
সিদ্দিকুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
দেশসেরা গলফার সিদ্দিকুর রহমান কি হারিয়ে যাচ্ছেন? বলবয় থেকে তারকা খেলোয়াড় হয়ে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বীরদর্পে প্রবেশ করেন সিদ্দিক। কিন্তু সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর হিরো ইন্ডিয়ান ওপেনের শিরোপা লাভ করেন বাংলাদেশি এই গলফার।
টানা ১০ বছর এশিয়ান ট্যুরের শিরোপা না জেতা সিদ্দিক থাইল্যান্ডের ব্ল্যাক মাউন্টেন গলফ ক্লাবে এশিয়ান ট্যুরের ইন্টারন্যাশনাল সিরিজে শুরুটা বেশ ভালোই করেছিলেন। প্রথম তিন রাউন্ড শেষে তিনি অন্য দুজনের সঙ্গে শীর্ষস্থানে ছিলেন। কিন্তু শেষে এসে খেই হারিয়ে ফেলেন। তৃতীয় রাউন্ড শেষে সিদ্দিক যৌথভাবে শীর্ষে ছিলেন ভারতের এস চিক্কারাঙ্গাপ্পা, অস্ট্রেলিয়ার জ্যাক মারে এবং স্বাগতিক থাইল্যান্ডের জাজ জানেওয়াত্তানান্দের সঙ্গে।
সবাই আশা করেছিল, সিদ্দিক হয়তো ১০ বছরের এশিয়ান ট্যুরে শিরোপা না জেতার যন্ত্রণা ঘোচাবেন। সিদ্দিক নিজেও বেশ আশাবাদী হয়ে ওঠেন, ‘তৃতীয় রাউন্ডশেষে স্কোরটা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। শেষ রাউন্ডে ভালো পারফরম্যান্স বজায় রাখতে চাই।’
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হলো না। থাইল্যান্ড আসরের শিরোপা লাভ করেন অস্ট্রেলিয়ার ওয়েড অর্মস্বাই। রানারআপ হন থাইল্যান্ডের চোনলাতিত চুয়েনবোঙ্গাম। আর তৃতীয় হন দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়েংসু কিম ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিকাহ লরেন শিন। সিদ্দিকসহ সাতজন যৌথভাবে ২৭তম স্থান লাভ করেন। গত ৯ মার্চ টুর্নামেন্ট শুরু হয় এবং শেষ হয় ১২ মার্চ।
এবারের আগে কয়েকটি আসরে ভালো খেলেও শিরোপা জিতে পারেননি সিদ্দিক। ২০১৮ সালে ভারতে প্যানাসনিক ওপেনে, ২০১৭ সালে বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেনে এবং ২০১৬ সালে আফ্রো-এশিয়া ব্যাংক মরিশাস ওপেনে রানারআপ ট্রফি নিয়ে সন্তষ্ট থাকতে হয় তাকে। তিনি পেশাদারি গলফ খেলা শুরু করেন ২০০৫ সালে। এশিয়ান ট্যুরে দুটি এবং অন্যান্য আসরে ১০টিসহ মোট ১২টি শিরোপা রয়েছে সিদ্দিকের দখলে।
সিদ্দিক ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকে অংশ নেন। তিনি হলেন প্রথম বাংলাদেশি, যিনি সরাসরি অলিম্পিকে খেলেছেন। ব্রাজিলের রিও অলিম্পিকে সিদ্দিক অবশ্য পদক লাভের ধারে-কাছেও যেতে পারেননি। তিনি ৫৬তম স্থান লাভ করেন।
২০১০ সালে সিদ্দিক যখন প্রথম এশিয়ান ট্যুরের শিরোপা জেতেন, তখন ভারতের কলকাতার একটি পত্রিকা তাকে ‘বাংলার টাইগার উডস’ খেতাব দেয়। আফজাল হোসেন ও মনোয়ারা বেগমের সন্তান সিদ্দিক জন্মের পর থেকেই অভাবের মধ্যে বেড়ে ওঠেন। ধামালকোটের বস্তিতে থাকাকালে সেনাবাহিনীর গলফ ক্লাবে ‘বলবয়’ হিসেবে চাকরি নেন।
বলবয় থেকে খেলোয়াড়দের সরঞ্জাম বহনকারী হিসেবে ‘ক্যাডি’তে প্রমোশন হয় তার। তখন দেশি-বিদেশি গলফ খেলোয়াড়দের সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগ পান এবং গলফ খেলার চর্চাও শুরু করেন। ২০০০ সালে সুবিধাবঞ্চিত গলফারদের অনুশীলনের সুযোগ লাভকারীদের তালিকায় আসে তার নাম। এরপর আর বসে থাকেননি সিদ্দিক। হয়ে ওঠেন দেশসেরা গলফার এবং তার মাধ্যমেই বাংলাদেশ গলফে একটা পরিচিতি লাভ করে। তবে টানা ১০ বছর এশিয়ান ট্যুরে কোনো শিরোপা নেই সিদ্দিকের। প্রশ্ন একটাই, সিদ্দিকের ক্যারিয়ার কি থেমেই গেল?