ভারতের মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৩:৫৯

ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেয়েছে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল।
বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে গিয়ে ভারতে শরণার্থী হওয়া অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দিতে এ বিলটি আনা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে দেশটির পার্লামেন্টে সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল (ক্যাব) নামের এ বিলটি গৃহীত হবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক বসে। ওই বৈঠকে নাগরিকত্ব সংশোধন বিলের খসড়া পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আগামী সপ্তাহেই এই বিল পার্লামেন্টে উঠবে।
গতকাল মঙ্গলবারই ভারতের অর্থমন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছিলেন, এই মুহূর্তে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে এই বিলকে। জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার সংক্রান্ত ৩৭০ ধারা বিলোপের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল।
এই বিলের লক্ষ্য পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদান। হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্সি- এই ছয় সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা আছে এই সংশোধনী বিলে। বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে অবৈধ শরণার্থীদের ছাড় দেয়া রয়েছে বর্তমান আইনে। তারই সংশোধনী রয়েছে নয়া বিলে।
অমিত শাহ পার্লামেন্টে এই বিল যেদিন পেশ করবেন, সেদিন সব বিজেপি এমপিদের উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এই বিলে মুসলিমদের নাম না থাকায় একে সাম্প্রদায়িক বলে তীব্র সমালোচনা চালাচ্ছে বিরোধীরা। তারা বলছে, এটি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার রাজনাথ সিং বলেছেন, তিন প্রতিবেশী দেশই ইসলামি রাষ্ট্র। কাজেই অমুসলিমরাই রিসিভিং এন্ডে রয়েছেন। ধর্মীয় নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ভারতে আশ্রয় নেওয়া অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দিতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এ বিল আগেও একবার পার্লামেন্টে পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু আসামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে তখন সেটি পাস করানো যায়নি। ওই পার্লামেন্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ফের পার্লামেন্টে উঠতে যাচ্ছে বিলটি। তবে আগেরবারের প্রতিবাদের কথা মাথায় রেখে এবার আগেভাগেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অন্যান্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
প্রথম দফায় যখন এ বিলের উদ্যোগ নেয়া হয়, তখন এর বিরুদ্ধে আসাম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল। প্রতিবাদে নেমেছিল অসমিয়া জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলো। উত্তর-পূর্বের বেশ কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন।
এবারও বিল পেশের খবর বেরোতেই আসামের নানা জায়গায় বিক্ষোভ হচ্ছে। যেসব সংগঠন ইতোমধ্যে রাজপথে নেমেছে, তার মধ্যে অন্যতম কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় প্রচার সচিব রাতুল হোসেইন বলেন, ভারতীয় সংবিধানের মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। কিন্তু এই বিলে সেটাকেই ধ্বংস করে দিয়ে হিন্দু রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা হচ্ছে। এদেশের নাগরিকত্ব পেতে ধর্ম কোনো ভিত্তি হতে পারে না, আর এই বিলে সেটাই করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকাতে (এনআরসি) যে ১৯ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়েছে, তাদের মধ্যে বেছে বেছে মুসলমান ছাড়া অন্যদের নাগরিকত্ব দেয়ার জন্যই এই বিল আনা হচ্ছে।
আসামের অনেক বাংলাভাষী হিন্দু, যাদের নাম এনআরসি থেকে বাদ পড়েছে, তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হলে তাদের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বিজেপি নেতারা এমনটাই বলেছেন তাদের। -এই সময় ও এনডিটিভি