Logo
×

Follow Us

দক্ষিণ এশিয়া

হরিয়ানায় ভোটের ফল কী বার্তা দিল

Icon

স্বর্ণা চৌধুরী

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৬

হরিয়ানায় ভোটের ফল কী বার্তা দিল

রাহুল গান্ধী ও নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত

গত এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। তবে এর চার মাস পর উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য হরিয়ানায় রেকর্ড তৃতীয় মেয়াদে জয়লাভ করেছে দলটি। এ ছাড়া ভারত শাসিত কাশ্মীরেও সর্বকালের সেরা ফল লাভ করেছে বিজেপি। এই দুই বিধানসভার ফল বিরোধী দল কংগ্রেসসহ অন্যদের জন্য সতর্ক সংকেত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ভারতে বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফলাফল ভুল হয়েই থাকে। হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বাভাসেও ভুল হলো। তবে অন্য ভুলের চেয়ে এই ভুল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সমীক্ষার ফলাফল জানায়, দুই দফার বিজেপি সরকারের পতন ঘটবে, কংগ্রেস ক্ষমতায় আসবে। কার্যক্ষেত্রে ইতিহাস গড়ে হরিয়ানায় টানা তৃতীয় বার ক্ষমতায় এলো বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনে প্রবল বিজেপি-বিরোধী হাওয়ায় সম্ভবত গৈরিক জাতীয়তাবাদী শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্বও এমন ফলাফল প্রত্যাশা করেননি।

নরেন্দ্র মোদি সচেতনভাবেই খানিক নিষ্ক্রিয় ছিলেন। রাজ্য রাজনীতিতে এই ফলাফলের তাৎপর্য কী, সে আলোচনায় প্রথমেই মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন যে, হরিয়ানা কিন্তু চরিত্রগতভাবে ‘বিজেপি-রাজ্য’ নয়। বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির চেয়ে কৃষক ও জাত-রাজনীতির গুরুত্ব বেশি হরিয়ানায়। কংগ্রেস তার রণকৌশল সাজিয়েছিল এই দুটি প্রশ্নকে ঘিরেই; কিন্তু সম্ভবত স্রোতের অভিমুখ বুঝতে ভুল করেছিল। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিং হুডার ওপর অতিমাত্রায় নির্ভর করা যে ভুল হয়েছে, কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব ভোটের পর নিশ্চয় তা অনুধাবন করতে পারছে। হরিয়ানায় ভোটের আগে কিরণ দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। তার মেয়ে শ্রুতি জিতেছেন বিপুল ভোটে। শৈলজাকে প্রচারে গুরুত্ব না দেওয়ায় তিনি দর্শকের ভূমিকায় ছিলেন। দুই সপ্তাহ ঘরে বসে ছিলেন এই দলিত নেত্রী। বিজেপি জাঠ-বিরোধী অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির ভোটকে নিজেদের দিকে টেনে আনতে সক্ষম হয়েছে। রাজ্যের কৃষক সমাজের মধ্যে ঘনিয়ে ওঠা বিবিধ অসন্তোষকে কংগ্রেস যথেষ্ট ভোটে পরিণত করতে ব্যর্থ হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে অতি পুরনো ব্যাধি গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। ফলাফল প্রকাশের পর হুডা বনাম কুমারী শৈলজা লড়াই যেভাবে প্রকাশ্য কাদা ছোড়াছুড়িতে পরিণত হয়েছে, তা লজ্জাজনক। রাজস্থান থেকে মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র থেকে হরিয়ানা; একের পর এক রাজ্যে এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কংগ্রেসের সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করছে।

এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘এ মুহূর্তে হরিয়ানায় বিজেপির যে ফলাফল দেখা যাচ্ছে, তা তাদের জন্য একটা সদর্থক দিক।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর আম আদমি পার্টির জন্য হরিয়ানা নির্বাচন ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাঞ্জাবে ভালো ফল করার পর সবাই মনে করেছিল হরিয়ানায় তারা ভালো ফল করবে। কিন্তু আশানুরূপ ফল করতে পারেনি দলটি। মনে রাখতে হবে, কংগ্রেস কিন্তু প্রধান বিরোধী দল হিসেবে ভালো ভোট পেয়েছে সেখানে। শুধু তাই নয়, তাদের ভোট শতাংশই তাৎপর্যপূর্ণভাবে বেড়েছে।’

নব্বই আসনবিশিষ্ট হরিয়ানা বিধানসভার ফলাফল জাতীয় রাজনীতিতে তার মাপের চেয়ে অনেক বড় প্রভাব ফেলতে পারে। প্রথমত এই জয় নিঃসন্দেহে বিজেপির মনোবল বাড়াবে; ভোটে জেতার শিল্পটি যে এখনও তাদের হাতছাড়া হয়নি, এই বিশ্বাস নরেন্দ্র মোদিকে বলীয়ান করবে। দ্বিতীয়ত হরিয়ানায় ‘জিতে যাওয়া খেলা’য় পরাজিত হওয়া রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে ভোটারদের আস্থার অভাবের প্রতিফলন কি না, সে প্রশ্ন উঠবে। সম্প্রতি অন্য কোনো রাজ্যে কংগ্রেসের জয়ের সম্ভাবনা এমন তীব্র ছিল না। সেই হরিয়ানায় হেরে যাওয়া দুটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছে, এক. ভোট-শেয়ারকে কীভাবে আসনে পরিণত করতে হয়, সেই শিল্পটি এখনও কংগ্রেসের করায়ত্ত হয়নি; এবং দুই. প্রাদেশিক রাজনীতিতে জোটের পথে হাঁটবে, নাকি ‘একলা চলো’র নীতি নেবে, কংগ্রেসকে তা আবারও বিবেচনা করতে হবে। তবে এ কথাও সত্য যে, হরিয়ানা কংগ্রেসকে একেবারে খালি হাতে ফেরায়নি। ভোট-শেয়ারে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের ফারাক এক শতাংশেরও কম। রাজ্যে কংগ্রেসের ভোট বেড়েছে ১১ শতাংশ। বিজেপি-বিরোধী ভোটের সিংহভাগ কংগ্রেসের ঝুলিতে এসেছে, অর্থাৎ ভোটাররা কংগ্রেসকে বিজেপি-বিরোধিতার প্রধান মুখ বলে বিবেচনা করছেন। সর্বভারতীয় জোট রাজনীতিতে এই কথাটি নিঃসন্দেহে গুরুত্ব পাবে। দ্বিতীয়ত হরিয়ানাও স্পষ্ট করে দিল যে, ভারতের একটি বড় অংশেই ভোট এখন দ্বিমুখী, বিজেপি বনাম বিজেপি-বিরোধী প্রধান শক্তির। বিজেপি-বিরোধী জোটকে এই ‘বাইনারি’র কথাটি মাথায় রেখে পরবর্তী পরিকল্পনা সাজাতে হবে।


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫