
কাতালানদের এখন শিরোপা ঘরে তোলা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
ঘরের মাঠে ওসাসুনাকে ১-০ গোলে হারিয়ে লা লিগার শিরোপার আরও কাছে বার্সেলোনা। অন্যদিকে, রিয়াল সোসিয়েদাদের কাছে মাদ্রিদের ০-২ গোলের হারে পয়েন্ট ব্যবধান এখন ১৪। তাই কাতালানদের এখন শিরোপা ঘরে তোলা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
মঙ্গলবার (২ মে) ন্যু ক্যাম্পে ওসাসুনার বিপক্ষে ম্যাচের শুরু থেকেই বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল বার্সেলোনা। কিন্তু প্রথমার্ধে প্রতিপক্ষের গোলমুখে অনেকগুলো শট নিয়েও কোনোটিই লক্ষ্যে রাখতে পারেনি কাতালানার। ২০২১ সালের নভেম্বরে জাভি হার্নান্দেজ ডাগআউটে আসার পর প্রথমবারের মতো ন্যু ক্যাম্পে ম্যাচের মধ্যবিরতির আগে লক্ষ্যে শট রাখতে পারেনি বার্সা।
যদিও ম্যাচের ২৬ মিনিটে দশজনের দলে পরিণত হয়ে বড় ধাক্কা খায় ওসাসুনা। বল নিয়ে ডি বক্সের দিকে ছুটে যাওয়া পেদ্রি গঞ্জালেসকে হাত ধরে ফেলে দিয়ে সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ওসাসুনার ডিফেন্ডার হোর্হে হেরান্দো। কিন্তু দশজনের ওসাসুনাকে পেয়েও সুবিধা করতে পারছিল না বার্সেলোনার আক্রমণভাগ। বরং সফরকারীদের আটসাঁট রক্ষণের সামনে প্রতিনিয়ত হোঁচট খাচ্ছিল কাতালানরা।
বাড়তি সমস্যা হিসেবে যোগ হয়েছিল ওসাসুনা গোলরক্ষক আইতোর ফার্নান্দেজের অতিমানবীয়তা। গোটা ম্যাচে অন্তত ৬টি দুর্দান্ত সেভ করেছেন তিনি। পাশাপাশি রবার্ট লেভানডফস্কি, আনসু ফাতি, রাফিনহা, পেদ্রিরাও একের পর এক সুযোগ হাতছাড়া করেছেন।
ওসাসুনার বিপক্ষে বার্সেলোনার অদৃশ্য প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছিল দুর্ভাগ্যও। ৭৬ মিনিটে পেদ্রির থ্রু পাস ছুটে এসে বল বিপদমুক্ত করেন ওসাসুনা গোলরক্ষক ফার্নান্দেজ। বল সোজা চলে যায় ফেরান তোরেসের পায়ে। স্প্যানিশ ফরোয়ার্ডের নেওয়া শট ফাঁকা গোলমুখের দিকে এগোতে থাকলেও শেষ মুহূর্তে খানিকটা বাঁক নিয়ে পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। মিনিট খানেক পর জটলার মধ্যে লেভানডফস্কি গোল করলেও তোরেস অফসাইডে থাকায় তা বাতিল হয়ে যায়।
শেষ পর্যন্ত ৮৫ মিনিটে ওসাসুনার প্রতিরোধ ভাঙতে সমর্থ হয় বার্সেলোনা। লেভানডফস্কির ব্যাক পাসে ফ্রাঙ্কি ডি ইয়ং হেডে বল বাড়িয়ে দেন ডি-বক্সের ভেতরে বাঁ প্রান্তে ফাঁকায় থাকা জর্ডি আলবার দিকে। বর্ষীয়ান লেফটব্যাকের নেওয়া বাঁ পায়ের আড়াআড়ি ভলিতে ওসাসুনা গোলরক্ষক হাত দিয়ে স্পর্শ করলেও জালে জড়ানো থেকে আটকাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ওই ১-০ ব্যবধানেই জয়ের মাধ্যমে পূর্ণ ৩ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে বার্সা।
ওসাসুনার বিপক্ষে বার্সার জয়ের আধা ঘণ্টা পর রিয়াল সোসিয়েদাদের মু্খোমুখি হয় রিয়াল মাদ্রিদ। বিশ্রামে থাকা করিম বেনজেমা, নিষেধাজ্ঞার কারণে ভিনিসিয়াস জুনিয়র ও এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা আর চোটাক্রান্ত লুকা মডরিচ ও ডেভিড আলাবাকে ছাড়া একরকম খর্বশক্তির দল নিয়েই মাঠে নামে লস ব্লাঙ্কোসরা।
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে দুই দলের লড়াই দারুণভাবে শুরু হলেও ম্যাচের প্রথমার্ধ ছিল গোলশূন্য। তবে দ্বিতীয়ার্ধে রিয়াল সোসিয়েদাদের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারেনি রিয়াল। মধ্যবিরতির পর দ্বিতীয় মিনিটেই স্বাগতিকদের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়ে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। যদিও তাতে ভুল রয়েছে নিজেদের রক্ষণভাগেরই।
আলেক্সান্ডার সরলথের চাপে পড়ে নিজেদের সীমানায় বল পেছন দিকে গোলরক্ষকের কাছে পাস দেন এডের মিলিটাও। কিন্তু বলের গতি একটু বেশিই থাকায় থিবো কোর্তোয়া সামনে এগিয়ে আসার কারণে নাগাল পাননি। সেই সুযোগে কাছাকাছি থাকা তাকেফুসা কুবো ছুটে এসে সহজেই বল জালে জড়িয়ে দলকে এগিয়ে দেন।
পিছিয়ে থাকা ৬১ মিনিটে বড় ধাক্কা খায়। মাত্র ৭ মিনিটের ব্যবধানে দুই হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন স্প্যানিশ রাইটব্যাক দানি কার্ভাহাল। দশজনের দলে পরিণত হয়ে কার্লো অ্যানচেলত্তির শিষ্যরা আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি। উল্টো ৮৫ মিনিটে অ্যান্ডার বারেনেটিয়ার গোলে সোসিয়েদাদ ব্যবধান দ্বিগুণ করে। শেষ পর্যন্ত লা লিগায় তিন ম্যাচে দ্বিতীয় এবং সব মিলিয়ে সপ্তম হারের হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়ে রিয়াল।
রিয়ালের এ হারে বার্সেলোনার লিগ শিরোপা জয় এখন শুধুই সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৩৩ ম্যাচে ৮২ পয়েন্ট নিয়ে লা লিগার শীর্ষস্থানে রয়েছে কাতালানরা। সমান সংখ্যক ম্যাচে দ্বিতীয় স্থানে থাকা রিয়ালের সংগ্রহ ৬৮ পয়েন্ট। লস ব্লাঙ্কোসরা আর একটি ম্যাচ হারলেই চার বছর পর আবার লা লিগার শিরোপা ঘরে তুলবে বার্সা। কারণ দুই দলের বর্তমানে আর ৫টি ম্যাচ বাকি থাকায় জাভি হার্নান্দেজের দলকে আর ধরতে পারবে না রিয়াল।
সোসিয়েদাদের বিপক্ষে হারের কারণে লা লিগা শিরোপা ধরে রাখার শেষ সম্ভাবনা তো মুছে গেছেই, উল্টো পয়েন্ট তালিকার তিনে নেমে যাওয়ার শঙ্কাও জেগেছে রিয়ালের। বর্তমানে পয়েন্ট তালিকার তৃতীয় অবস্থানে থাকা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ মাত্র ২ পয়েন্ট পেছনে, রিয়ালের নগরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হাতে একটি ম্যাচও রয়েছে।