
মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা। ছবি: সংগৃহীত
একজন টেনিস খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ারে যা যা চাওয়া-পাওয়া, তার কোনোটাই অসম্পূর্ণ থাকেনি। বরং আশার চেয়েও বেশি কিছু তিনি পেয়েছেন। বিশ্বখ্যাতি, বিশ্বসেরা, একের পর এক বিজয়ের মুকুট লাভ, সংগঠক হিসেবে ঈর্ষান্বিত সাফল্য- কী নেই তার জীবনে। নতুন প্রজন্মের জন্য এক আদর্শ তিনি।
এই ‘বিশ্বটেনিস মানবী’ হলেন মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা। এত সাফল্য যার, ক্যারিয়ারে অদম্য লড়াকু নাভ্রাতিলোভার লড়াই এখন থ্রোট ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের সঙ্গে। তার এবারের লড়াইটা অন্য রকমের। এখানে টেনিস বল কিংবা র্যাকেটের অথবা গ্রাস-কোর্ট, ক্লে-কোর্ট, হার্ড-কোর্ট, কার্পেট-কোর্টের কোনো সুযোগ নেই।
তবে ক্যারিয়ারে হারতে যিনি শেখেননি, তিনি হারতে চাইবেন? ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার পর বিমর্ষ না হয়ে উল্টো সাহসের সঙ্গে নাভ্রাতিলোভা বলেন, ‘আমার অবস্থা যতই খারাপ হোক আমি লড়াই করব।’ টেনিস জয়ের পর ক্যান্সার জিতুক, এমনটাই নিশ্চয়ই কামনা বিশ্ব টেনিস ভক্তদের।
১৮ বারের গ্র্যান্ডস্লাম এককের শিরোপাজয়ী নাভ্রাতিলোভার বয়স এখন ৬৬ বছর। ১৯৫৬ সালের ১৮ অক্টোবর প্রাগে জন্ম নেওয়া চেক-আমেরিকান খেলোয়াড় ৩১টি বড় আসরের ডাবলসের শিরোপা জিতেছেন। মিক্সড ডাবলস শিরোপা জিতেছেন ১০টি। ৫৯টি গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপার মালিক এই নাভ্রাতিলোভা।
আর সব মিলিয়ে ১৬৭টি শিরোপা জিতেছেন। টেনিসের ওপেন এরাতেই (নতুন যুগে) বেশি শিরোপা জিতেছেন তিনি। ওই সময়ে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মার্কিন তারকা ক্রিস এভার্ট। এভার্টও ১৮টি একক শিরোপা লাভ করেছেন।
নাভ্রাতিলোভা সত্তর ও আশির দশকে মহিলা টেনিসে রাজত্ব করেছেন। ক্যারিয়ারে ৩৩২ সপ্তাহ বিশ্ব র্যাংকিংয়ে শীর্ষে ছিলেন তিনি। মহিলা টেনিসে এটা দ্বিতীয় সেরা। তার চেয়ে বেশি শীর্ষে ছিলেন জার্মানির স্টেফি গ্রাফ। তবে ডাবলসে রেকর্ড সংখ্যক ২৩৭ সপ্তাহ শীর্ষে ছিলেন নাভ্রাতিলোভা। বিশ্ব মহিলা টেনিসের ইতিহাসে একমাত্র খেলোয়াড় তিনি, যে উভয় ক্ষেত্রে একই সঙ্গে ২০০ সপ্তাহ শীর্ষে ছিলেন র্যাংকিংয়ে।
১৯৭৮ সালের ১০ জানুয়ারি সর্বপ্রথম তিনি বিশ্ব র্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থানে উঠে আসেন। ১৯৮৩ সালে তিনি ৯৮টি জয়ের বিপরীতে মাত্র একটি ম্যাচে হেরেছিলেন। টানা ৭৪টি ম্যাচ জয়ও তার এক অসাধারণ কৃতিত্ব।
১৯৭৫ সালে সাবেক চেক স্লোভাকিয়ার নাভ্রাতিলোভা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন। তখন থেকে তিনি দ্বৈত নাগরিক। ২০০৬ সালে টেনিস থেকে অবসর নেন তিনি। নাভ্রাতিলোভা অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতেছেন তিনবার, ফ্রেন্স ওপেন জিতেছেন দুইবার, উইম্বলডন জিতেছেন ৯ বার, ইউএস ওপেন জিতেছেন চারবার, গ্র্যান্ডস্লাম ডাবলস শিরোপা জিতেছেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে আটবার, ফ্রেন্স ওপেনে সাতবার, উইম্বলডনে সাতবার এবং ইউএস ওপেনে ৯ বার।
মিক্সড ডাবলস শিরোপা জিতেছেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে একবার, ফ্রেন্স ওপেনে দুইবার, উইম্বলডনে চারবার এবং ইউএস ওপেনে তিনবার। ২০১৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কোচ হিসেবে দায়িত্বও পালন করেন নাভ্রাতিলোভা। তার ছাত্রী ছিলেন পোল্যান্ডের সাবেক তারকা খেলোয়াড় আগ্নিয়েস্কা রাদওয়ানস্কা।
সর্বকালের অন্যতম সেরা টেনিস খেলোয়াড় নাভ্রাতিলোভা মাঠের লড়াই ছেড়ে দিলেও শারীরিক-প্রাকৃতিক প্রতিপক্ষ তাকে ছাড়ছে না। ২০১০ সালে তার ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রথম ধরা পড়ে। তখন অপারেশন ও রেডিয়েশন থেরাপি দিয়েই তার চিকিৎসা চলে। বলা যায়, তিনি প্রায় ভালোই হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু বেশ কিছুদিন আগে শরীর খারাপ হয়ে পড়ে। ডায়াগনসিস করার পর শরীরের দুই জায়গায় ক্যান্সার ধরা পড়ে।
নাভ্রাতিলোভা বলেন, ‘দু জায়গার ক্যান্সার সিরিয়াস বিষয়। তবে আমি এখনো ভালো আছি। খুব একটা কষ্ট হচ্ছে না আমার। আশা করি দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠব।’ নাভ্রাতিলোভার এজেন্ট ম্যারি গ্রিনহ্যাম জানান, উভয় ক্যান্সারই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং আমরা আশাবাদী তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।