
জইশ-ই-মুহাম্মদের (জেইএম) প্রধান মাসুদ আজহার। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের ‘অপরেশন সিঁদুরে’ জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদের (জেইএম) প্রধান মাসুদ আজহারের পরিবারের ১০ সদস্য এবং চার সহকারী নিহত হয়েছেন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেইএম এক বিবৃবিতে জানিয়েছে মাসুদ আজহারের বড় বোন ও তার স্বামী, এক ভাতিজা ও তার স্ত্রী, এক ভাতিজি এবং পরিবারের পাঁচ শিশু নিহত হয়েছে।
একই সঙ্গে জাতিসংঘ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন জেইএমের প্রধান মাসুদের চার সহযোগীর নিহত হওয়ার কথাও ওই বিবৃতিতে বলেছে সংগঠনটি।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়েছিল জইশ-ই-মুহাম্মদ, যেখানে ৪০ জন ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য নিহত হন। সেই হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে যায়।
মাসুদ আজহার ১৯৯৯ সালে ভারত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সশস্ত্র গোষ্ঠী জইশ-ই-মুহাম্মদ প্রতিষ্ঠা করেন।
ভারতীয় একটি বেসামরিক বিমান ছিনতাই করে তালেবানশাসিত আফগানিস্তানে নিয়ে যাওয়ার পর এর ক্রু ও যাত্রীদের জীবনের বিনিময়ে নয়া দিল্লি যে তিনজনকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল মাসুদ আজহার তাদের একজন।
বুধবার প্রথম প্রহরে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের নয়টি স্থানে হামলা চালানোর কথা বলেছে ভারত। পাকিস্তানের তরফে ছয়টি স্থানে হামলা হওয়ার কথা স্বীকার করা হয়েছে।
ইসলামাবাদ বলেছে, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাকিস্তানের অন্তত ২৬ জন নিহত ও ৪৬ জন আহত হয়েছেন। আর ভারতীয় পুলিশ জানিয়েছে, তাদের নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাকিস্তানের গোলায় ১০ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি আহত হয়েছেন ৪৮ জন।
গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন। ভারতের দাবি, তারা যে চারজনকে পেহেলগাম হামলায় সন্দেহ করছে, তাদের মধ্যে দুজন পাকিস্তানের নাগরিক।
ওই হামলার থেকে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কে চরম অবনতি ঘটে। সীমান্ত বন্ধ করার পাশাপাশি পানি চুক্তি, বাণিজ্য স্থগিত করে প্রতিবেশী দেশ দুটি। আকাশসীমা বন্ধ করার পাশাপাশি কূটনৈতিক পর্যায়েও ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাতে এনডিটিভি লিখেছে, অপারেশন সিঁদুর’ নামে চালানো ভারতের অভিযানে মোট ৯টি স্থাপনাকে নিশানা করা হয়। এর মধ্যে পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরে জইশ-ই-মোহাম্মদের এবং মুরিদকেতে লস্কর-ই-তৈয়বার সদর দপ্তর রয়েছে।
ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ‘সন্ত্রাসবাদী কাঠামোতে’ হামলা চালিয়েছে তারা।
“যেখান থেকে ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা ও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেসব স্থাপনাই ছিল এই অভিযানের লক্ষ্য।”
বিবৃতিতে এও বলা হয়, “কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনায় হামলা হয়নি। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও হামলা পরিচালনায় ভারত যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছে।”
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপত্র আইএসপিআর জানিয়েছে, ভারতের ছোড়া ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ছয়টি স্থানে আঘাত হেনেছে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাওজা আসিফ জিও টেলিভিশনকে বলেছেন, ভারত নিজেদের আকাশসীমা থেকে পাকিস্তানের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। হামলাগুলো হয়েছে জনবহুল এলাকায়। ভারত ‘সন্ত্রাসীদের ঘাঁটিতে’ অভিযানের যে দাবি করেছে, তা ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’।