ভারতের বিমান ধ্বংসের প্রমাণ কী? পাকিস্তানি মন্ত্রীর জবাব, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় আছে’

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৫, ১৫:১৫

দুটি রাফালসহ ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করলেও যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম সিএনএনের প্রশ্নে পাকিস্তানের মন্ত্রী সুনির্দিষ্ট জবাব দিতে পারেননি।
সংবাদে সরাসরি যুক্ত হয়ে উপস্থাপিকার প্রশ্নে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, সব কিছু সামাজিক মাধ্যমে আছে।
বুধবার সিএনএন-এ এক সাক্ষাৎকারে প্রমাণ চাওয়া হলে আসিফ বলেন, “সব তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় আছে। সেগুলো আমাদের নয়, বরং ভারতের সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই উঠে এসেছে। ধ্বংসাবশেষও ভারতের দিকেই পড়েছে।”
তবে সাংবাদিক যখন একাধিকবার প্রমাণ চাইলেন, তখন তিনি আর কোনো নির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি।
বুধবার সকালে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর অংশ হিসেবে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের হামলা চালায়। এতে বহু প্রাণহানি ঘটে। ভারত জানিয়েছে, ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গি হামলার প্রতিশোধ হিসেবেই এ অভিযান চালানো হয়েছে।
পাকিস্তান এই হামলার সত্যতা স্বীকার করেছে। তবে তাদের দাবি, ভারতীয় রাফাল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার প্রমাণ রয়েছে।
এই দাবি নিয়ে ভারতের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর (পিআইবি) ফ্যাক্ট-চেকিং ইউনিট জানায়, পাকিস্তানপন্থী কিছু সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট একটি পুরনো বিমান দুর্ঘটনার ছবি ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে।
এর আগে পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আসিফ বলেছিলেন, “আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ চাই না। সংঘর্ষ যদি বড় আকারে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে তা যুদ্ধের রূপ নিতে পারে—যা আমরা এড়াতে চাই।”
তবে একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, “যুদ্ধের জন্য পাকিস্তান পুরোপুরি প্রস্তুত।”
পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর পাকিস্তান পাঁচটি বিমান ধ্বংসের দাবি করেছে। দেশটির সেনাবাহিনী এও বলেছে কোনো ভারতীয় বিমান তাদের দেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেনি।
বুধবার সকালে ব্লুমবার্গ টেলিভিশনকে দেওয়া আরেক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ভারত যদি উত্তেজনা কমায়, আমরাও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রস্তুত। আমরা কখনও আগ্রাসী কিছু শুরু করব না। তবে হামলা হলে পাল্টা জবাব দেব। ভারত এক ধাপ পেছালে, আমরাও নিশ্চয়ই উত্তেজনা কমিয়ে আনব।”
পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ এক বিবৃতিতে বলেছে, “ভারতীয় হামলায় প্রাণহানির প্রতিশোধ নিতে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে যেকোনো সময়, যেকোনো স্থান ও যেকোনো পদ্ধতিতে প্রতিশোধ নেয়ার পূর্ণ অধিকার দেওয়া হয়েছে।”
অন্যদিকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, “সন্ত্রাসী ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়ে আমাদের সেনাবাহিনী সঠিকতা, সতর্কতা আর মানবিকতা বজায় রেখে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।”
সাম্প্রতিক কয়েক দিনের মধ্যে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। বিশেষ করে, জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে প্রাণঘাতী হামলার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে বাকযুদ্ধ এবং সীমান্তে সংঘর্ষ বাড়তে থাকে।
সেই ঘটনার পর মঙ্গলবারবার গভীর রাতে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর এলাকায় ভারতের একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর ছড়ায়। এরপর ইসলামাবাদ থেকে পাল্টা দাবি উঠে—ভারতের একটি রাফালে ও একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বর্তমানে দুই পক্ষের দাবি-প্রতিদাবির নানা ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে। কোথাও ধ্বংস হওয়া যুদ্ধবিমান, কোথাও বিস্ফোরণ বা গুলিবর্ষণের দৃশ্য, আবার কোথাও এলওসি সংলগ্ন গ্রামবাসীদের আতঙ্কিত অবস্থার ছবি দেখা যাচ্ছে। তবে এসব ভিডিওর কোনটি সত্য, কোনটি গুজব—তা এখনও স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
সকালে বাংলাদেশে পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ মারুফ একাধিক ফেসবুক স্ট্যাটাসে দাবি করেছেন, তার দেশের বিমান বাহিনী দুটি ভারতীয় মিগ টোয়েন্টিনাইন, একটি সুখোই থার্টি এবং দুটি রাফায়েল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে।
অন্যদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী থেকে জানানো হয়, পাকিস্তানের এমন বক্তব্য ‘ভিত্তিহীন’ এবং তাদের কোনো বিমান ধ্বংস হয়নি।
অবশ্য পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ চৌধুরী ব্রিফিং করে বলেছেন, তার দেশে ভারতের কোনো যুদ্ধবিমান প্রবেশ করেনি।
তিনি বলেন, “কোনো সময়েই তাদের (ভারতের) কোনো বিমানকে পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি এবং একইভাবে কোনো সময়েই পাকিস্তানের কোনো বিমান ভারতের আকাশসীমায় প্রবেশ করেনি।”