ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি একটি সভরেন ওয়েলথ ফান্ড তথা সার্বভৌম সম্পদ তহবিল (এসডব্লিউএফ) থেকে ৩০০ কোটি ডলার ঋণ পাচ্ছেন। এই ঋণের সীমা বেড়ে ৫০০ কোটি ডলার পর্যন্ত হতে পারে। সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে অনুষ্ঠিত তিন দিনের রোড শোতে অংশ নেওয়া বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণ করা একটি মেমোতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গতকাল বুধবার এই রোড শো শেষ হয়েছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরে গয়রহ পতন রোধ ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানো এবং ঋণদাতাদের উদ্বেগ কমানোর জন্য আদানি গ্রুপ সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে রোড শোর আয়োজন করেছে। একই কারণে তারা সভরেন ওয়েলথ ফান্ড বা সার্বভৌম সম্পদ তহবিল থেকে ঋণ নিচ্ছে। তবে কোন সার্বভৌম সম্পদ তহবিল থেকে ঋণ নিচ্ছেন, সেটির পরিচয় মেমোতে উল্লেখ করা হয়নি। দুটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স আদানির ঋণ নেওয়ার তথ্য জানিয়েছে। সূত্র দুটি এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নন বলে নিজেদের নাম প্রকাশ করেননি। মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের পক্ষ থেকে আদানির এক মুখপাত্রকে অনুরোধ করা হলে তিনিও তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি।
আদানি গ্রুপ শেয়ারের বিপরীতে নেওয়া ৬৯–৭৯ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ মার্চ মাসের শেষে পরিশোধ করবে, বন্ডধারীদের এমন কথা বলার এক দিন পরই নতুন তহবিল তথা ঋণ সংগ্রহের তথ্য জানিয়েছে। সার্বভৌম সম্পদ তহবিল হচ্ছে রাষ্ট্রের মালিকানাধীন কিংবা রাষ্ট্রের গ্যারান্টিযুক্ত বিনিয়োগ তহবিল। এই তহবিলের অর্থ শেয়ারবাজার, বন্ড, আবাসন, দামী ধাতুসহ প্রাইভেট ইকুইটি ফান্ড ও হেজ ফান্ডের মতো বিকল্প খাতগুলোয় বিনিয়োগ করা হয়। রাষ্ট্রের অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকেও সার্বভৌম সম্পদ তহবিলে অর্থের জোগান দেওয়া হয়।
হিনডেনবার্গ রিসার্চ গত ২৪ জানুয়ারি একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর আদানী গোষ্ঠীর সাতটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের দামে ধস নামে। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর রিপোর্ট থেকে এখন পর্যন্ত আদানির এসব কোম্পানির বাজার মূল্য কমেছে ১৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।
হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে এক দশক ধরে শেয়ারবাজারে আদানি গোষ্ঠীর কারসাজি, ঝুঁকিপূর্ণ ঋণগ্রহণ এবং মরিশাসসহ করস্বর্গ খ্যাত দেশগুলোয় ভুয়া কোম্পানি খুলে বেআইনিভাবে শেয়ার লেনদেনের কথা তুলে ধরা হয়। হিনডেনবার্গ জানায়, এভাবেই গৌতম আদানির সম্পদের মূল্য ফুলে–ফেঁপে ওঠে। তাঁর ভাই বিনোদ আদানির মাধ্যমে এসব কারসাজি হয়েছে। এমনকি আম্বুজা সিমেন্ট ও অ্যাসোসিয়েটেড সিমেন্ট কোম্পানি (এসিসি) কেনার পর খোলা বাজার থেকে শেয়ার কিনতেও ভুয়া কোম্পানিগুলোর পুঁজি ব্যবহার করেছেন তাঁরা। হিনডেনবার্গের দাবি, আদানি সাম্রাজ্য মূলত ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের (গত সেপ্টেম্বরে ২ দশমিক ২৬ লাখ কোটি রুপি) ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
এদিকে টানা কয়েক দিন গৌতম আদানির সম্পদমূল্য কমার পর আজ বুধবার তা খানিক ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তাঁর সম্পদের মূল্য বেড়েছে ১৭০ কোটি ডলার। ফলে তিনি বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনের বিশ্বের অতিধনীদের তালিকায় ৩৪তম স্থানে উঠে এসেছেন। এখন তাঁর সম্পদমূল্য ৩৫ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৫১০ কোটি ডলার। গত মঙ্গলবার তিনি ৪০তম স্থানে নেমে গিয়েছিলেন।
হিনডেনবার্গের প্রতিবেদন প্রকাশের আগে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে ছিলেন আদানি। ওই প্রতিবেদনের পর গত এক মাসে তাঁর সম্পদমূল্য কমেছে প্রায় ৮ হাজার ৩৯০ কোটি ডলার।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh