Logo
×

Follow Us

দক্ষিণ এশিয়া

বিপদ নিজেই ডেকে এনেছে দক্ষিণ এশিয়া

Icon

এ আর সুমন

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২০, ০৯:৩৪

বিপদ নিজেই ডেকে এনেছে দক্ষিণ এশিয়া

দক্ষিণ এশিয়ায় হঠাৎ করেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। ১ মে থেকে এ অঞ্চলে দৈনিক করোনাভাইরাস রোগী শনাক্তের হার চার হাজার ছাড়িয়েছে। 

দেখা গেছে, গত ৩ মে সন্ধ্যা ৭টা থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ৪ হাজার ৮১২ জন। এর দু’দিন আগে অর্থাৎ ১ মে ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্ত করা হয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার। ঠিক এর পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্ত হয়েছিল প্রায় সাড়ে তিন হাজার। তার আগের দিন রোগী শনাক্তের হার আরো কম ছিল। 

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে যে দেশগুলোতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। দেশি-বিদেশি মিডিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিস্টেমস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও করোনাভাইরাসের ২৪ ঘণ্টা আপডেট প্রদানকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ায় সংক্রমণের তালিকায় শীর্ষে ভারত। ৩ মে পর্যন্ত ভারতে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৪২ হাজার ছাড়িয়েছে। মারা গেছেন এক হাজার ৪শ’র বেশি মানুষ। আর সুস্থ হয়েছেন প্রায় ১২ হাজার রোগী। 

ওয়ার্ল্ডোমিটারস ও দেশটির সরকারি হিসাব অনুসারে, গত ৩ মে’র পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে ২ হাজার ৮০৬ জনের বেশি। এ অবস্থায় দেশটিতে তৃতীয় দফায় লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে ১৭ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। 

পাকিস্তানে গত ৩ মে পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৬২ জন। দেশটির দৈনিক পত্রিকা ডন জানিয়েছে, মোট রোগীর সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি। মারা গেছেন সাড়ে চারশ’ মানুষেরও বেশি। তবে এই অবস্থার মধ্যেও দেশটির পরিকল্পনামন্ত্রী আসাদ ওমর দাবি করেছেন, দেশটির করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। 

রোগীর সংখ্যায় দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানের পরে বাংলাদেশের অবস্থান। দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। ৩ মে পর্যন্ত করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মোট মারা গেছেন ১৭৭ জন। উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্তের ঘোষণা আসে। আর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

এরপর রয়েছে আফগানিস্তান। দেশটিতে চিহ্নিত সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এরপরের দেশগুলোয় করোনাভাইরাস সংক্রমণ এবং পরিস্থিতি যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। 

আফগানিস্তানের পরে শ্রীলঙ্কার অবস্থান। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৭০০। মারা গেছেন মাত্র সাতজন। দেশটির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে বলেছেন, সার্বিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রোগী বাড়ছে। 

এদিকে মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটানের অবস্থা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। দেখা গেছে মালদ্বীপে ৩ মে পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫২৭ জন, আর মারা গেছেন মাত্র একজন। নেপাল ও ভুটানে এখন পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি। নেপালে আক্রান্ত হয়েছে ৭৫ জন আর ভুটানে আক্রান্তের সংখ্যা মোটে সাতজন। 

বিশ্বে করোনাভাইরাসের মহামারির শুরুর দিকে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রাদুর্ভাব কম ছিল; কিন্তু এখন এই অঞ্চলে রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু বাড়ছে। বাড়ছে মূলত ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানে। এশিয়ায় করোনাভাইরাস রোগীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫ লাখ। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে প্রায় ৭০ হাজার, মৃত্যু ২ হাজার ছাড়িয়েছে। এই দেশগুলোতে লকডাউনে ঢিলেঢালা ভাব লক্ষণীয়। অথচ এই অঞ্চলেরই শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটান আগেভাগে সতর্ক হয়ে এবং জোরালোভাবে বিধিনিষেধ পালন করে পরিস্থিতি সামলে রেখেছে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শুরু থেকেই করোনাভাইরাস মোকাবেলায় শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার বিষয়ে তাগিদ দিয়ে আসছে। লকডাউনসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নিয়ে অনেক দেশ এরই মধ্যে সফলতার আভাস পেতে শুরু করেছে। তবে উল্টো চিত্র দক্ষিণ এশিয়ার এই চারটি দেশে। 

ভারত সরকার শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিতে মার্চের শেষ দিকে লকডাউন করে, যার মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ লকডাউনের মেয়াদ ১৭ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে লকডাউনের মধ্যেই অর্থনীতি সচল করতে সবুজ, কমলা ও লাল রঙের এলাকা চিহ্নিত করে কোনো কোনো এলাকায় জনজীবন স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিয়েছে ভারত। শর্ত সাপেক্ষে যানবাহন চালু ও কোনো কোনো এলাকায় শ্রমিকদের কাজে ফেরার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। 

পাকিস্তানের সংবাদপত্র ডন অনলাইনের তথ্যমতে, দেশটিতে প্রথম রোগী শনাক্ত হয় ২৬ ফেব্রুয়ারি। করোনাভাইরাস মহামারি হানা দিলেও পাকিস্তান লকডাউন বা জরুরি অবস্থা জারির পথে হাঁটেনি। জঙ্গি তৎপরতা আর তালেবানের উৎপাতে জর্জরিত আফগানিস্তানে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকার সে অর্থে কোনো উদ্যোগই নিতে পারেনি। যার ফল বর্তমানে দিতে হচ্ছে।

অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বারংবার বলার পরও টেস্টের হার অনেক কম। ওয়ার্ল্ডোমিটারস তালিকায় বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান চল্লিশতম। এই চল্লিশটি দেশের মধ্যে টেস্টের হারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সবনিম্ন, বাংলাদেশের ১ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে টেস্ট করা হচ্ছে মাত্র ৫৩২ জনকে, আর এর আগে আছে কেবল ইন্দোনেশিয়া। সেখানে ১ মিলিয়নে টেস্ট হার ৪২৭ জন। এমনকি মালদ্বীপে প্রতি মিলিয়নে টেস্ট হচ্ছে ১৫ হাজার ৪০৫ জনের, আর ভুটানে তা ১৩ হাজার ৯৪৬ জন। সেই জায়গায় বাংলাদেশে টেস্ট হার মাত্র ৫৩২ জন। 

টেস্ট নিয়ে একই বেহাল ভারত-পাকিস্তানেও। ভারতে ১ মিলিয়নে টেস্ট হচ্ছে ৭৫৮ জনের, আর পাকিস্তানে ৯১৯ জনের। আফগানিস্তানের অবস্থা আরো করুণ, সেখানে মিলিয়নে টেস্ট হচ্ছে মাত্র ২৮৪ জনের। সার্বিক পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়ার এই চার দেশের অবস্থা তাই শোচনীয় বলাই বাহুল্য।

বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন বলেন, ‘দেশে মহামারির প্রথম ঢেউ চলছে। একটু অসতর্ক হলে দ্বিতীয় ঢেউ আরো ভয়াবহ হবে। শুধু অর্থনৈতিক বিবেচনায় স্বাস্থ্যকে উপেক্ষা করলে হবে না। এতে পরিস্থিতি আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে জরুরি কাজ চালানো যেতে পারে।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫