
আবু নাঈম সোহাগ। ছবি: সংগৃহীত
‘বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে তারা (বাফুফে) কিন্তু মারাত্মকভাবে নষ্ট করেছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই, ফিফা ব্যক্তির ওপর দিয়ে বিষয়টি নিয়েছে। যদি পুরো বাংলাদেশের ফুটবলকেই নিষিদ্ধ করত, তা হলে সেটা হতো আরও বেশি লজ্জার।’ বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে বিশ্ব ফুটবল অভিভাবক ফিফা নিষিদ্ধ করার পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় কথাগুলো বলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। একজন বেতনভুক্ত কর্মকর্তাই এখন বাফুফের রক্ষাকবচ। বাফুফে সভাপতির ওপর সরাসরি কোনো দায় এসে পড়েনি। কিন্তু একজন বেতনভুক্ত কর্মকর্তা একাই সব দুর্নীতির হোতা , এটা কি পাগলেও বিশ্বাস করবে!
এক দিনে তো এমন পরিস্থিতির তৈরি হয়নি। দিনকে দিনই অবনতির দিকে যাচ্ছিল দেশের ফুটবল। বাফুফের আর্থিক অস্বচ্ছতা নিয়ে প্রায় নিয়মিত খবর এসেছে মিডিয়াতে। কিন্তু সংস্থাটি থেকে নেতিবাচক খবর প্রকাশের জন্য দায়ী করা হয়েছে মিডিয়াকে।
এ প্রসঙ্গে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর ভাষ্য, ‘গণমাধ্যমের রিপোর্টই প্রকৃত অর্থে সত্য হলো। আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যম সবসময় সোচ্চার ছিল।’
এই সূত্র ধরে বাংলাদেশ ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার শেখ মোহাম্মদ আসলাম বলেন, আচ্ছা বলেন তো, সোহাগ বাংলাদেশ ফুটবলের কী এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। আর তার ঘাড়ে কয়টা মাথা! এতসব কেলেঙ্কারি একা একা করবে? স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পথেই হাঁটেনি বাফুফে। এর সঙ্গে অনেকেই জড়িত। বাংলাদেশ ফুটবলের স্বার্থেই বিষয়টার সুরাহা হওয়া উচিত।
এই ধরনের পরিস্থিতির জন্য পুরো বাফুফেকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন সাবেক কৃতী ফুটবলার গোলাম সারোয়ার টিপু। তার কথায়, টাকা-পয়সা যদি এদিক সেদিক হয়ে থাকে, সভাপতি এটা জানবে না, এতগুলো সহ-সভাপতির কেউ জানবে না, বা অন্য যারা আছেন তাদের কারও কোনো ধারণা থাকবে না, এমনটা হতে পারে না। মোটকথা ওপরের দিকের কেউ জানে না, এটা কিছুতেই বিশ্বাস করার মতো নয়।
বাফুফে যে পথ ধরে এগোচ্ছে তাতে বড় ধরনের একটা বিপর্যয় ঘটতে পারে এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছিল বলে জানিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক কৃতি ফুটবলার আশরাফউদ্দিন খান চুন্নু। তার কথায়, তবে তাদের আচরণে আমি কিন্তু বিভিন্ন সময় বলে আসছিলাম, এরকম ঘটনা ঘটতে পারে। তাড়াতাড়ি তারা যেন এটার পদক্ষেপ নেয়। তারা (বাফুফে) বলে আমরা সব ঠিকঠাক করে আসছি, সব ম্যানেজ হয়ে গেছে। আলটিমেটলি কিন্তু বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থা ফিফা কোনো ছাড় দেয় না এবং দেয়নি। আবু নাঈম সোহাগ একজন পেইড কর্মচারী। সে কিন্তু অনুমোদন নিয়েই এগুলো করেছে। কে অনুমোদন দিয়েছে, কারা কারা দিয়েছে এগুলো খতিয়ে দেখা উচিত। আমি মনে করি, খুব দ্রুতই ফিফা এগুলো খুঁজে বের করে সামনে আনবে।
সোহাগকাণ্ডে যদি সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তবে এর পরিণতি আরও খারাপ হবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ফুটবল সংশ্লিষ্টরা। শেখ আসলামের কথায়, আমি বলব ফেডারেশনের এখন দায়িত্ব অনেক। তাদের স্বেচ্ছায় সরে যাওয়া উচিত ছিল। একজনের এত আর্থিক কেলেঙ্কারি সেটা আর্থিক কমিটি জানবে না এটা হয় কীভাবে? এ ঘটনার জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। যোগ করেন, সম্প্রতি মেয়েদের অলিম্পিকে না পাঠানো নিয়ে যে কেলেঙ্কারিটা হলো, এরপর তারা বলে এটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এটা কোনো কথা? ইচ্ছাকৃতভাবে তারা এটা করেছে।
গত শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) আর্থিক অনিয়মের দায়ে বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে দুই বছরের জন্য ফুটবলের সব ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে নিষিদ্ধ করেছে ফিফা। পাশাপাশি তাকে ১২ লাখ (১০ হাজার সুইস ফ্রাঁ) টাকা জরিমানাও করেছে ফিফা।
ঘটনা যেহেতু সোহাগ নিষিদ্ধ, তাই দ্রুতই এই পদে নতুন কাউকে নিয়োগ দিতে হবে বাফুফের। এমনই টালমাটাল অবস্থায় আজ সোমবার (১৭ এপ্রিল) সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জরুরি সভা ডেকেছেন বাফুফে সভাপতি কাজি সালাউদ্দিন। বাফুফে ভবনে এই জরুরি সভা শুরু হবে আজ বিকাল ৪টায়।
সভার এজেন্ডা যে একটাই সেটা বুঝতে প্রয়োজন পড়ে না বিশেষজ্ঞ হওয়ার। বাফুফের নির্বাহী কমিটি প্রশাসনিক কাজ চালিয়ে নিতে কাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
জানা গেছে আপাতত ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিতে পারে বাফুফে।
উল্লেখ্য, সদ্য নিষিদ্ধ হওয়া আবু নাইম সোহাগও প্রথমে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবেই দায়িত্ব পেয়েছিলেন।