
ইমরান খান গতকাল রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ছবি : দ্য ডন
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় তিনি মেনে নিয়েছেন, তবে তাকে উৎখাত করে কোনো ‘আমদানি করা’ সরকার বসানোর চেষ্টা তিনি মেনে নেবেন না। যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে তাহলে তিনি জনগণের শরণাপন্ন হবেন।
গতকাল শুক্রবার (৮ এপ্রিল) জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
অনাস্থা ভোট খারিজ ও জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গত বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করলে দেশটির অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি নতুন মোড় নেয়। ওই রায়ে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, আজ শনিবার (৯ এপ্রিল) স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসাতে হবে। আস্থা ভোটের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি করা যাবে না। পার্লামেন্টের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে অধিবেশন ডাকার আনুষ্ঠানিকতা সারা হয়েছে।
ভাষণের শুরুতেই ইমরান বলেন, রায়ে আমি দুঃখ পেয়েছি, কিন্তু তা মেনে নিয়েছি। আমরা এমন কোনো জাতি নই, যাকে টিস্যু পেপারের মতো ব্যবহার করা যেতে পারে। পাকিস্তান কোনো দেশের সাথে একতরফা সম্পর্ক চায় না।
পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়ে নিজের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমি কখনোই ‘আমদানি করা সরকার’ মেনে নেব না এবং আমি জনগণের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছি। তারা (বিরোধী দল) তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতির মামলা থেকে মুক্তি পেতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, তারা (বিরোধী দল) যদি এতটাই আত্মবিশ্বাসী হয়, তাহলে কেন নির্বাচন করতে ভয় পাচ্ছে?
ইমরান খান শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের জন্য আগামীকাল রবিবার (১০ এপ্রিল) দেশের জনগণকে ঘর ছেড়ে রাস্তায় আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সবার উচিত ‘বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত নাটকের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ঘর থেকে বের হওয়া। আমি সবার সাথে থাকব। কারণ আমি কখনোই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই বিদেশি ষড়যন্ত্র মেনে নেব না।
গ্রেপ্তার হওয়া সময়ের কথা স্মরণ করে ইমরান বলেন, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন বিচার বিভাগ দেশের ন্যায়বিচারের অভিভাবক। তিনি দেশের বিচার বিভাগকে সম্মান করলেও তিনি অভিযোগ করেছেন, সুপ্রিম কোর্টের অন্তত ‘বিদেশি ষড়যন্ত্র’ নিয়ে তদন্ত শুরু করা উচিত ছিল।
তিনি বলেন, আমি সুপ্রিম কোর্ট ও বিচার বিভাগকে সম্মান করি। কিন্তু, রায় দেওয়ার আগে শীর্ষ আদালতের উচিত ছিল হুমকির চিঠির দিকে নজর দেওয়া। ‘হুমকির চিঠি’ বিষয়টিকে যতটা গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত ছিল শীর্ষ আদালত ততটা গুরুত্ব সহকারে নেয়নি।
তিনি আরো বলেন, পাকিস্তানের তরুণরাই আমাদের ভবিষ্যৎ এবং তারা যদি নেতাদের বিবেক বিক্রি করতে দেখে, তাহলে আমরা তাদের জন্য কী দৃষ্টান্ত স্থাপন করছি? আমাদের অবশ্যই ভুলের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। অন্যথায়, দেশে প্রচলিত দুর্নীতি ও অন্যান্য অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হলে কেউ তাদের রক্ষা করতে পারবে না।
গত ৩ এপ্রিল ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পরামর্শে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি। পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে প্রধান বিচারপতি বিষয়টিকে সুয়ো মোটো হিসেবে গ্রহণ করেন।
পাকিস্তানের ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে বলেছিলেন, এটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিরোধী জোট সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। -জিও নিউজ, ডেইলি স্টার