
ছবি: এনডিটিভি
ভারতের রাজ্যসভায় বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল অনুমোদনের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে আসাম। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্যের গুয়াহাটিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে।
বিক্ষোভ থামাতে আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। টুইট করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। তাতেও নাগরিকত্ব বিল নিয়ে বিক্ষোভ থামছে না আসামে। বরং কারফিউ ভেঙেই এবার গুয়াহাটির রাস্তায় নেমে এলেন সাধারণ মানুষ। নিরাপত্তাবাহিনীর উপস্থিতিতেই জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তারা। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চলছে স্লোগানও।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে গতকাল বুধবারই জ্বলে উঠে আসাম। কোনো সংগঠন ছাড়া সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে। তবে আজ আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু) ও কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি (কেএমএসএস)। সাধারণ মানুষকে ঘর ছেড়ে রাস্তায় নামার আর্জি জানিয়েছে তারা।
আসু আজ একটি বিবৃতিতে বলেছে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে। বেলা ১১টায় গুয়াহাটির লতাশিল ময়দানে জমায়েত রয়েছে। তার জন্য সকলকে ঘর ছেড়ে রাস্তায় নামার আর্জি জানাচ্ছি আমরা।
এমন পরিস্থিতিতে এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো, স্পাইসজেট, ভিস্তারা, গো এয়ারসহ বেশ কিছু সংস্থা আসাম বিমানবন্দর থেকে তাদের একাধিক ফ্লাইট বাতিল করেছে।
এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার উত্তর-পূর্ব শাখার একজিকিউটিভ ডিরেক্টর সঞ্জীব জিন্দল বলেন, ডিব্রুগড়ে নয়টি বিমানের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় কোনো ট্যাক্সিও পাওয়া যাচ্ছে না, যার ফলে গতকাল যারা বিমানবন্দরে পৌঁছেছিলেন, তারা এখনো আটকে আছেন।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল পি খোঙ্গসাই সংবাদসংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, গুয়াহাটি শহরে দুই কলাম সেনা (প্রতি কলামে ৭০ জন সেনা থাকে) মোতায়েন করা হয়েছে এবং তারা এলাকায় টহল দিচ্ছে। তিনসুকিয়া, ডিব্রুগড় ও জোড়হাট জেলাতেও মোতায়েন করা হয়েছে সেনা।
আসামের বৃহত্তম শহর ও বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল গুয়াহাটিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং রাজ্যের ১০ জেলায় মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামেশ্বর তেলির বাসভবনকে লক্ষ্য করে বিক্ষোভকারীরা পাথর ছোঁড়ে, এরপরেই জোরদার করা হয় ডিব্রুগড়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। লক্ষ্মীনগর এলাকায় মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে পাথর ছোঁড়ার পাশাপাশি বিক্ষোভকারীরা দুলিয়াজনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়িতেও ভাঙচুর চালায়।
আসামের বাসিন্দাদের দাবি, আসামের ছাত্ররা ছয় বছর ধরে সহিংস আন্দোলন করার পরে যে আসাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রভাবে সেই চুক্তি বিঘ্নিত হবে।
১৯৫৫ সালের ভারতীয় নাগরিকত্ব আইনে এই সংশোধনের ফলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে চলে আসা হিন্দু, শিখ, খ্রিষ্টান, জৈন, পারসি ও বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন। -আনন্দবাজার পত্রিকা ও এনডিটিভি