Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

অদম্য জামালের ভারত জয়

Icon

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:২০

অদম্য জামালের ভারত জয়

গলফার জামাল হোসেন মোল্লা। ছবি: সংগৃহীত

চার বছর পর প্রফেশনাল গলফ টুর্নামেন্টের (পিজিটিআই) আরেকটি শিরোপা জিতলেন বাংলাদেশের গলফার জামাল হোসেন মোল্লা। গত ২২ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের দিন ভারতের আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত আহমেদাবাদ ওপেনে (৩৩-৩৬-৬৯-৭০) ফাইনাল রাউন্ডে দুটি আন্ডার ৭০ স্কোরে এক কোটি রুপির এই শিরোপা জেতেন তিনি। এ নিয়ে পিজিটিআইয়ের চারটি শিরোপা এখন জামালের দখলে। 

এই জয়ে টাটা স্টিল পিজিটিআই র‌্যাঙ্কিংয়ে ২১তম স্থান থেকে ১৬ ধাপ এগিয়ে পাঁচে উঠে এসেছেন জামাল। শিরোপা জিতে বেশ তৃপ্ত ৩৮ বছর বয়সী গলফার জামাল। 

তিনি বলেন, ‘আমি আমার ওয়েজেস ও চিপ শট খেলেছি দারুণভাবে। খারাপ শুরুর পরও আমি আত্মবিশ্বাস রেখেছিলাম, তাই ভালো ফল করতে পেরেছি। এই শিরোপার জন্য দীর্ঘদিন আমি অপেক্ষা করেছি। আমার হোম কোর্স কুর্মিটোলা গলফ ক্লাব ও বাংলাদেশ গলফ ফেডারেশনকে তাদের অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানাই।’

জামাল ঈদের পরদিন দেশে ফিরেছেন। বাংলাদেশ গলফ ফেডারেশনের পক্ষ থেকে জামালকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। পরে হোম অব গলফ কুর্মিটোলায় ভারতজয়ী গলফারকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন ফেডারেশনের কর্মকর্তারা। পরিশ্রম, অধ্যবসায়, সাহস ও আত্মবিশ্বাস থাকলে যে অসাধ্যকেও সাধন করা যায় তারই একটা নজির স্থাপন করলেন গলফার জামাল।

আহমেদাবাদের গ্রেড ওয়ান গলফ ক্লাবে ভারতের বাঘা বাঘা গলফারকে বোকা বানিয়ে পিজিটিআই টুর্নামেন্টে আরও একটি শিরোপা জয়ের পর জামাল বলেন, ‘এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমি এর আগেও তিনবার পিজিটিআই জিতেছি, কিন্তু এবারের আনন্দই আলাদা। এমন সব তারকাসমৃদ্ধ টুর্নামেন্টে জিতে সবার সামনে ভারতের মাটিতে আমি বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছি। অবিশ্বাস্য লাগছে। সব কিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।’ 

অনেক দিন থেকে বাংলাদেশের পেশাদার গলফে বড় কোনো শিরোপা ছিল না। দেশসেরা গলফার সিদ্দিকুর রহমান এশিয়ান ট্যুরের ট্রফি জিতেছেন ২০১৩ সালে। জামালের হাত ধরেই ২০১৮ সালে এই পিজিটিআইয়ের শিরোপা এসেছিল। এবার সেই জামালই আবার শিরোপা খরা ঘুচালেন। ২০১০ সালে সিদ্দিকুর রহমান এশিয়ান ট্যুরের (ব্রুনাই ওপেন) শিরোপা জয়ের পর এ দেশের গলফে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। কিন্তু জামাল ঠিক তার আগের বছরই জিতেছিলেন পিজিটিআইয়ের শিরোপা। সেই গল্পটা যেন রূপকথার কাহিনিকেও হার মানায়। 

পেশাদার গলফে তখনো পা পড়েনি। জামাল ছিলেন অ্যামেচার গলফার। বড় টুর্নামেন্টগুলোয় ছোটদের অভিজ্ঞ করতে সুযোগ দেওয়া হয়। তবে অ্যামেচার গলফারের জন্য কোনো প্রাইজমানি থাকে না বলে কেবল স্বাগতিক দেশের অ্যামেচাররাই অংশ নেন। সেই সুযোগটাই নিয়েছিলেন জামাল। ২০০৯ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বড়দের ওই আসরে ছোট্ট জামাল সবাইকে অবাক করে দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন। তারপর পেশাদার হিসেবে পিজিটিআইয়ের শিরোপা জেতেন ২০১২ সালে। ২০১৮ সালে আরও একবার চ্যাম্পিয়ন। অবশেষে এবার এলো চতুর্থ শিরোপা। 

অ্যামেচার হিসেবে পেশাদার গলফারদের টপকিয়ে প্রথম পিজিটিআই শিরোপা জয়ের সেই স্মৃতি রোমন্থনও করেন, ‘জানেন, ২০০৯ সালে আমি বুঝতেই পারিনি কত বড় একটা টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। এখন বুঝি সেটা ছিল অবিশ্বাস্য এক ঘটনা। কারণ পেশাদার গলফারদের ছাপিয়ে একজন অ্যামেচার গলফারের চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা সোজা কথা নয়। যদিও তখন কোনো প্রাইজমানি পাইনি। কারণ অ্যামেচারদের কোনো প্রাইজমানি থাকে না। তবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কারণে তিন বছর পিজিটিআইয়ে সরাসরি খেলার সুযোগ পাই। সেটাই ছিল আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।’ 

বিদেশের মাটিতে গলফে বাংলাদেশের বড় বিজ্ঞাপন সিদ্দিকুর এবং জামাল। দুই তারকাই কিছুদিন থেকে শিরোপার খুব কাছে গিয়েও পাচ্ছিলেন না। সিদ্দিকুর পর পর দুই এশিয়ান ট্যুরের টুর্নামেন্টে লিডিংয়ে থেকেও শিরোপা জিততে পারেননি। তাই জামাল যেন প্রতিজ্ঞা করে ভারতে গিয়েছিলেন----যে কোনো মূল্যে শিরোপা জিততেই হবে! তারকা এই গলফার বলেন, ‘আমার ব্যাক টু ব্যাক ৫টা টুর্নামেন্ট ছিল। আমার ইচ্ছা ছিল যদি ঈদের আগে কোনো টুর্নামেন্ট জিতে যাই তাহলে দেশে চলে আসব। আর যদি জিততে না পারি তাহলে ঈদের মধ্যে শেষ টুর্নামেন্ট খেলেই ফিরব। তাই ঈদের মধ্যেও আমি খেলেছি। কী ভাগ্য আমার, ঈদের দিনই চ্যাম্পিয়ন হই।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫