মোদি সরকার অবৈধ অভিবাসী নিয়ন্ত্রণে বিল আনছে কেন

ভারতে বিতর্কিত ওয়াক্‌ফ বিল সংসদের বাজেট অধিবেশনেই পেশ হতে চলেছে। এর মাধ্যমে মসজিদ, মাজারসহ মুসলমানদের বিভিন্ন ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারের হস্তক্ষেপ নিশ্চিত হবে। 

এরই সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি সরকার আনতে চলেছে ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ফরেনার্স’ বিল। বিদেশ থেকে দেশটিতে অবৈধভাবে আসা নাগরিকদের স্রোত নতুনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা করতে এটি করা হচ্ছে।

তবে বিরোধীদের শঙ্কা, ভারতে বসবাসকারী অবৈধভাবে আসা মুসলমানদের চিহ্নিত করা ও বৈধভাবে আসতে চাওয়া মানুষজনকে ঠেকাতে এ উদ্যোগ। মূল উদ্দেশ্য ধর্মীয় মেরুকরণ। ধারণা করা হচ্ছে, এই আইন প্রণয়ন হলে ব্রিটিশ আমলে আনা ‘ফরেনার্স অ্যাক্ট (১৯৪৬)’, ‘পাসপোর্ট এন্ট্রি ইন্টু ইন্ডিয়া অ্যাক্ট ১৯২০’ ও ‘রেগুলেশন অব ফরেনার্স অ্যাক্ট ১৯৩৯’ বাতিল করা হবে। নতুন আইনের আওতায় ওই পুরোনো আইনগুলোর অন্তর্ভুক্তি ঘটানো হবে।

আজ শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) ভারতের সংসদে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছে। অধিবেশনে মোট ১৬টি বিল পেশ করা হবে। ওয়াক্‌ফ বিল ও ব্যাংক আইন সংশোধন বিল যে সরকার এই অধিবেশনেই পাস করাতে চায়, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সবার নজর এখন ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ফরেনার্স বিল’ নিয়ে, যা প্রস্তাবিত ১৬টি বিলের তালিকায় রাখা হয়েছে।

এই বিলের বিষয়ে সরকার এখন পর্যন্ত জনসমক্ষে কিছুই জানায়নি। বিলটি এখনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচিত হয়নি। বিলের চরিত্র ও উদ্দেশ্য নিয়ে সরকারিভাবে বিস্তারিত কিছু জানানোও হয়নি। যদিও বিভিন্ন সরকারি সূত্রে বিরোধী নেতারা জেনেছেন, প্রধানত বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে আসা মানুষজন, বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের ধরপাকড়ের জন্য প্রচলিত যে আইন রয়েছে, তা আরও জোরদার ও কঠোর করাই এই বিলের উদ্দেশ্য। মূল লক্ষ্য, ধর্মীয় মেরুকরণ আরও তীব্র করা।

চলতি বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে বিহার বিধানসভার ভোট। পরের বছর, ২০২৬ সালের মার্চ-এপ্রিলে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধানসভার ভোট। বিরোধীদের ধারণা, তার আগেই সরকার ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ফরেনার্স বিল’ পাস করাতে চাইবে, যাতে ধর্মীয় মেরুকরণ আরও তীব্র হতে পারে।

ওয়াক্‌ফ বিলটি সরকার আরও আলোচনার জন্য পাঠিয়েছিল সংসদের যুগ্ম কমিটির কাছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন সেই কমিটি বিরোধীদের আনা একটি সংশোধনীও গ্রহণ করেনি। সরকারপক্ষের কিছু সংশোধনীসহ এবং বিরোধীদের অনুমোদন ছাড়া সংসদীয় কমিটি তার চূড়ান্ত প্রতিবেদন লোকসভার স্পিকারের কাছে জমা দিয়েছে। এই বিল আইনে পরিণত হলে মুসলমানদের ধর্মীয় বিষয়ে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারবে।

আজ শুক্রবার সংসদের যৌথ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর প্রথাগত ভাষণের মধ্য দিয়ে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশন শুরুর আগে বিরোধীদের নাম না করেও তাদের প্রতি কটাক্ষ হেনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, গত ১০ বছরে এই প্রথম সংসদের অধিবেশনের আগে কোনো বিদেশি শক্তি আগুনের স্ফুলিঙ্গ জ্বালাতে পারল না। ২০১৪ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি অধিবেশন শুরুর আগে কোনো না কোনো বিষয়ে বিদেশ থেকে ইন্ধন জোগানো হয়েছে। তা নিয়ে সংসদ কিছুদিন অচল থেকেছে। এই প্রথম তা দেখা গেল না।

ইন্ধন বা ফুলকি সম্পর্কে মোদি বিস্তারিত কিছু বলেননি। তবে রাফাল, পেগাসাস, হিনডেনবার্গ, আদানি, সেবি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ অধিবেশন শুরুর আগেই উঠেছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh