ইমরান খানের গ্রেপ্তার নিয়ে রুদ্ধশ্বাস নাটক, পুলিশ পেটালো পুলিশকে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৩, ১৮:০৮

ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেপ্তার ইস্যুতে আবারও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে দেশটির প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভেতরের সংঘাত। এবার পিটিআই প্রধানকে বাঁচাতে পুলিশকেই পেটাল পুলিশ।
দুই দিন ধরেই লাহোরের জামান পার্কে ইমরান খানের বাড়ি কার্যত যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়ে আছে। তোষাখানা মামলায় তার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য পরোয়ানা জারি করেছে পাক আদালত।
আদালতের নির্দেশের পরই হেলিকপ্টারযোগে ইসলামবাদ পুলিশের একটি দল ওই দিনই লাহোরে পৌঁছায়। মঙ্গলবার তারা ইমরান খানকে গ্রেফতারে তার জামান পার্কের বাড়ি ঘিরে অবস্থান নেয়।
কিন্তু পুলিশকে বাধা দেন তার সমর্থকরা। ইট, পাথরের বৃষ্টি হতে থাকে পুলিশের উপরে। পুলিশও পাল্টা কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ছোঁড়ে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার উত্তেজনা শেষে পিছু হটতে বাধ্য হয় পুলিশ। এরপরই লাহোর হাই কোর্ট নির্দেশ দেয় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ইমরানকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালানো যাবে না।
এমন পরিস্থিতিতে প্রকাশ্যে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গিয়েছে, ইমরান খানকে ‘বাঁচাতে’ ইসলামাবাদ পুলিশ, পাঞ্জাব পুলিশ ও পাক রেঞ্জারদের উপর হামলা চালায় গিলগিট-বাল্টিস্তানের পুলিশ বাহিনী। এমন দাবি করেছেন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ। এদিকে, এ খবর প্রকাশ্যে আসতেই গিলগিট-বাল্টিস্তানের পুলিশ বাহিনীর আইজিপি মোহাম্মদ সইদকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তার জায়গায় দায়িত্ব দেয়া হয়েছে দার আলি খান খট্টককে। দায়িত্ব নিয়েই ইমরানের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা গিলগিট-বাল্টিস্তান পুলিশের কর্মীদের জামান পার্ক থেকে সরিয়ে নিয়েছেন খট্টক।
ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের এক শীর্ষ নেতার স্পষ্ট কথা, ‘আমরা পাঞ্জাব পুলিশকে বিশ্বাস করি না। ইমরান খানের নিরাপত্তার জন্যই গিলগিট-বাল্টিস্তান পুলিশ মোতায়েন ছিল। তারা কোনও বেআইনি কাজ করেনি।’ উল্লেখ্য, গিলগিট-বাল্টিস্তান হচ্ছে আজাদ কাশ্মীরের অংশ। সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা ব্যাপক।
এদিকে, ইমরান খানকে গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে পরোক্ষে নতি স্বীকার করলেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। বাধ্য হয়েই তিনি পিটিআই প্রধানকে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিলেন।
গতকাল বুধবার শেহবাজ শরীফ জোর দিয়ে বলেন, চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট থেকে দেশকে মুক্ত করতে সমস্ত রাজনৈতিক শক্তিকে সংলাপে বসতে হবে।
ইমরান খানের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সংক্রান্ত পুলিশি পদক্ষেপের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার নিজে থেকে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না, আদালতের নির্দেশে কাজ করছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) গ্রেফতারি পরোয়ানা বাতিল চেয়ে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আবেদন করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তবে আদালত তার আবেদন নাকচ করে দিয়ে ১৮ মার্চ আদালতে হাজির হবেন, এই মর্মে মুচলেকা দেওয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আইন অনুযায়ী ইমরান খানের মুচলেকা আমলে নেওয়া নিম্ন আদালতের উচিত হবে বলেও পর্যবেক্ষণ দেন হাইকোর্ট।
এর আগে একই মামলায় ২৮ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলে তাকে গ্রেফতারে ৫ মার্চ সেখানে যায় পুলিশ। তবে তাকে ওই দিন সেখানে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছিল পুলিশ। যদিও কয়েক ঘণ্টা পরই বাসভবনের সামনে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন তিনি।