
উত্তর প্রদেশ রাজ্য থেকে পুরষ্কার নিচ্ছেন প্রেম কৃষ্ণবংশী। ছবি: আল জাজিরা
প্রেম কৃষ্ণবংশী ভারতীয় একজন গায়ক। দেশের উত্তর প্রদেশের রাজধানী লক্ষ্ণৌর বাসিন্দা তিনি। এরই মধ্যে তিনি রাজ্য সরকারের কাছ থেকে পুরস্কার পেয়েছেন। তার গানের প্রশংসা করেছেন স্বয়ং রাজ্য মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
‘ইনসান নেহি হো সালো, হো-তুম কাসাই, বহুত হো-চুকা হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই’ হিন্দি ধর্মীয় ভক্তিমূলক গানের বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘মানুষ নয় তুমি, তুমি একজন কসাই, অনেক হয়েছে হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই’। এই ভজনটি গেয়ে ইউটিউবে জনপ্রিয়তা পান প্রেম কৃষ্ণবংশী।
মুসলিম বিদ্বেষমূলক গান গাওয়া এই প্রেম কৃষ্ণবংশী একজন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্র্যাজুয়েট। বলিউডে গান গাইতে হলে অনেক প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হবে তাই তিনি মুসলিম বিদ্বেষমূলক ভজন গান গেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করছেন।
ধর্মীয় ভক্তিমূলক গানগুলোকে সাধারণত বলা হয় ভজন। এটি হিন্দুয়ানি ঘরানার গানেরই একটি ধারা। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ভজনে মুসলিম বিদ্বেষ প্রচার করা হচ্ছে। বিশেষত ভারতে বিদ্বেষমূলক রাজনীতির মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় এমনটি ঘটছে।
এ ধরনের বিদ্বেষমূলক অনেক ভিডিও এখন ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে দেখা যায়। ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদীরাই এসব ভিডিওগুলো বেশি শেয়ার করে থাকে।
অনেক ভিডিওতে রীতিমতো সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর গণহত্যার আহ্বান জানানো হয়। গানগুলোতে বলা হয়, ধর্মের নামে তারা ভারতকে মুসলিম রাষ্ট্র বানাচ্ছে। এসব গানগুলোতে ভারতের মোগল সম্রাটদের হানাদার হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।
২০১৪ সালে যখন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) আসে, তখন থেকেই ভারতের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ তৈরি হয়। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে সংখ্যালঘু, বিশেষত মুসলিমদের লক্ষ্য করে বিদ্বেষমূলক হামলার ঘটনা বেড়েছে।

কৃষ্ণবংশী অনেক গানেই ভারতীয় মুসলমানদের দেশবিরোধী হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং মুসলিমদের পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি তার গানে বলেছেন, মুসলিমরা শেষ পর্যন্ত হিন্দুদের নামাজ পড়তে বাধ্য করবে। যদি তারা (হিন্দুরা) জেগে না ওঠে।
তবে কৃষ্ণবংশী বলছেন, তার গান আর যাই হোক ঘৃণাসূচক নয়। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, আমি মনে করি না আমার গান ইসলামবিদ্বেষী। আমার গান সত্যকে দেখিয়ে দেয়, যদি কেউ মনে করে আমার গান ইসলামবিদ্বেষী, আমি তাদের এমন ভাবনা থেকে বিরত রাখতে পারি না।
তার গানের জন্য এরই মধ্যে তিনি রাজ্য সরকারের কাছ থেকে পুরস্কার পেয়েছেন। তার গানের প্রশংসা করেছেন স্বয়ং রাজ্য মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
একসময় ভজন গানে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির কথা বলা হতো। তবে কিছু কিছু বিদ্বেষমূলক গান আগে রাজনৈতিক দলগুলো ব্যবহার করলেও আশঙ্কার বিষয় এই যে, বর্তমানে এগুলো এখন গণসংস্কৃতির অংশ হয়ে যাচ্ছে, যা ভারতে ধর্মীয় সহনশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। -সূত্র: আল জাজিরা