Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

নারী খেলোয়াড়দের চ্যালেঞ্জ

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২০, ১১:০৬

নারী খেলোয়াড়দের চ্যালেঞ্জ

জয়া, রুমানা, জেসি ও ডানা

নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে দেশের নারীরা খেলাধুলায় অবদান রাখছেন। কয়েকজন নারী খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাদের চ্যালেঞ্জের কথা। লিখেছেন ইফতেখার আলম ফরহাদ

সরকারের কাছ থেকে তেমন কোনো সাপোর্ট পাই না: জয়া চাকমা

বাংলাদেশ থেকে ফিফার নির্বাচিত প্রথম নারী রেফারি। ফুটবল নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের ফুটবল পিছিয়ে থাকার ক্ষেত্রে মূল কারণ অর্থের অভাব। ফুটবল কত এক্সপেন্সিভ গেম! সরকারের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সাপোর্ট পাই না। আমাদের স্পন্সরের ওপর নির্ভর করতে হয়। অথচ বিশ্বজুড়ে দেশগুলোর সরকার ফুটবলের পেছনে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করছে। সেখানে আমরা বছরে আট-দশ কোটি টাকাও খরচ করি না। তাহলে কীভাবে এগোবে, বলেন!’ 

তবে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল নিয়ে আশাবাদী জয়া। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নারী ফুটবল অনেক নতুন। এশিয়াতে যেসব দেশ নারী ফুটবলে সমৃদ্ধ, যেমন জাপান, কোরিয়া, চীন, থাইল্যান্ড, তারা কিন্তু অনেক পুরনো। এমনকি ভারতের নারী দলও ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সি। সেদিক থেকে আমাদের নারী ফুটবলের বয়স ১০ বছর? সেদিক থেকে আমরা অনেক এগিয়েছি। আগে একটি টুর্নামেন্ট করতে হলে মেয়েদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের মা-বাবা, স্থানীয় কমিউনিটি লিডারদের সাথে কথা বলতে হতো। তাদের বোঝাতে হতো। এখন বঙ্গমাতায় খেলা বাধ্যতামূলক হওয়ায় সেই কষ্ট অনেক কমে গেছে। যদি মেয়েদের ফুটবলে অর্থায়নে সরকার ও স্পন্সরদের সহযোগিতা পাওয়া যায়, তাহলে বিশ্ব পর্যায়ে বাংলাদেশের মেয়েরা খুব দ্রুত আরো উন্নতি করবে।

১০ বছরে যেভাবে ক্রিকেটারদের আসার কথা, তেমনভাবে আসছে না: ক্রিকেটার রুমানা আহমেদ

আমি আমাদের বাড়ির উঠোনে ক্রিকেট খেলতাম। সেখান থেকেই মনে হলো যে, একদিন আমিও ক্রিকেট খেলব; কিন্তু যেহেতু মুসলিম দেশ, তার ওপর মেয়েরা ক্রিকেটের মতো এত কঠিন একটা গেম খেলবে, তা মেনে নিতে পারছিলেন না অনেকে। খেলা শেষ করে আসতে দেরি হতো, অনেকে কানাকানি করতো। আশপাশের মানুষের অনেক সমালোচনা আমাকে ও পরিবারকে সহ্য করতে হয়েছে। যেহেতু ক্রিকেটের ড্রেস পরতাম আর খেলা শেষ করে আসতে দেরি হতো, অনেকে কানাকানি করতো। বলতো, কী দরকার ক্রিকেট খেলা। তবে পরিবার আমাকে সহযোগিতা করেছে। সাফল্য পেলেও ক্রিকেটে মেয়েদের অবস্থা তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি। আমরা ক্রিকেট খেলছি ১০ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু ১০ বছরে যেভাবে ক্রিকেটারদের আসার কথা, তেমনভাবে আসছে না। যেমন আমি খুলনাতে লোকাল ক্রিকেট প্র্যাকটিস করি পিলু স্যারের কাছে। আগে আমরা ২০ থেকে ৩০ জন একসঙ্গে প্র্যাকটিস করতাম। এখন সেখানে হাতে গোনা ১০-১২ জন প্র্যাকটিস করে। তার মানে, উলটো কমছে। কোথাও কোথাও হয়তো একটু বেড়েছে। কিন্তু সেভাবে বাড়েনি। বোর্ড বেতন বাড়িয়েছে একধাপ। হয়তো আরো বাড়াবে। 

তবে তিনি এসব বিষয়ে না ভাবলেও কষ্ট পান মাঝে মাঝে মেয়েদের আর্থিক অবস্থা দেখে।

মেয়েরা কী করবে ‘ফ্যামিলি’ থেকে ঠিক করা হয়: জেসি

মেয়েরা কী করবে সেটা ‘ফ্যামিলি’ থেকে ডিসিশন নেয়া হয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক সহ-অধিনায়ক জাকির জেসি। তিনি বলেন, আমার মা-বাবা যদি সমর্থন না দিতেন তাহলে আমি কখনো এত দূর আসতে পারতাম না। আমার এই উঠে আসার পেছনে আমার মা-বাবার অনেক ভূমিকা রয়েছে। ছোটবেলায় আমি যখন ছেলেদের সাথে ক্রিকেট খেলতাম তখন আমার এলাকার অনেকে অন্য চোখে দেখত।

পুরুষ সংগঠকদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে: কামরুন নাহার ডানা 

সাবেক এই ব্যাডমিন্টন তারকা বলেন, নারীরা আজও অবহেলিত আমাদের দেশে। ক্রীড়াঙ্গনের দিকে তাকান। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) নিয়ম হলো, প্রতিটি ফেডারেশনে ৩৩ ভাগ নারী থাকতে হবে। কিন্তু তা নেই। গত শতাব্দীর ষাট ও সত্তরের দশকে যারা খেলেছে, ওই সময়ে নারীরা ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে আসেনি। এখন আগ্রহ বেড়েছে। পুরুষ সংগঠকদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। এ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমি অনেকের বিরাগভাজন হয়েছি। 

তিনি বলেন, ১৯৮৬ সালে আমার বয়স ছিল ২৬ বছর। ওই বয়সে ব্যাডমিন্টনের যুগ্ম সম্পাদক হই। অনেক সময় দেখা যায়, বিদেশে নারী ক্রীড়াবিদদের কোচ থাকে পুরুষ। কেন? জাতীয় সংসদে যদি সংরক্ষিত কোটা থাকে নারীদের জন্য, তাহলে ফেডারেশনে কেন নয়? সংগঠক হিসেবেও নারীর অধিকার রয়েছে। ফেডারেশনে তিন থেকে চারজন নারী কর্মকর্তা থাকলে মেয়েরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে। আরো বেশি করে খেলতে আসবে। অভিভাবকরাও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন। তাদের মেয়েদের খেলতে দেবেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫