‘হুমকির সংস্কৃতি’ ঠেকাতে ফের আন্দোলনে পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৫

হাসপাতালে নিরাপত্তাসহ ১০ দাবিতে কলকাতার ধর্মতলায় অনশন করছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। ছবি: সংগৃহীত
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় আর জি কর হাসপাতালে ধর্ষণকাণ্ডের পর শুরু হওয়া আন্দোলন থামছেই না। আজ মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) থেকে ফের পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু করেছেন রাজ্যের জুনিয়র চিকিৎসকরা। পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি মেডিক্যাল কলেজে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে বলে জানানো হয়েছে। হাসপাতালে ‘হুমকির সংস্কৃতি’ দূর করা এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের কথা মাথায় রেখে সরকারের সামনে ফের ১০ দাবি রেখেছেন তারা।
আজ রাজ্যের সব সরকারি হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকেরা ১২ ঘণ্টার প্রতীকী অনশনে অংশ নেবেন। এ ছাড়া বিকেলে প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেবেন জুনিয়র ও সিনিয়র চিকিৎসকসহ সাধারণ মানুষ।
ঘোষিত ১০ দাবি আদায়ে গত শনিবার (৫ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টা থেকে কলকাতার ধর্মতলার অনশন মঞ্চে আমরণ অনশন শুরু করেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। এতে যোগ দিয়েছেন সাত জুনিয়র চিকিৎসক।
এই সাত চিকিৎসক অনশন চালিয়ে গেলেও রাজ্য সরকার তাদের দাবি নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অনশনস্থলে এসে জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের কোনো প্রতিনিধি গতকাল পর্যন্ত আলোচনাও করেনি।
আজ বিকেলে ১০টি দাবি আদায়ের দাবিতে বিশাল প্রতিবাদ মিছিল বের হবে কলকাতায়। এতে যোগ দেবেন জুনিয়র ও সিনিয়র চিকিৎসকসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। মিছিল শুরু হবে কলেজ স্কয়ার থেকে। শেষ হবে ধর্মতলার জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশন মঞ্চে।
জুনিয়র চিকিৎসকদের ১০টি দাবি হলো-
১. আরজি কর হাসপাতালে নিহত চিকিৎসকের মৃত্যুর তদন্ত স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে হবে।
২. স্বাস্থ্য দপ্তরে দুর্নীতির দায় নিয়ে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে পদত্যাগ করতে হবে।
৩. রাজ্যের প্রতিটি সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে অবিলম্বে কেন্দ্রীয় ভাবে ‘রেফারেল’ ব্যবস্থা (রোগীকে অন্যত্র স্থানান্তর করার পদ্ধতি) চালু করতে হবে।
৪. রাজ্যের সমস্ত হাসপাতালে কতগুলো বেড ফাঁকা রয়েছে, সেটি জানানোর জন্য একটি ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম রাখতে হবে।
৫. রাজ্যের প্রতিটি হাসপাতালে মেডিক্যাল কলেজভিত্তিক আলাদা টাস্ক ফোর্স গঠন করতে হবে। জুনিয়র চিকিৎসকদের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে সেই টাস্ক ফোর্সের সদস্য করতে হবে। এছাড়া হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত সিসিটিভি, ডাক্তারদের জন্য অন কল রুম, নারী শৌচালয়, হেল্পলাইন নম্বর ও প্যানিক বটন সিস্টেম চালু করতে হবে।
৬. এছাড়া সমস্ত সরকারি হাসপাতালে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। সিভিক ভলান্টিয়ারের বদলে পুলিশকর্মীদের মোতায়েন করতে হবে। নারী সুরক্ষার জন্য নারী পুলিশকর্মীদেরও রাখতে হবে।
৭. সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগ করতে হবে।
৮. মেডিক্যাল কলেজগুলোতে হুমকির সংস্কৃতি দূর করতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কমিটি তৈরি করতে হবে। রাজ্য স্তরেও পৃথক অনুসন্ধান কমিটি গড়তে হবে।
৯. সব মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি, মেডিক্যাল কলেজগুলোর রেসিডেন্ট ডাক্তারদের সংগঠনকে স্বীকৃতি দিতে হবে। সমস্ত পরিচালনা কমিটিতে চিকিৎসক শিক্ষার্থী ও জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিনিধি রাখতে হবে।
১০. রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল এবং পশ্চিমবঙ্গ হেল্থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডে দুর্নীতির অভিযোগের প্রসঙ্গে দ্রুত তদন্ত শুরু করতে হবে।
ধর্ষণের ঘটনায় সিবিআইয়ের অভিযোগপত্র
এদিকে গতকাল (৭ অক্টোবর) সোমবার বিকেলে কলকাতার শিয়ালদহের বিশেষ সিবিআই আদালতে আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার মামলায় ২১৩ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই)। ঘটনার ৫৮ দিনের মাথায় অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হলো।
অভিযোগপত্রে ধর্ষক ও হত্যাকারী হিসেবে ঘটনার পরদিন ১০ আগস্ট গ্রেপ্তার হওয়া সিভিক পুলিশ সঞ্জয় রায়ের নাম দেওয়া হয়েছে। সিবিআই এই হত্যা মামলার তদন্তে ৫৭ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাটি বলেছে, ওই ঘটনার বহু প্রমাণ মুছে দেওয়া হয়েছে। তবে তদন্ত অব্যাহত থাকবে।
আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে গত ১৪ আগস্ট রাতে নারীদের রাতজাগা কর্মসূচির দিন একদল লোক হাসপাতালটিতে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। তছনছ করা হয় জরুরি ওয়ার্ড। ভেঙে ফেলা হয় অনেক যন্ত্রপাতি। ওই ঘটনার পর পুলিশ মামলা করে। মামলার ৫০ আসামিকে গতকাল শিয়ালদহ আদালত জামিন দিয়েছে।