একজন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি সব বাধা-বিপত্তিকে পায়ে ঠেলে নিজেকে একটা বিশেষ জায়গায় নিয়ে গেছেন, হয়েছেন নারীদের প্রেরণা, সাফল্যের প্রতীক। তিনি রুকসানা বেগম। যার আদিপুরুষদের বসবাস সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলায়। কিক বক্সিংয়ের বিশ্বখেতাব জিতে নিয়েছেন ছোট গড়নের মেয়ে রুকসানা। সম্প্রতি বাংলাদেশে এসে ‘ওয়ারিয়র প্রিন্সেস’ নামে পরিচিত রুকসানা শুনিয়ে গেলেন সেই প্রেরণার কথা, দিয়ে গেলেন নারীদের ঘুরে দাঁড়ানোর আশা।

৩৯ বছর বয়সী রুকসানা একজন ইংরেজ পেশাদার কিক বক্সার। তিনি বিশ্ব কিক বক্সিং অ্যাসোসিয়েশনের মহিলা অ্যাটমওয়েট (৪৮-৫০ কেজি) মুয়ে থাই বক্সিং চ্যাম্পিয়ন এবং ব্রিটিশ মুয়ে থাই দলের অধিনায়ক। ২০১৬ সালে জিতেছেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন খেতাব। আর ২০১৮ সালের মার্চ মাসে রুকসানা পেশাদার কিক বক্সিংয়ে নাম লেখান। ছোটবেলায় রুকসানা ফুটবল, ব্যাডমিন্টন ও সাঁতার পছন্দ করতেন। 

তার অনুপ্রেরণা ছিল মোহাম্মদ আলী ও ব্রুস লি। ২০০২ সালে ১৮ বছর বয়সে রুকসানা গোপনে কিক বক্সিংয়ে ক্লাস করতেন। পরিবার অনুমতি নাও দিতে পারেএমন আশঙ্কায় তিনি এটি গোপন করেছিলেন। তাই ক্যারিয়ারের প্রথম ট্রফিটা তো সবার সামনে বাড়িতে আনতেই পারেননি ভয়ে। রোকসানা বলেন, ‘একটা পলিথিনের ব্যাগে মুড়িয়ে প্রথম জেতা ট্রফিটা বাড়িতে আনি। যাতে বাবা এটা দেখতে না পান। এরপর ছোট বোনের সহযোগিতায় সেটা ওয়ার্ডরোবে লুকিয়ে রাখি।’ 

তবে ২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পরই তিনি তার পরিবারকে জানান মুয়ে থাই অনুশীলন করার কথা। ২০০৯ সালে রুকসানা থাইল্যান্ডে বিশ্ব অপেশাদার কিক বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেন। ২০১০ সালের ২৭ নভেম্বর রুকসানা ব্রিটিশ মুয়ে থাই অ্যাটমওয়েট কিকবক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতেন। 

মাত্র ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি (১.৬০ মিটার) উচ্চতার এই মেয়েটি বাংলাদেশকে নিয়ে দারুণ গর্ব করেন। দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশে ফের আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছেন রুকসানা। তিনি বলেন, আমার শেকড় গাঁথা এখানে। বাংলাদেশে এসে খেলাটা আমার জন্য অনেক বড় কিছু। মেয়েরা এখানে আমাকে দেখে অনুপ্রাণিত হবে। তারা বিশ্বাস করবে যে চাইলেই স্বপ্ন সত্যি করা সম্ভব।

রুকসানা পেশাদার একজন প্রশিক্ষক। লন্ডনের মুসলিম স্কুল ছাত্রীদের বিনা মূল্যে বক্সিং শেখান রুকসানা। ফাইট ফর পিস ও স্পোর্টিং ইকুয়ালনামের দুটি সংগঠনের শুভেচ্ছাদূত। ২০১২ সালে হয়েছিলেন ব্রিটেনে মুসলিম নারী খেলোয়াড়দের শুভেচ্ছাদূত। একই বছর ব্রিটেনে ১০০ প্রভাবশালী বাংলাদেশির তালিকাতেও ছিলেন তিনি। ২০২০ সালে প্রকাশিত তার জীবনী ‘বর্ন ফাইটার’ ব্রিটেনের অন্যতম সাড়া জাগানো বইয়ের একটি।

জীবনের পালাবদলে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজকের রুকসানা হতে পেরেছেন তিনি। ২০০৬ সালে মা-বাবার পছন্দে বিয়ে করেছিলেন ব্যাংকার সাঈদ চৌধুরীকে। দুই বছর পরই হয়ে যায় ছাড়াছাড়ি। নিজের জীবনীতে রুকসানা লিখেছিলেন, বিয়ের পর লড়াকু পরিচয়টাই হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। মানসিক সমস্যায় ভর্তি হন হাসপাতালে। এরপর মা-বাবার সমর্থন পেয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু হয় রুকসানার।