
শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট। ছবি: এএফপি
শ্রীলঙ্কায় আজ বুধবার (২০ জুলাই) পার্লামেন্টে নতুন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দেশটিকে বর্তমানে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কট চলছে। অনেক মানুষই প্রয়োজনীয় খাদ্য কেনার সামর্থ্য হারিয়েছেন। সংকটের মুখে গণআন্দোলনের সম্মুখীন হতে হয়েছে সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে। ওই গণআন্দোলনে জনসাধারণ তার পদত্যাগ চায় এবং সেটি বাস্তবের মুখও দেখেছে। এ কারণেই আজ শ্রীলঙ্কা নতুন প্রেসিডেন্ট পেতে যাচ্ছে।
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে থাকা রনিল বিক্রমসিংহেসহ তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গতকাল মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) শ্রীলঙ্কার সংবাদ মাধ্যম ডেইলি মিরর এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করা অন্য দুই প্রার্থী হলেন- অনুরা কুমারা দিসানায়কা এবং দুল্লাস আল্লাপ্পেরুমা।
শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যম সিলন টুডে জানিয়েছে, ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ও ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) রনিল বিক্রমাসিংহকে মনোনীত করেছেন পার্লামেন্ট নেতা ক্ষমতাসীন দল শ্রীলঙ্কা পোদুজানা পেরামুনার (এসএলপিপি) দিনেশ গুণাবর্ধনা ও আরেক এমপি মানুষা নানায়াক্কারা আর ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ারের (এনপিপি) নেতা অনুরা কুমারা দেশনায়েকেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছেন এমপি ভিজিথা হেরাথ ও আরেক এমপি ড. হরিণী আমারাসুরিয়া।
এদিকে ক্ষমতাসীন দল এসএলপিপির এমপি দুল্লাস আলাহাপেরুমাকে মনোনীত করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা ও আরেক এমপি প্রফেসর জিএল পেইরিস।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সকালে প্রেসিডেন্ট পদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান সামাগি জানা বালাভিগায়ার (এসজেবি) নেতা ও পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় নেতা প্রেমাদাসা। ‘দেশ ও জনগণের বৃহত্তর কল্যাণার্থে’ তিনি ও তার দল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য পার্লামেন্টের ভোটাভুটিতে আলাহাপেরুমাকে সমর্থন দেবেন বলে এক টুইটে জানিয়েছেন তিনি।
এসজেবি ও পার্লামেন্টের অন্যান্য বিরোধীদলীয় অংশীদাররা এখন আলাহাপেরুমাকে সমর্থন দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নতুন প্রেসিডেন্টে নির্বাচনের জন্য মঙ্গলবার মনোনয়ন গ্রহণ করা হচ্ছে এবং বুধবার ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট পাবে শ্রীলঙ্কা।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদের জন্য রনিল বিক্রমাসিংহে, অনুরা কুমারা দেশনায়েকে ও দুল্লাস আলাহাপেরুমা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে এ তিনজনের মধ্যে একজনই হবেন তীব্র অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়া দ্বীপদেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।
চলছে খাদ্যসংকট
অপরদিকে দেশটিতে চলছে প্রচুর খাদ্যসঙ্কট, যা আছে তার দামও অনকে চড়া। এক টুকরো রুটি কেনার সামর্থ্যও হারিয়েছেন অনেকে। দেশটিতে এখন দ্রব্যমূল্যের আকাশছোঁয়া দাম। বিবিসির তথ্যানুযায়ী, মাত্র এক কেজি আলুর দাম ৪৩০ শ্রীলঙ্কান রুপি। ডালের কেজি ৬২০ রুপি, চিনির কেজি ৩৪০ রুপি ও চালের দাম কেজিতে ২২০ রুপি। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্যভাবে দাম বেড়েছে মাছ, মরিচ, নারকেল তেল ও চায়ের। শ্রীলঙ্কার সরকারি তথ্যমতে, এ বছর জুনে শ্রীলঙ্কায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮০ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছেছে।
দেশটিতে এক কেজি লাউয়ের জন্য স্লেভ দ্বীপের বাসিন্দাদের এখন ১ হাজার রুপি গুনতে হচ্ছে। সেখানকার একজন সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ ফয়সাল জানান, তিন মাসে আগের চেয়ে পণ্যের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। ক্রেতারা এখন খুবই অল্প পরিমাণে পণ্য কিনছেন। আগে যেখানে তারা কিলোগ্রামে কিনতেন, এখন তারা গ্রামে কিনছেন। তাদেরকে ১০০ গ্রাম, ৫০ গ্রাম করেও খাদ্যদ্রব্য কিনতে হচ্ছে। শ্রীলঙ্কার খাদ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার পেছনে মূলত জ্বালানি সঙ্কট ও এর ফলে যথাযথ পরিবহন ব্যবস্থার সঙ্কটই দায়ী।
এ অবস্থায় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) তথ্য অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যার ২২ শতাংশ অর্থাৎ ৫০ লাখ ৫০ হাজার মানুষের খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। সর্বশেষ মূল্যায়নের ভিত্তিতে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কার প্রতি ছয়টি পরিবারের পাঁচটি খাদ্য সঙ্কটে রয়েছে। দেশটিতে যতটা না খাদ্য ঘাটতি রয়েছে, তার চেয়ে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা।
শ্রীলঙ্কার নিউ ম্যানিংয়ের বৃহৎ সবজি বাজারে মাইলের পর মাইল হেঁটে অনেক মানুষ বাজার করতে আসছেন। কারণ, তাদের পার্শ্ববর্তী বাজারের চেয়ে এ বাজারটিতে দাম একটু কম। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নষ্ট হওয়ায় বাজারটি থেকে অনেক অবিক্রীত ও নষ্ট সবজি ফেলে দেওয়া হচ্ছে। বাজার বন্ধের পর সেখানে দরিদ্র মানুষের সবজি কুড়াতে দেখা গেছে।
দেশটির নজিরবিহীন এই সঙ্কট এমনি এমনি তৈরি হয়নি। এ জন্য দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের ‘অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাকে’ দায়ী করা হয়েছে। কোভিড-১৯ সেই পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে। চার মাস ধরে শ্রীলঙ্কা যে দুর্ভোগে পড়েছে তা থেকে উত্তরণ সহসাই মিলছে না।