logo
×

Follow Us

প্রতিবেদন

গণতান্ত্রিক মহাসড়কে চলা শুরু: অ্যাটর্নি জেনারেল

Icon

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:৫৫

গণতান্ত্রিক মহাসড়কে চলা শুরু: অ্যাটর্নি জেনারেল

বৃহস্পতিবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের প্রতিক্রিয়ায় নিজ কার্যালয়ে ব্রিফিং করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের ঐতিহাসিক রায়ের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক মহাসড়কে চলা শুরু বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

এদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে আনা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে ২০১১ সালে দেওয়া রায় বাতিল ঘোষণা করেছে দেশের আপিল বিভাগ। এর ফলে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত হলো। তবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নয়, ভবিষ্যতে এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

আপিল মঞ্জুর ও পুনর্বিবেচনার আবেদন নিষ্পত্তি করে সর্বসম্মতিতে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সাত বিচারপতির আপিল বিভাগ এ রায় দেয়।

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে বেঞ্চের অন্য ছয় সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, জুবায়ের রহমান চৌধুরী, মো. রেজাউল হক, এস এম ইমদাদুল হক, এ কে এম আসাদুজ্জামান ও ফারাহ মাহবুব।

রায়ের পর নিজ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে আপিল বিভাগ আগে যে রায় দিয়েছিলেন আজ (বৃহস্পতিবার) সর্বসম্মতিক্রমে সেই রায়টাকে বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ। আগামী সংসদ ডিজলভ (ভেঙে যাওয়ার) হওয়ার পর থেকে এ রায় কার্যকর হবে। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল হলো।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে ১৯৯৬ সালের ত্রয়োদশ সংশোধনের মাধ্যমে আনা হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি সহায়ক ব্যবস্থা বলে মনে করেন আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, “এখন থেকে বাংলাদেশের মানুষ আগামী দিনে নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন। দিনের ভোট রাতে হবে না। মৃত মানুষ এসে ভোট দিয়ে যাবেন না। এ রকম একটি গণতান্ত্রিক মহাসড়কে বাংলাদেশ চলা শুরু করল বলে আমরা মনে করি।”

পঞ্চদশ সংশোধনীর মামলা এখনো আপিল বিভাগে বিচারাধীন থাকায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি করবে কিনা এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এই বিষয়টি একটু পরিষ্কার করি- পঞ্চদশ সংশোধনীর মামলা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালে কোনো সাংঘর্ষিক হওয়ার প্রশ্ন উঠবে না। কারণ পঞ্চদশ সংশোধনীর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংক্রান্ত অংশটুকু রায়ের মাধ্যমে বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। এটা হলো পঞ্চদশ সংশোধনীর ইস্যু, এটাকে হাইকোর্ট অসাংধানিক বলেছে। রায়ে বলা হয়েছে, এই সংশোধনী সরকার অসৎ উদ্দেশ্যে এনেছিল। হাইকোর্ট যে রায়টা দিয়েছেন সেই অংশটুকু আপিল বিভাগে চ্যালেঞ্জ হয়নি।”

তিনি আরও বলেন, “যদি চ্যালেঞ্জ হয়ও আপিল বিভাগ বিবেচনা করতে গেলে আজকের এই রায়টাকে সবসময় সুপারসিড (অন্য রায়ের ওপরে স্থান) করবে। আজকে আপিল মঞ্জুর ও রিভিউর আবেদন নিষ্পত্তি করে রায় দিয়েছে আপিল বিভাগ। চূড়ান্ত রায়ে- আজকের রায় অন্য রায়ের ওপরে স্থান পাবে। এটা অন্য গ্রাউন্ডে পঞ্চদশ সংশোধনীর ওই এমেন্ডমেন্টটাকে হাইকোর্ট বিভাগ বাতিল করেছেন। সেটা কিন্তু চ্যালেঞ্জ হয়নি। চ্যালেঞ্জ হয়েছে যেগুলো বাতিল চেয়েছিলেন কিন্তু হয়নি সেই পয়েন্টগুলোতে আপিল হয়েছে।”

“আজকের রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। রিস্টোরড হওয়া মানে পূর্বাবস্থায় ফিরে গেল। অর্থ্যাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পূর্বাবস্থায় ফিরে গেল এবং এটা কার্যকরী হবে। পরবর্তী সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে কার্যকর হওয়ার যে বিধানটা আছে সেই বিধানটা পুনর্বহাল হবে।”

এর আগে গত ১১ নভেম্বর এই মামলার আপিল ও রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন (২০ নভেম্বর) দিন ধার্য করে সর্বোচ্চ আদালত।

আদালতে এ সংক্রান্ত রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া। বিএনপির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও রুহুল কুদ্দুস কাজল। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। এছাড়া ইন্টারভেনার হিসেবে শুনানি করেন আইনজীবী এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী, বদরুদ্দোজা বাদল, মহসীন রশিদ ও শাহরিয়ার কবির।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করে আনা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে ২০১১ সালের ১০ মে রায় দিয়েছিল আপিল বিভাগ। সেই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের ওপর গত ২১ আগস্ট থেকে শুনানি শুরু হয়। মোট ১০ কার্যদিবস শুনানি শেষে আদালত রায়ের দিন ঠিক করেন।

গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ১৪ বছর আগের এই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন। পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন পৃথক রিভিউ আবেদন করেন।

ত্রয়োদশ সংশোধনী ও বাতিলের প্রেক্ষাপট

১৯৯৬ সালের ২৮ মার্চ সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে সংবিধানে ৫৮ক, ৫৮খ, ৫৮গ, ৫৮ঘ ও ৫৮ঙ অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত হয়।

১৯৯৯ সালে এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন আইনজীবী এম সলিমউল্লাহসহ কয়েকজন। ২০০৪ সালে হাইকোর্ট ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বৈধ ঘোষণা করে। তবে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে ২০১১ সালের ১০ মে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে।

২০১২ সালে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই ২০১১ সালের ৩০ জুন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫