Logo
×

Follow Us

দক্ষিণ এশিয়া

ভারতীয় যুদ্ধবিমান আকাশসীমা লঙ্ঘন করেনি: পাকিস্তান সেনাবাহিনী

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫, ১৫:৪২

ভারতীয় যুদ্ধবিমান আকাশসীমা লঙ্ঘন করেনি: পাকিস্তান সেনাবাহিনী

পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের একাধিক যুদ্ধবিমান ধ্বংসের দাবির মধ্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ব্রিফিং করে জানিয়েছেন, তার দেশের আকাশসীমায় প্রতিবেশী দেশটির কোনো যুদ্ধবিমানই প্রবেশ করেনি।

পাকিস্তানের কোনো যুদ্ধবিমানও ভারতীয় আকাশসীমা লঙ্ঘন করেনি, বলেছে দেশটি।

পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর একাধিক ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করার বিষয়ে পাকিস্তানের তরফে নানা দাবি আসার মধ্যেই বুধবার এই ব্রিফিং করেন দেশটির আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ চৌধুরী।

পাকিস্তানের আইএসপিআর প্রধান বলেন, “কোনো সময়েই তাদের (ভারতের) কোনো বিমানকে পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি এবং একইভাবে কোনো সময়েই পাকিস্তানের কোনো বিমান ভারতের আকাশসীমায় প্রবেশ করেনি।”

সাম্প্রতিক কয়েক দিনের মধ্যে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। বিশেষ করে, জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভারতীয় সেনাবহরে প্রাণঘাতী হামলার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে বাকযুদ্ধ এবং সীমান্তে সংঘর্ষ বাড়তে থাকে।

সেই ঘটনার পর সোমবার গভীর রাতে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর এলাকায় ভারতের একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর ছড়ায়। এরপর ইসলামাবাদ থেকে পাল্টা দাবি উঠে—ভারতের একটি রাফায়েল ও একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বর্তমানে দুই পক্ষের দাবি-প্রতিদাবির নানা ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে। কোথাও ধ্বংস হওয়া যুদ্ধবিমান, কোথাও বিস্ফোরণ বা গুলিবর্ষণের দৃশ্য, আবার কোথাও এলওসি সংলগ্ন গ্রামবাসীদের আতঙ্কিত অবস্থার ছবি দেখা যাচ্ছে। তবে এসব ভিডিওর কোনটি সত্য, কোনটি গুজব—তা এখনও স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

সকালে বাংলাদেশে পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ মারুফ একাধিক ফেসবুক স্ট্যাটাসে দাবি করেছেন, তার দেশের বিমান বাহিনী দুটি ভারতীয় মিগ টোয়েন্টিনাইন, একটি সুখোই থার্টি এবং দুটি রাফায়েল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে।

অন্যদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী থেকে জানানো হয়, পাকিস্তানের এমন বক্তব্য ‘ভিত্তিহীন’ এবং তাদের কোনো বিমান ধ্বংস হয়নি।

এই পাল্টাপাল্টি দাবির মধ্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে উত্তেজনা এবং সীমিত পর্যায়ে হামলা-পাল্টা আমলার মধ্যে পাকিস্তান আইএসপিআর মহাপরিচালক ব্রিফিংয়ে বলেন, “ভারতের আগ্রাসনের পূর্ণ জবাব দেওয়া হয়েছে। আমরা সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আছি।”

তিনি জানান, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ছত্রি, জুরা এবং সারলিয়া-১ এলাকায় ভারতীয় সামরিক চৌকিগুলোর ওপর পাল্টা হামলা চালিয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে একটি ইউনিট ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর এবং একটি ব্রিগেড সদর দপ্তর।

ব্রিফিংয়ে এসব হামলার ভিডিও ফুটেজও দেখানো হয়।

ভারতের দাবি, তারা কাশ্মীর উপত্যকায় ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি’ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, যা তারা আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ বলে অভিহিত করছে। আর পাকিস্তান বলছে, ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে আক্রমণ চালাচ্ছে, যার জবাব দেওয়া হবে ‘প্রয়োজন অনুযায়ী’।

দুই দেশের সেনাবাহিনীই এখন সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। সীমান্তে যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত ভাঙার অভিযোগে একে অপরকে দায়ী করছে উভয়পক্ষ।

হামলার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে দুই দেশ কী বলছে

ভারতীয় হামলায় নিজেদের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, সে বিষয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্তারিত কিছু জানায়নি। তবে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুমতাজ জাহরা বালুচ মঙ্গলবার ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ভারতের এই হামলায় আমাদের তিনজন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন।”

পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের প্রশাসনের বরাত দিয়ে ডন পত্রিকাও একই তথ্য দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, রাতের বেলায় ভারতের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ছিন্ন করে তিনটি গ্রামে আঘাত হানে, যার মধ্যে মুজাফফরাবাদের নিকটবর্তী বান্দি গ্রামের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে।

অন্যদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গভীর রাতে হামলা ছিল ‘সম্পূর্ণভাবে প্রতিরক্ষামূলক এবং নিয়ন্ত্রিত’।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনদীপ সিং বলেন, “পেহেলগামে আমাদের সেনাদের ওপর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর আমরা সীমান্তপারের নির্দিষ্ট সন্ত্রাসী ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছি। এটি আন্তর্জাতিক আইন মেনেই আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ।”

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে লিখেছে, “আমাদের কোনো যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়নি। পাকিস্তান ভিত্তিহীন দাবি ছড়িয়ে তথ্য বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করছে।”

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫