
এলিটা কিংসলে। ছবি: সংগৃহীত
চলতি মার্চের ফিফা উইন্ডোতে বাংলাদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত হবে তিন জাতির ফুটবল টুর্নামেন্ট। স্বাগতিক বাংলাদেশ ছাড়াও টুর্নামেন্টে খেলবে সেসেলস আর ব্রুনাই দারুস সালাম। ইতোমধ্যে কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরার অধীনে ২৭ সদস্যের প্রাথমিক স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়েছে। স্কোয়াডে রাখা হয়েছে এলিটা কিংসলেকে।
বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে বহু দিন ধরেই চলছে স্ট্রাইকার সংকট। শেখ মোহাম্মদ আসলাম, ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব কিংবা আলফাজ আহমেদরা ছিলেন জাত স্ট্রাইকারদের শেষ প্রজন্ম। পরে কাঞ্চন আর এনামুলরা প্রত্যাশা অনুযায়ী নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। বর্তমানে তো জাতীয় দল একজন দক্ষ স্ট্রাইকারের অভাবে রীতিমতো হাহাকার করছে।
বাংলাদেশের স্ট্রাইকার সমস্যা কতটা প্রকট তা চলতি মৌসুমের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলের দিকে দৃষ্টি দিলেই স্পষ্ট হয়ে উঠবে। পেশাদার লিগের প্রথম পর্ব শেষে ৯ গোল করে শীর্ষে আছেন বসুন্ধরা কিংসের ডরিয়েলটন গোমেজ এবং শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবে খেলা কোমিলিয়ুস স্টুয়ার্ট। বাংলাদেশিদের মধ্যে সর্বোচ্চ তিন গোল করেছেন নাবিব নেওয়াজ জীবন আর ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, দুজনেই খেলেন ঢাকা আবাহনীতে।
জানার বিষয় হচ্ছে , ২০০৭ সাল থেকে শুরু হওয়া পেশদার ফুটবলের আসর বিপিএলে একবারই বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড় জিতেছে সেরা গোলদাতার পুরস্কার। ২০০৯-১০ মৌসুমে এনামুল হক ঢাকা আবাহনীর হয়ে ২১ গোল করেছিলেন। বাকি সব আসরে সেরা গোলদাতা হয়েছেন বিদেশিরাই।
চলতি মৌসুমে সাত গোল করেছেন এলিটা কিংসলে। ঢাকা আবাহনীর হয়ে চলতি লিগে একটি হ্যাটট্রিকও আছে তার। তিনি একজন নাইজেরিয়ান। ২০১১-১২ মৌসুম থেকে নিয়মিত খেলছেন এ দেশের ঘরোয়া ফুটবলে। পেয়েছেন ব্যাপক পরিচিতি। বিয়েও করেছেন বাংলাদেশে। বৈবাহিক সূত্রেই ২০১৬ সালে আবেদন করে ২০২১ সালের মার্চে পেয়েছেন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার পর আশা আছে যে লাল-সবুজ জার্সি গায়ে চড়াবেন তিনি।
বাংলাদেশের ফুটবল ভক্তরাও এলিটার মাধ্যমে খুঁজতে চাইছে আন্তর্জাতিক ফুটবলে গোল সমস্যার সমাধান। ২০২১ সালে সাফ টুর্নামেন্টের স্কোয়াডে ডাক পেয়েও ছিটকে গিয়েছিলেন ফিফা ও এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের ছাড়পত্র না থাকায়। এলিটার জন্য প্রয়োজনীয় ছাড়পত্রের ব্যবস্থা করতে না পারায় সমালোচনার শিকার হয়েছিল বাফুফেও। তবে বাংলাদেশের মাটিতে তিন জাতির আসরে বাংলাদেশের হয়ে এলিটার অভিষেক হবে, এটা অনেকটাই নিশ্চিত।
২০১৫ সালে চট্টগ্রামে শেখ কামাল গোল্ড কাপের সেরা খেলোয়াড় আর সেরা গোলদাতা ছিলেন এলিটা কিংসলে। ৩৩ বছর বয়সেও বর্তমানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ফুটবলের সবুজ গালিচায়। গোল করছেন নিয়মিত। তিনি নিজেও বাংলাদেশের জার্সিতে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেকের অপেক্ষায়। দীর্ঘদিন প্রতিপক্ষের বক্সে শক্ত সামর্থ্য ও আতঙ্ক ছড়ানো স্ট্রাইকারের অভাবে ভুগছে বাংলাদেশ জাতীয় দল।
ভক্তদের অনেকের ধারণা, এলিটা দলে আসলে সেই অভাব পূরণ হবে। এলিটার অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেছেন, ‘এলিটাকে ডাকা হয়েছে। আশা করি খেলতে পারবেন। প্রতিপক্ষ কোনো দল যদি আপত্তি করে সে ক্ষেত্রে আমরা উত্তর দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। এরই মধ্যে ফিফা থেকে সব ধরনের অনাপত্তি পেয়েছি।’
২০২২ সালের শুরুতে বাংলাদেশের কোচ হয়ে আসেন স্পেনের কাবরেরা। তার অধীনে বিগত বছরে জাতীয় দল আট ম্যাচ খেলে জিতেছে মাত্র একটি, ড্র দুটি, আর বাকি সব হার। সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হচ্ছে, আট ম্যাচে বাংলাদেশ গোলের দেখা পেয়েছে সাকল্যে তিনটি। যা বাংলাদেশের স্ট্রাইকার সংকটের বড় উদাহরণ। ২০২৩ সালে কাবরেরার বাংলাদেশের প্রথম পরীক্ষা তিন জাতির আসরে।
যা সিলেটে অনুষ্ঠিত হবে ২২ থেকে ২৮ মার্চ। ইতোমধ্যে ২৭ জনের প্রাথমিক দল নিয়ে বাংলাদেশ প্রস্তুতি ক্যাম্প করছে সৌদি আরবের মদিনায়। অনুশীলন ছাড়াও মদিনায় জামাল ভূঁইয়ারা দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে নিজেদের ঝালিয়ে ফিরবেন। সেখানে আছেন এলিটাও। সবার আশা, এলিটা কিংসলে বাংলাদেশের গোল সমস্যার সমাধান করবেন।
সেসেলস ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ খেলতে বাংলাদেশে এসেছিল। সেবার ফিলিস্তিনের কাছে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয় তারা। বর্তমানে ফিফা র্যাংকিংয়ে ১৯৯তম দলটির বিপক্ষে প্রথম ও সবশেষ ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কায় মহিন্দা রাজাপাকসে টুর্নামেন্টে দেখা হয়েছিল বাংলাদেশের, ১-১ ড্র হয়েছিল ম্যাচটি। অন্যদিকে ব্রুনাই ফিফা র্যাংকিংয়ের ১৯০তম দল আর বাংলাদেশ ১৯২তম।
তাই দুটি দলের বিপক্ষেই নিজ দেশের মাটিতে জয় না পাওয়া হবে ব্যর্থতা। তাছাড়া এই আসর আগামী জুনে শুরু হতে যাওয়া সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রস্তুতিতে রাখবে বড় ভূমিকা। তাই তিন জাতির আসর বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মিশন সন্দেহ নেই।