নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
ভারতে মুসলিমদের সম্পত্তি জব্দ করে ভাঙচুরের ক্ষতিপূরণ

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:৫৭

উত্তরপ্রদেশের কানপুরে বিক্ষোভকারীদের দিকে ইট-পাথর ছুঁড়ে মারছে পুলিশ। ছবি: বিবিসি
ভারতের উত্তরপ্রদেশ সরকার নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে 'বদলা' নিতে তাদের সম্পত্তি জব্দ করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা করছে, এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
আন্তর্জাতিক এই সংগঠনটি এক বিবৃতিতে বলেছে, উত্তরপ্রদেশ সরকার এই 'বদলা' নেয়ার কথা ঘোষণা করার পরই মুজফফরনগর জেলায় কোনো আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে অন্তত ৭০টি দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এই দোকানের প্রায় সবগুলোরই মালিক মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন। মুজফফরনগর উত্তরপ্রদেশের একটি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা। বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন ও প্রস্তাবিত এনআরসির বিরুদ্ধে গত কয়েকদিনে সেখানে তীব্র বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হয়েছে।
বিজনৌর, সম্ভল, লক্ষ্ণৌ, মুজফফরনগরসহ এই রাজ্যের বহু এলাকা গত কয়েকদিন ধরে এই প্রতিবাদ-আন্দোলনকে ঘিরে উত্তাল। এর ফলে নষ্ট হয়েছে ট্রেন, বাসসহ বহু সরকারি সম্পত্তিও। এযাবৎ সারাদেশে সবচেয়ে বেশি ১৮ জন বিক্ষোভকারীর মৃত্যুও হয়েছে উত্তরপ্রদেশেই।
এরই মধ্যে উত্তরপ্রদেশ সরকার জানিয়েছে, তারা সিসিটিভি ফুটেজ থেকে বিক্ষোভকারীদের চিহ্নিত করে তাদের দোকানপাট ও সম্পত্তি জব্দ করবেন, যাতে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের ক্ষতি সেখান থেকে পুষিয়ে নেয়া যায়।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং যোগী আদিত্যনাথ ঘোষণা করেছেন, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, সরকারি সম্পত্তি যারা ভাঙচুর করেছেন বা আগুন ধরিয়েছেন, হামলাকারীদের সম্পত্তি নিলাম করেই সেই অর্থ উসুল করা হবে। এই উপদ্রবী বা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিশোধ নেব।
আদিত্যনাথের এই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, প্রথমত সরকার কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ না দেখিয়ে সাধারণ মানুষের দোকানপাট সিল করে দিতে পারে না। সরকার তাদের মর্জিমাফিক এরকম কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে পারে না। একমাত্র আদালত বললে তখনই হয়তো এধরনের শাস্তি দেয়া যায়। আর দ্বিতীয়ত, একজন মুখ্যমন্ত্রী কীভাবে বদলা নেয়ার কথা বলতে পারেন?
তিনি বলেন, রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে তার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব। তিনি আইনের কথা বলবেন, তার মুখে প্রতিশোধ নেয়ার কথা কোনো মতেই শোভনীয় নয়।
এদিকে মানবাধিকার কর্মীরা যতই প্রতিবাদ করুন, উত্তরপ্রদেশ সরকার কিন্তু যেমন কথা, তেমন কাজ এর মধ্যেই শুরু করে দিয়েছে। মুজফফরনগরে জনৈক নাসিম আহমেদের পুত্র ইনাম ইলাহীর দোকান 'ওপি এন্টারপ্রাইজ' ক্রোক করে পুলিশ এর মধ্যেই সেখানে নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করার অপরাধে ইনাম ইলাহীর সাত লাখ রুপিরও বেশি জরিমানা করা হয়েছে, যে অর্থ আদায় করা হবে তার দোকান ও সম্পত্তি নিলামে তুলে।
সেই সরকারি নোটিশের প্রতিলিপি সোশ্যাল মিডিয়াতেও ভাইরাল হয়ে উঠেছে, যা শেয়ার করে অনেকেই লিখেছেন, যোগী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়, অর্থাৎ যোগী আদিত্যনাথ ক্ষমতায় থাকলে সবই সম্ভব! -বিবিসি