সিন্ধুর পানি আটকালে ‘পরমাণু বোমা’ হামলার হুমকি পাকিস্তানের

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৫, ১৪:২০

পাকিস্তানের কাছে পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম মধ্যমপাল্লার ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে
পাকিস্তানের কাছে পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম মধ্যমপাল্লার ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে ভারত যদি পাকিস্তানের ওপর হামলা চালায় বা ইসলামাবাদের পানির সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তাহলে পাকিস্তান তাদের সম্পূর্ণ সামরিক শক্তি, এমনকি পারমাণবিক অস্ত্রও ব্যবহারের পথে যেতে পারে।
শনিবার রুশ সম্প্রচারমাধ্যম আরটিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মস্কোতে নিযুক্ত পাকিস্তানের শীর্ষ কূটনীতিক মুহাম্মদ খালিদ জামালি এমনটাই বলেন।
তিনি দাবি করেন, ইসলামাবাদের কাছে নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য আছে যে ভারত পাকিস্তানের ভূখণ্ডে সামরিক হামলা চালাতে চায়।
জামালি বলেন, “কিছু গোপন নথি ফাঁস হয়েছে যেখানে নির্দিষ্টভাবে পাকিস্তানের কিছু এলাকায় হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি আমাদের ধারণা দেয় যে হামলা আসন্ন এবং প্রায় নিশ্চিত।”
গত কয়েক বছরে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের কোনো শীর্ষ কর্মকর্তার পক্ষ থেকে এটিই সবচেয়ে সরাসরি পারমাণবিক প্রতিশোধের হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
জামালি বলেন, “আমরা পাকিস্তানে আমাদের সামর্থ্যের সব কিছু ব্যবহার করব, চাই তা প্রচলিত শক্তি হোক বা পারমাণবিক।”
ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামে গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলায় হওয়া ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। যাদের বেশিরভাগই পর্যটক ছিলেন। এই ঘটনাটি দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে।
ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় ও সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ করেছে। যদিও ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং এর নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছে।

প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ভারত সিন্ধু পানি বন্টন চুক্তি স্থগিত করেছে। যা ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত হয় এবং দুই দেশের মধ্যে সিন্ধু নদ ও এর উপনদীগুলোর পানি বণ্টনের নিয়ম নির্ধারণ করে।
এই চুক্তি অতীতে একাধিক যুদ্ধের মধ্যেও টিকে ছিল এবং ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের মধ্যে একটি স্থিতিশীলতা আনার উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হত।
জামালি তার সাক্ষাৎকারে ভারতের এই সিদ্ধান্তকে যুদ্ধের সমতুল্য ঘোষণা করে বলেন, “নিম্নপ্রবাহের দেশের পানি কেড়ে নেওয়ার যেকোনো চেষ্টা বা তা থামিয়ে দেওয়া বা অন্যদিকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা—পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। আমরা পূর্ণ শক্তি দিয়ে, পূর্ণ সামরিক ক্ষমতা দিয়ে এর জবাব দেব।”
এর একদিন আগে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জিও নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “সিন্ধু নদে ভারত যদি কোনো অবকাঠামো নির্মাণের চেষ্টা করে, তাহলে পাকিস্তান সেটিকে লক্ষ্য করে হামলা চালাবে।”
খাজা আসিফ আরও বলেন, “নিশ্চিতভাবে যদি তারা কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা করে, আমরা সেটি ধ্বংস করব। আগ্রাসন শুধু কামান বা গুলি চালানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর অনেক রূপ আছে। তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে পানি আটকে দেওয়া বা সরিয়ে দেওয়া- যা ক্ষুধা ও পিপাসায় মৃত্যুর কারণ হতে পারে।"
এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই পাকিস্তান শনিবার আবদালি নামের একটি ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। ৪৫০ কিলোমিটার পাল্লার এই অস্ত্রটি প্রচলিত ও পারমাণবিক উভয় ধরণের অস্ত্র বহনে সক্ষম।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, “অপারেশনাল প্রস্তুতি নিশ্চিত করার জন্য এই পরীক্ষা চালানো হয়।”
ভারতের সরকারি সূত্রগুলোর বরাতে এনডিটিভি জানিয়েছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ভারত সরকারের দৃষ্টিতে একটি গুরুতর উসকানি। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি।
শনিবারই ভারত পাকিস্তান থেকে উৎপাদিত বা সে দেশ হয়ে আগত সব পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করে এবং পাকিস্তানি জাহাজের ভারতের কোনো বন্দরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
একই সঙ্গে ভারতীয় জাহাজগুলোকে পাকিস্তানি বন্দরে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর জবাবে পাকিস্তানও দ্রুত পাল্টা ব্যবস্থা নেয় এবং ভারতীয় জাহাজের ওপর নিজস্ব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
ভারতের শিপিং অধিদপ্তরও একটি নির্দেশ জারি করে, যাতে দুই দেশের মধ্যে সমুদ্রপথে বাণিজ্য সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়। নিষেধাজ্ঞাটি এমনকি তৃতীয় দেশের মাধ্যমে আগত পাকিস্তানি পণ্যের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর ভারত ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে এবং তখন থেকেই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য কার্যত স্থগিত রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে আরও যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ডাক যোগাযোগ স্থগিত (আকাশপথ বা সড়কপথে পাঠানো চিঠিপত্র ও পার্সেলসহ), এবং আটারী-ওয়াঘা স্থল সীমান্ত পথ বন্ধ করে দেওয়া।