
ঘড়ির কাঁটায় হিসাব চলছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসর অলিম্পিকের। আগামী ২৪ জুলাই উদ্বোধন করা হবে, চলবে ৭ আগস্ট পর্যন্ত। এ ছাড়া টোকিও প্যারা অলিম্পিক ২৫ আগস্ট থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। অলিম্পিককে ঘিরে টোকিও শহরসহ ছোট-বড় সব শহরকে সাজানো হয়েছে নতুন করে। এমনিতেই সবকিছু সাজানো-গোছানো চমৎকার দেশ! তার ওপর আবার বর্ণিল সাজ!
টোকিও নিউ ন্যাশনাল স্টেডিয়াম। সব অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মাণ করা এ স্টেডিয়ামেই অলিম্পিক আসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। ৬০ হাজার সাধারণ আসনসহ সবমিলিয়ে ৬৮ হাজার লোকের ধারণক্ষমতা রয়েছে স্টেডিয়ামটির। এতে ব্যবহার করা হয়েছে হাইব্রিড ব্রডকাস্ট সিস্টেম, সর্বশেষ আবহাওয়া নিয়ন্ত্রক প্রযুক্তি, সংবেদনশীল উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এইট কে এইচডি ক্যামেরা। শুধু তাই নয় বিরূপ আবহাওয়ায় পাল্টে যাবে স্টেডিয়ামের দৃশ্যপটও!
এ ছাড়া খেলোয়াড় ও অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর জন্য টোকিও শহরের পাশে বিশাল এলাকা নিয়ে সমুদ্র ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন আবাসিক অলিম্পিক ভিলেজ। কি নেই সেখানে! এক পাশে বিশাল সমুদ্র আর আশপাশে সব নামকরা হোটেল-মোটেল এবং পার্ক-বিনোদন কেন্দ্রে ভরপুর!
কোটি কোটি ক্রীড়াপ্রেমীদের অবাক করে দিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসর অলিম্পিক গেমস দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজন করতে যাচ্ছে জাপান। এশিয়া মহাদেশের প্রথম ও একমাত্র দেশ এটি। ১৯৬৪ সালের পর প্রযুক্তির দেশ বলে খ্যাত জাপানে ২০২০ সালে কেমন হবে এ অলিম্পিক, এটা কি কেউ ধারণা করতে পারবে? না, আসলেই কেউ ধারণা করতে পারবে না!
সমুদ্রের ঠিক মাঝখানে পাহাড়-পর্বতে ঘেরা অপরূপ এই দেশটাই যেন একটা গোছানো বাগান। এমন একটি দেশে অলিম্পিক হওয়া মানেই বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেওয়া। সব প্রস্তুত। স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে হোটেল- মোটেল, খেলোয়াড়-কর্মকর্তাদের আবাসিক বিলাসবহুল অলিম্পিক ভিলেজ, রাস্তা-ঘাট, ট্রেন-বাস স্টেশন, পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো আবার নতুন করে সাজানো হয়েছে।
শপিং সেন্টার, পার্ক-বিনোদনকেন্দ্র বা স্টেশনগুলোর ভেতরে বাইরেও একটু-আধটু করে হাত বুলিয়ে নিচ্ছে। সারাবিশ্বের মানুষকে আমন্ত্রণ জানিয়ে লজ্জিত হওয়ার মতো জাতি জাপান নয়। তাই হয়তো বাড়তি সতর্কতা। বাড়তি শ্রম আর বাড়তি অর্থ খরচ করছে জাপান সরকার। সাধারণ মানুষও সচেতন কম নয়। নির্দিষ্ট জায়গা ব্যাতীত কোথাও একটি কাগজের টুকরোও ফেলে না জাপানিরা।
থুথু আসলেও টিস্যু পেপার ব্যবহার করে পকেটে রাখে। তাদের সততা, ভদ্রতা, শ্রদ্ধা, সহযোগিতা আর পরিশ্রমের কথা লিখেও যেন শেষ করা যাবে না! অবাক করা বিষয় হলো বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ শহর টোকিও আবার বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহরও এটি। দেশি-বিদেশি মিলে প্রায় আড়াই কোটি মানুষের বাস। এত মানুষের বসবাস, তারপরও শৃঙ্খলা আর নিরাপত্তার বিন্দুমাত্র ঘাটতি নেই। ইতিমধ্যে জাপানের জাতীয় স্টেডিয়ামসহ বেশ কয়েকটি স্টেডিয়াম নতুন করে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে টোকিও জাতীয় স্টেডিয়াম র্নিমাণে। প্রায় দেড় বিলিয়ন ইউএস ডলার। সম্পূর্ণ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর এ স্টেডিয়ামটিতে একসঙ্গে বেশ কয়েকটি খেলা উপভোগ করতে পারবে দর্শকরা। স্টেডিয়ামের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারা দর্শকদের জন্য বাইরে থাকবে অত্যাধুনিক এইচডি কোয়ালিটির অসংখ্য এলইডি পর্দা। অলিম্পিকের চিত্র ধারণেও থাকবে বিশ্বের সবচেয়ে লেটেস্ট মডেলের ক্যামেরা। জাপানি প্রযুক্তির ৩২ থেকে ৪০ মেগাপিক্সেল পর্যন্ত হবে এসবের ক্ষমতা।
জাপান অলিম্পিক কমিটির তথ্যানুযায়ী, ২০৬টি দেশের ৩২৪টি ইভেন্টে ১২ হাজারের বেশি খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করবে। ২০২০ সালের ২৪ জুলাই অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান টোকিও জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। জনপ্রিয় ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হবে জাপানের ৭টি বড় স্টেডিয়ামে।
এর মধ্যে রয়েছে টোকিও জাতীয় স্টেডিয়াম, ইউকোহামা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম, সাইতামা স্টেডিয়াম, মিয়াগি স্টেডিয়াম, টোকিও আজিনোমতো স্টেডিয়াম, ইবারাকির কাসিমা সক্কার স্টেডিয়াম ও সাপ্পোরো ডমে স্টেডিয়াম। জাপান অলিম্পিক কমিটি আরো জানায়, টোকিও সিটি গভর্নমেন্ট অলিম্পিক আয়োজনে প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ইয়েন খরচ করছে।
তবে বেশি অর্থ ব্যয় করা হয়েছে স্টেডিয়াম নির্মাণ, টোকিওর প্রাণকেন্দ্র ওদায়বায় সাগর পাড়ে বিলাসবহুল অলিম্পিক ভিলেজ নির্মাণ, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি, জাপানের রেলওয়ে সংস্কার, স্টেশনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, বড় বড় হাইওয়ে রোড সংস্কারসহ সিটি এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন, বর্ধিতকরণ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ব্যয় হয়েছে।
আয়োজক সংস্থা জানায়, টোকিও ও এর আশপাশের সিটিগুলোতেই অধিকাংশ ইভেন্ট করার প্রস্তুতি শেষ করেছে জাপান। এখন চলছে অপেক্ষার পালা। টোকিও সিটির গভর্নর ইউরেকো কেইকে জানিয়েছে সব কিছু প্রস্তুত। এখন শুধু অপেক্ষা।
সাগরপাড়ে বিলাসবহুল অলিম্পিক ভিলেজ: সত্যি অসাধারণ এক লোকেশনে তৈরি হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল অলিম্পিক ভিলেজ। সাগরের পাড় কিছুটা ভরাট করে বিশাল জায়গা নিয়ে টোকিও সিটির সবচেয়ে দর্শনীয় ও আন্তর্জাতিক হোটেল-মোটেল সমৃদ্ধ স্থান ওদায়বার হারুমি চো-কো’তে গড়ে তোলা হচ্ছে অত্যাধুনিক বিলাসবহুল এ অলিম্পিক ভিলেজ। খেলোয়াড়-কর্মকর্তারা থাকবে এখানে।
পাঁচ তারকা হোটেলের সব সুবিধা রয়েছে খেলোয়াড়দের আবাসিক এ ভিলেজে। বিশালাকৃতির এসব রেসিডেন্সিয়াল বিল্ডিংয়ে প্রায় ৭ হাজারের অধিক ইউনিট রয়েছে। এ ভিলেজ এর পাশেই রয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যম-িত হারুমিফোতো পার্ক ও সমুদ্রসৈকত।
টোকিও অলিম্পিকে নতুন পাঁচ ইভেন্ট: রিও অলিম্পিকের পর জাপানের অলিম্পিক আসরে নতুন করে আরো পাঁচটি ইভেন্ট যোগ করা হয়েছে। নতুন এ ইভেন্টগুলোতে থাকছে বেসবল, কারাতে, স্কেটবোর্ড, স্পোর্টস ক্লাইম্বিং ও সার্ফিং। মুসলিমদের জন্য থাকছে ভ্রাম্যমাণ মসজিদ : অলিম্পিক আয়োজনকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মুসলিম খেলোয়াড় ও দর্শকদের জন্য টোকিওর বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ মোবাইল মসজিদ তৈরি করা হয়েছে।
এ ছাড়াও ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, রেল ও বাস স্টেশনগুলোতেও মসজিদ বা প্রেয়ার রুম খোলা হয়েছে। টোকিও সিটির বেশকিছু বড় স্টেশন ও বিমানবন্দরগুলোতে স্থায়ী প্রেয়ার রুম বা নামাজের জন্য মসজিদ চালু করেছে জাপান সরকার।
এ ছাড়াও মুসলমানদের জন্য টোকিওর বিভিন্ন স্থানে রয়েছে হালাল খাবারের সুন্দর ব্যবস্থা। রয়েছে হালাল শপ ও হালাল রেস্টুরেন্ট। জাপানের দৈনিক ইউমিউরি শিনবুনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ইকনা বলছে, ভ্রাম্যমাণ মসজিদগুলোকে বিভিন্ন স্টেডিয়াম ও প্র্যাকটিস ক্যাম্পগুলোর পাশে রাখা হবে, যাতে মুসলিম খেলোয়াড় ও দর্শকরা সহজেই নামাজ আদায় করতে পারেন। স্থানান্তরের সুবিধার জন্য মসজিদগুলো বড় সাইজের ট্রলির ওপর তৈরি করা হচ্ছে।