
অটরী সীমান্ত দিয়ে ভারত-পাকিস্তানের স্থলবাণিজ্য চলে, আপাতত যা বন্ধ রাখা হয়েছে। ছবি: পিটিআই।
পেহেলগাম হামলার পর উত্তেজনার মধ্যে এবার পাকিস্তান থেকে সব ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাকিস্তানের পতাকাবাহী জাহাজকে ভারতের বন্দরে আসতে দেওয়া হবে না। ভারতীয় পতাকাবাহী জাহাজও পাকিস্তানের বন্দরে যাবে না। এমনকি প্রতিবেশী দেশটি থেকে আসা সব ধরনের চিঠিপত্র ও পার্সেলের আদান-প্রদানও স্থগিত করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের বরাত দিয়ে শনিবার এই তথ্য প্রকাশ করেছে পাকিস্তানের দৈনিক দ্য ডন।
গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর পর এই ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে দেশটির বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত, যার মধ্যে সবশেষ সংযোজন এটি।
এরই মধ্যে পাকিস্তানিদের জন্য ভিসা কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে, এমনকি চিকিৎসা ভিসায় ভারতে আসা প্রতিবেশীদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
দুই দেশই তাদের আকাশসীমা অন্য দেশের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। সিন্ধ নদীর পানি বণ্টন চুক্তিও স্থগিত করা হয়েছে।

সীমান্তে দুই দেশই সেনার সংখ্যা বাড়িয়েছে। সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সশন্ত্র বাহিনীকে ‘অপারেশনাল ফ্রিডম’ দিয়েছেন।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার গত ৩০ এপ্রিলের ভোরে বলেন, তাদের কাছে নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য আছে যে ভারত ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তবে এই আশঙ্কা সত্য প্রমাণ হয়নি। আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র পরে সৌদি আরবের সঙ্গে কথা বলে উত্তেজনা কমাতে দেশ দুটির সহায়তা চেয়েছেন। সবশেষ শুক্রবার তিনি তার দেশে সৌদি রাষ্ট্রদূত নাওয়াফ বিন সাঈদ আল-মালিকির সঙ্গে বৈঠক করেন।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন লিখেছে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “পেহেলগামের ঘটনায় ভারতের ‘ভিত্তিহীন অভিযোগ’ আমরা প্রত্যাখ্যান করি। পাকিস্তান শান্তি ও সংলাপের পক্ষে এবং চায় আন্তর্জাতিক, নিরপেক্ষ তদন্ত হোক।”
উত্তেজনা দৃশ্যত কিছুটা কমে আসার মধ্যে ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, পাকিস্তান থেকে সব আমদানি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “জাতীয় নিরাপত্তা এবং জনস্বার্থের প্রয়োজনে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।”

ভারতীয় ইংরেজি দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসের বরাত দিয়ে পাকিস্তানের দৈনিক দ্য ডন লিখেছে, ভারতের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “ভারত সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, আকাশ ও স্থলপথে পাকিস্তান থেকে আসা সব ধরনের চিঠিপত্র ও পার্সেলের আদান-প্রদান স্থগিত করা হবে।”
এই বিজ্ঞপ্তি ভারতের যোগাযোগমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য এম. সিন্ধিয়ার সরকারি এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টেও শেয়ার করা হয়।
২০১৯ সালে অধিকৃত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ডাক আদান-প্রদান বন্ধ হয়ে যা।
তখন পাকিস্তান আগস্টে ডাক পরিষেবা বন্ধ করলেও তা একই বছরের নভেম্বর মাসে আবার চালু করে বলে এএনআই জানায়, যা পাকিস্তানি গণমাধ্যমকে উদ্ধৃত করেছে।
তবে পার্সেল পরিষেবা ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর পর্যন্তও স্থগিতই ছিল।
ভারতের আরও সিদ্ধান্ত হচ্ছে, পাকিস্তানের পতাকাবাহী কোনো জাহাজ ভারতের কোনো বন্দরে ভিড়তে পারবে না, এবং ভারতের পতাকাবাহী কোনো জাহাজ পাকিস্তানের কোনো বন্দরে যাবে না।
ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব শিপিং জানায়, “ভারতীয় সম্পদ, মালামাল ও সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য, জনস্বার্থে এবং ভারতীয় নৌপরিবহন খাতের স্বার্থে এই আদেশ জারি করা হয়েছে।”
ভারত আরও কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ও নেতাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া।
আত্তাউল্লাহ তারারের অ্যাকাউন্টও ব্লক
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আত্তাউল্লাহ তারার জানিয়েছেন, তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টও ভারত থেকে ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তান।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এবং আইএসপিআরের ইউটিউব চ্যানেলেও ভারত থেকে ঢোকা যাচ্ছে না।
পাকিস্তানের অনেক ক্রীড়াবিদ, অভিনেতা, বিনোদন চ্যানেল, সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের অ্যাকাউন্টও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ভারতে এসব প্রোফাইলে ঢুকতে গেলে এখন একটি বার্তা দেখা যায়: “এই অ্যাকাউন্ট ভারতে পাওয়া যাচ্ছে না। এটি একটি আইনগত অনুরোধের ভিত্তিতে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।”
সীমান্ত পরিদর্শনে সাংবাদিকদের নেওয়া হচ্ছে
পাকিস্তানের তথ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনি ও রবিবার তারা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের জন্য লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) পরিদর্শনের ব্যবস্থা করছে।
পাকিস্তানের ভাষ্য, ‘এ আয়োজনের উদ্দেশ্য হলো ভারতের ‘অসত্য ও কল্পিত সন্ত্রাসী ক্যাম্প’ সংক্রান্ত প্রচারণার বিরুদ্ধে বাস্তবতা তুলে ধরা।
দেশটির তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, “ভারত বারবার সীমান্তে কথিত সন্ত্রাসী ঘাঁটি নিয়ে ‘ভিত্তিহীন ও মিথ্যা’ দাবি করে আসছে।”
এই পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের সেই নির্দিষ্ট জায়গাগুলোতে নেওয়া হবে, যেগুলোকে ভারত ‘সন্ত্রাসী ক্যাম্প’ বলে প্রচার করেছে। সেখানে বাস্তব চিত্র দেখিয়ে ভারতের ‘অপপ্রচারের জবাব দেওয়া হবে’, বলছে পাকিস্তানের তথ্য মন্ত্রণালয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, “পাকিস্তান শান্তির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ এবং বিশ্বের যে কোনো স্থানে সন্ত্রাসবাদ বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করে।”
ভারতের যেকোনো আগ্রাসনের ‘কঠোর ও উপযুক্ত জবাব’ দেওয়ার অঙ্গীকারও করা হয় পাকিস্তানের তথ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে।