১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে লিবিয়ায় পাঠানোর ‘পরিকল্পনা’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৫, ১৩:৫২

ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত গাজা
গাজা থেকে স্থায়ীভাবে ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে লিবিয়ায় সরিয়ে নেওয়ার ‘একটি গোপন পরিকল্পনা’ নিয়ে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি এনবিসি নিউজকে নিশ্চিত করেছেন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ট্রাম্প প্রশাসনের অন্তত পাঁচজন ব্যক্তি।
শনিবার প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পরিকল্পনাটি এতটাই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে যে, লিবিয়ার শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেও এর আলোচনায় গিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জব্দ থাকা কয়েক বিলিয়ন ডলার লিবিয়াকে ফেরত দেওয়া হতে পারে।
যদিও এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে পরিকল্পনা সম্পর্কে ইসরায়েলকে অবহিত করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এনবিসি নিউজে প্রতিবেদন প্রকাশের পরই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “এই খবরে সত্যতা নেই। বাস্তব পরিস্থিতি এমন কোনো পরিকল্পনার উপযোগীও নয়।”
হামাসের কার্যত মুখপাত্র, জ্যেষ্ঠ নেতা বাসেম নাইমও বলেন, “এমন কোনো পরিকল্পনার বিষয়ে আমাদের কিছুই জানা নেই। ফিলিস্তিনিরা তাদের ভূমির প্রতি অটল। তারা মরতেও প্রস্তুত কিন্তু দেশ ছাড়বে না।”
লিবিয়ায় গত ১৪ বছর ধরে চলছে গৃহযুদ্ধ। পশ্চিমে আবদুল হামিদ দাবেইবা এবং পূর্বে খলিফা হাফতারের নেতৃত্বে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার দেশটিকে পরিচালনা করছে।
বর্তমানে লিবিয়া নিজের জনসংখ্যাকেই সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। এমন অবস্থায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে সেখানে পাঠানো গেলে দেশটির পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়বে।
সিআইএর তথ্য অনুযায়ী, লিবিয়ার বর্তমান জনসংখ্যা ৭৩ লাখ। নতুন করে ১০ লাখ লোক গেলে যুক্তরাষ্ট্রে ৪ কোটি ৬০ লাখ অভিবাসী আসার সমান চাপ তৈরি হবে।
প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে বিমান, স্থল ও নৌপথ সবই বিবেচনায় আনা হয়েছে বলেও সূত্রগুলো জানিয়েছে। তবে গাজায় কোনো বিমানবন্দর না থাকায় প্রথমে মানুষজনকে মিশরের কায়রো বিমানবন্দরে নিতে হবে।
সেখান থেকে প্রায় ১ হাজার ৩০০ মাইল দূরের বেনগাজি পৌঁছাতে বহুবার ফ্লাইট, বাস বা ফেরিতে যেতে হবে।
পরিকল্পনায় থাকা আরেকটি বিষয় হলো- ফিলিস্তিনিদের আর্থিক প্রলোভন দেওয়া। যেমন: ফ্রি বাসস্থান, মাসিক ভাতা ইত্যাদি।
এই পুরো পরিকল্পনা ট্রাম্পের ‘নতুন গাজা’ বা ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ বানানোর স্বপ্নের অংশ।
তিনি ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলেন, “আমরা গাজার জায়গাটা নিয়ে নেব, সেখানে চাকরি তৈরি করব, ঘর বানাব, এবং এটা হবে এমন এক জায়গা যা পুরো মধ্যপ্রাচ্য গর্ব করে দেখাবে।”
তবে ট্রাম্পের এই বক্তব্য তার অনেক নিজস্ব কর্মকর্তাকেও চমকে দিয়েছিল। মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম পর্যন্ত বলেন, “এই পরিকল্পনা বহু দিক থেকে সমস্যাজনক।”
মিশরের ‘গাজা পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন’ প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এর মধ্যেই প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিকল্প হিসেবে সিরিয়াও বিবেচনায় রয়েছে। ট্রাম্প সম্প্রতি নতুন সিরীয় নেতা আহমদ আল-শারার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন।