Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

সৌদি ক্লাবে রোনালদো, এশীয় ফুটবলের জন্য সুখবর

Icon

আহসান হাবীব সুমন

প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১৫:৫০

সৌদি ক্লাবে রোনালদো, এশীয় ফুটবলের জন্য সুখবর

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবের আল নাসের ক্লাবের হোম ভেন্যু মরসুল পার্ক স্টেডিয়ামে ৩ ডিসেম্বর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে বরণ করে নিতে হাজির হয়েছিলেন ২৫ হাজারের বেশি দর্শক। পর্তুগিজ মহাতারকা টানেল দিয়ে মাঠে প্রবেশের আগেই ‘রোনালদো, রোনালদো’ ধ্বনিতে কেঁপে উঠছিল স্টেডিয়ামের চারপাশ। সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের একজন তাদের ক্লাবে খেলতে এসেছেন, এটি বিশ্বাস করতেও যেন কষ্ট হচ্ছিল অনেকের।

শুধু সৌদি কেন, সারা বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবল ভক্ত শুরুতে বিশ্বাস করতে চায়নি রোনালদো আল নাসের ক্লাবে যোগ দিচ্ছেন। কিন্তু সেই অসম্ভব কাজকেই সৌদি ক্লাব সম্ভব করে দেখিয়েছে। বছরে ২০০ মিলিয়ন ইউরো পারিশ্রমিকে রোনালদোকে চুক্তিবদ্ধ করেছে আল নাসের। ২০০২-০৩ মৌসুমে নিজ দেশের স্পোর্টিং সিপির জার্সিতে পেশাদার অভিষেকের পর রোনালদো খেলেছেন ইংল্যান্ড, স্পেন আর ইতালিতে। দুই দশক ইউরোপের ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাজত্ব করা রোনালদোর নতুন অভিযাত্রা শুরু হচ্ছে এশিয়ার মাটিতে।

ফুটবলে রোনালদোর অবদান নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। ক্লাব ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি ৮১৯ গোলের মালিক তিনি। জিতেছেন ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাঁচটি ব্যালন ডি’অর এবং দুটি ফিফা বর্ষসেরা খেতাব। চারটি ইউরোপিয়ান গোল্ডেন স্যু আর পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফির মালিক তিনি।

ইউরোপের বনেদি আসর চ্যাম্পিয়নস লিগের সর্বকালের সেরা গোলদাতাও তিনি। ক্লাব পর্যায়ে ৩০টি ট্রফি আছে তার। তিনিই ইতিহাসের একমাত্র ফুটবলার, যিনি ইউরোপের সেরা তিনটি লিগে জিতেছেন বর্ষসেরা ফুটবলারের সম্মান। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজ দেশ পর্তুগালকে প্রথমবারের মতো এনে দিয়েছেন ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ আর উয়েফা নেশন্স লিগের শিরোপা।

রোনালদোর ক্যারিয়ারে অপ্রাপ্তি বলতে একমাত্র ‘বিশ্বকাপ’। কাতার বিশ্বকাপে পর্তুগাল বিদায় নেয় কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। কিন্তু গড়েছেন টানা পাঁচ বিশ্বকাপে গোলের রেকর্ড। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি ৩৮ বছরে পা দিতে চলা রোনালদো নিঃসন্দেহে ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে দাঁড়িয়েছেন। হয়তো ক্যারিয়ার শেষ করবেন সৌদি আরবে খেলেই। এই বয়সে আকাশছোঁয়া পারিশ্রমিকে রোনালদো এখন বিশ্বের সবচেয়ে দামি ক্রীড়াবিদ। আল নাসের ক্লাবের সঙ্গে তার চুক্তি হয়েছে ২০২৫ সাল অবধি।

প্রশ্ন হচ্ছে, হঠাৎ কেন আল নাসের ক্লাব রোনালদোর মতো মহাতারকার দিকে হাত বাড়িয়েছে? এটা আসলে শুধু আল নাসের না, সৌদি আরবের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। তারা অনুসরণ করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র আর জাপানের ফর্মুলা। মার্কিন মেজর লিগ সকারে ‘ফুটবলের রাজা’ পেলে থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ে খেলেছেন ওয়েন রুনি আর ইব্রাহিমোভিচের মতো তারকা। ইংল্যান্ডের সুপারস্টার ডেভিড বেকহ্যাম তো কিনেই নিয়েছেন ইন্টার মায়ামি নামের ক্লাব।

এশিয়ার দেশ জাপানের ‘জে’ লিগে নব্বই দশকের শুরু থেকে খেলেছেন জিকো, দুঙ্গা আর মাইকেল লাউড্রপরা। পরবর্তীকালে হাল্ক, লুকাস পোডোলস্কি, প্যাট্রিক এমবোমারা খেলেছেন জাপানের লিগে। যারা ফুটবলের প্রতি অনুপ্রাণিত করেছে সংশ্লিষ্ট দেশের পরবর্তী প্রজন্মকে। ফলাফল, জাপান আর যুক্তরাষ্ট্র এখন ফুটবলের সমীহ জাগানিয়া শক্তি। তাদের ফুটবলের শিকড় বিস্তৃত হচ্ছে ক্রমশ। 

সৌদি আরবের লক্ষ্য এখন যুক্তরাষ্ট্র আর জাপানের মতোই। তারা চায় বিশ্বকাপে নিয়মিত অংশগ্রহণ। এমনকি ২০৩৪ সালে নিজ দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ আয়োজনে নাম লেখাতে চায় তারা। আল নাসেরের সঙ্গে রোনালদোর চুক্তি শুধু মাঠের খেলায় সীমাবদ্ধ থাকছে না। তিনি কাজ করবেন সৌদির ফুটবল উন্নয়নে। রোনালদোর ইমেজ কাজে লাগিয়ে সৌদি ফুটবল বিশ্বের মনোযোগ কাড়তে চায়। তিনি কাজ করবেন সৌদি আরবের বিশ্বকাপ স্বাগতিক হিসেবে স্বপ্নপূরণের ‘বিশেষ দূত’ হিসেবে। 

আরও একটি বিষয় লক্ষণীয়, এখন ইউরোপের অনেক ক্লাবের মালিকানা মধ্যপ্রাচ্যের ধনকুবেরদের কাছে। ম্যানচেস্টার সিটি, এসি মিলান, পিএসজি, নিউ ক্যাসেলসহ বহু ক্লাব চলছে মধ্যপ্রাচ্যের পেট্রো-ডলারে। মধ্যপ্রাচ্যের বিনিয়োগকারীরা ইউরোপের ক্লাব কিনতে পারছে। ভবিষ্যতে তারা নিজ দেশে খেলাতে চাইবে বড় তারকাদের। রোনালদো তো এসেই গেছেন।

লুকা মদ্রিচ আর সার্জিও র‍ামসদের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে আল নাসের। এমনকি ২০২৪ সালে পিএসজির সঙ্গে চুক্তি শেষ হওয়ার পর লিওনেল মেসিকে নিজেদের ডেরায় ভেড়ানোর চেষ্টা করছে সৌদির আরেক ক্লাব আল হিলাল- এমন খবর ভেসে বেড়াচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে মেসিকেও সৌদি লিগে দেখা গেলে অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবে না।

বলা যায়, আল নাসেরে রোনালদোর খেলতে আসা এশিয়ার ফুটবলের জন্য হতে পারে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সূচনাপর্ব। ল্যাটিন ক্লাব বা লিগগুলো কখনোই পারেনি ইউরোপের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে। ল্যাটিনের নামিদামি আর উঠতি খেলোয়াড়দের উড়িয়ে এনে সমৃদ্ধ হয়েছে ইউরোপের ক্লাব ফুটবল।

যার মূল কারণ অর্থনৈতিক। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থের সমস্যা নেই। তাই আগামীতে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী এশিয়ান ক্লাবগুলো ইউরোপীয়দের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে না, এমন নিশ্চয়তা নেই।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫