Logo
×

Follow Us

দক্ষিণ এশিয়া

ভারতে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না : সুপ্রিম কোর্ট

Icon

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১২ মে ২০২২, ০৮:৪৪

ভারতে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না : সুপ্রিম কোর্ট

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ছবি : ডয়চে ভেলে

ভারতে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে এখন কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। দেশটির সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছেন, সরকার এই আইনের পর্যালোচনা শেষ না করা পর্যন্ত এই নির্দেশ বহাল থাকবে।

ভারতে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন প্রথম চালু হয় ব্রিটিশ আমলে ১৮৭০ সালে। তারপর থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার ৭৫ বছর পরেও ওই প্রবল বিতর্কিত আইন চালু আছে। 

দেশটির সুপ্রিম কোর্ট গতকাল বুধবার (১১ মে) জানিয়েছেন, সরকার এই আইন খতিয়ে দেখবে। যতদিন পর্যন্ত তারা আইনের পর্যালোচনা করবে, ততদিন নতুন করে কাউকে এই আইন প্রয়োগ করে গ্রেপ্তার করা যাবে না। যাদের ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা জামিনের আবেদন করতে পারবেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও এখন স্থগিত থাকবে। নতুন করে এই আইনে কাউকে গ্রেপ্তার করলে তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারবেন।

সুপ্রিম কোর্টে আবেদনকারীদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন আইনজীবী কপিল সিবাল। তিনি শুনানির সময় বলেছেন, সারা দেশে ৮০০টি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়েছে। তার জেরে ১৩ হাজার মানুষকে জেলে আছেন।

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য উদ্ধৃত করে ইকোনোমিক টাইমসের রিপোর্ট জানাচ্ছে, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলার সংখ্যা ১৬০ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৯ সালে ৯৬ জনকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তার মধ্যে মাত্র দুইজনের শাস্তি হয়েছে। গ্রেপ্তার করা ৯৬ জনের মধ্যে ৫৫ জনের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। ওই বছর কর্ণাটকে সবচেয়ে বেশি মানুষকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। তালিকায় এর পরেই আছে আসাম, জম্মু ও কাশ্মীর এবং উত্তরপ্রদেশ।

ব্রিটিশ ভারতে ১৮৬২ সালে দণ্ডবিধি চালু হয়। তখন সেখানে রাষ্ট্রদ্রোহ নিয়ে কোনো সেকশন ছিল না। ১৮৭০ সালে ধারাটি যুক্ত হয়। বালগঙ্গাধর তিলককে প্রথম এই ধারা অনুসারে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মাহাত্মা গান্ধীকেও ইয়ং ইন্ডিয়ার লেখার জন্য রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

এই আইনে বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় এবং তাকে জেলে পাঠানো যায়। ১৯৬২ সালে কেদারনাথ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট এই আইনকে সাংবিধানিক ঘোষণা করেও জানায়, সরকারের সমালোচনা করা হলে, তাকে কোনোভাবেই দেশদ্রোহ বলা যাবে না। সুপ্রিম কোর্ট গতবছর প্রশ্ন তোলেন, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও কি এই আইনের প্রয়োজন আছে? তারা জানায়, সরকার পুরনো প্রচুর আইন বাতিল করেছে। তাহলে এই আইনের পর্যালোচনা কেন করা হবে না?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার ও মামলার সংখ্যা ভয়ংকরভাবে বেড়ে গেছে বলে কংগ্রেসসহ বিরোধীদের অভিযোগ।

মোদি সরকার প্রথমে সুপ্রিম কোর্টে জানায়, সরকার যতক্ষণ এই আইন খতিয়ে না দেখছে, ততক্ষণ সুপ্রিম কোর্ট যেন পর্যালোচনা না করে। পরে সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা সর্বোচ্চ আদালতকে জানান, কেন্দ্রীয় সরকার এই আইনে কিছু বদল করতে চায়। বদলটা হলো, পুলিশ সুপার বা তার সমান পদমর্যাদার কোনো অফিসার যদি মনে করেন, রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা যায়, তাহলেই তা করা যাবে। আর ওই অফিসারকে লিখিতভাবে জানাতে হবে, কেন রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের আবেদন ছিল, রাষ্ট্রদ্রোহের যে মামলা চলছে, সেগুলোকে থামিয়ে দেয়া উচিত হবে না। কারণ, এর সাথে সন্ত্রাসবাদ, অর্থ নয়ছয় ও অর্থ বিদেশে পাঠানোর ঘটনা জড়িত থাকতে পারে। এগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতই সিদ্ধান্ত নিক। বিচারবিভাগকে ভরসা করা উচিত।

কিন্তু সরকারের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। তিন বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছেন, যতদিন সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবে, আইন পর্যালোচনা করবে, ততদিন এই আইন প্রয়োগ করে কোনো নতুন করে মামলা হবে না। 

বিচারপতিরা জানিয়েছেন, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উপর তাদের ভরসা আছে যে, তারা নতুন করে এই আইন প্রয়োগ করবেন না। যদি কারো বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের কারণে এফআইআর হয়, তিনি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাতে পারবেন। আর এখন দেশদ্রোহের অভিযোগে করা সব মামলার বিচার বন্ধ থাকবে। সুপ্রিম কোর্ট যতদিন কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়, ততদি্ন পর্যন্ত মামলাগুলো নিয়ে আর এগোনো যাবে না। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা জামিনের আবেদন জানাতে পারবেন। -ডয়চে ভেলে

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫