সীমাহীন অভিযোগ নিয়েও নির্বিকার বাফুফের বড়কর্তারা

আহসান হাবীব সুমন
প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৩, ১০:৩৮

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। ছবি: সংগৃহীত
আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগকে নিষিদ্ধ করেছে ফিফা। অবশ্য ফুটবল ফেডারেশনের ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান আবদুস সালাম মুর্শেদী জোর গলায় দাবি করেছেন, সোহাগের বিরুদ্ধে কোনো আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ নেই। তার দাবি, ফিফার টাকায় বাফুফের নানাবিধ ক্রয় আর অন্যান্য খরচের ক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম পালন করা হয়নি বলেই সোহাগকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
সালাম মুর্শেদীর দাবি ধোপে টেকেনি। বাফুফের সাধারণ সম্পাদকের পদে থেকে কী কী অনিয়ম করেছেন সোহাগ ও বাফুফের কর্মকর্তারা, সেটা ৫১ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে ফিফা। নিরীক্ষা শেষে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকার আর্থিক অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে ফিফা। ক্রীড়াসামগ্রী ক্রয়, বিমানের টিকিট কিনতে ভুয়া প্রতিষ্ঠান দেখানো, ঘাস কাটার যন্ত্র, পানির সংযোগসহ নানা খাতের দরপত্রে গরমিলের প্রমাণ দেখানো হয়েছে সেই প্রতিবেদনে।
শুধু কেনাকাটাতেই নয়, বাফুফের জন্য বরাদ্দ বার্ষিক অনুদানেও আছে নয়ছয়ের প্রমাণ। ফিফার নৈতিকতা বিষয়ক কমিটির ইনভেস্টিগেটরি চেম্বার বেশ কিছু লেনদেন বিশ্লেষণ করে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৮৪ মার্কিন ডলার আর্থিক অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে। এমনকি নারী ফুটবল দলের পেছনে ১ লাখ ৭ হাজার ৬৩৪ ডলার খরচের কোনো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখায়নি বাফুফে।
ফিফার অভিযোগের পর পুরো দায় এখন সোহাগের কাঁধে চাপানোর চেষ্টা চলছে। ফিফার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পর সালাম মুর্শেদী জানিয়েছেন, ‘দুর্নীতি হলে সোহাগ ব্যক্তিগতভাবে করেছে! এতে ফাইন্যান্স কমিটির কোনো জালিয়াতি নেই।’ বাফুফে অবশ্য সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করেছে সোহাগকে। তার আর্থিক অনিয়মের তদন্ত করতে ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করেছিল বাফুফে। বলা হয়েছিল, এক মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে কমিটি।
অথচ দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সেই তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেনি। উল্টো কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন বাফুফের দুই সিনিয়র সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মানিক এবং মহিউদ্দিন আহমেদ মহী। কমিটি থেকে দুই সিনিয়র সদস্যের পদত্যাগ সৃষ্টি করেছে নতুন জটিলতা। আদৌ বাফুফের তদন্ত আলোর মুখ দেখবে কিনা তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে সন্দেহ।
শুধু বহিষ্কৃত সোহাগ নয়, অভিযোগ আছে বাফুফের বিরুদ্ধেও। অভিযোগ উঠেছে, শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট থেকে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বাফুফে কর্তারা। অথচ এটি বাফুফের কোনো টুর্নামেন্ট ছিল না। ২০১৫ সাল থেকে তিনটি আসরের আয়োজক ছিল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক আর চট্টগ্রাম আবাহনী। আসরের পুরো খরচ দিয়েছে সাইফ পাওয়ার টেক।
কিন্তু নিজেদের বার্ষিক অডিট রিপোর্টে শেখ কামাল গোল্ড কাপের নামে খরচ দেখিয়েছে বাফুফে। টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, শেখ কামাল গোল্ডকাপে বাফুফের পক্ষ থেকে কানাকড়িও খরচ করা হয়নি। উল্টো চট্টগ্রামে আয়োজিত টুর্নামেন্টে বাফুফে কর্তাদের সব খরচ বহন করেছে আয়োজকরা। শেখ কামাল গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট নিয়ে ওঠা অভিযোগ নিয়ে বাফুফের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
সোহাগের দুর্নীতির দায় বাফুফে এড়াতে পারে না। সোহাগ ২০১১ সাল থেকে বাফুফের সাধারণ সম্পাদকের পদে আছেন। আর সালাহউদ্দিন ও সালামরা নিজেদের পদে আছেন ২০০৮ সাল থেকে। এত বছরেও সোহাগের অনিয়ম বা সোহাগের আর্থিক স্বেচ্ছাচারিতা কি ফাইন্যান্স কমিটির চোখে পড়েনি? যদি না হয় এটাও বাফুফের দায়। ঠিক একইভাবে শেখ কামাল গোল্ডকাপের খরচ দেখানো হয়েছে বাৎসরিক অডিটে। সেটাও বাফুফের কর্তাদের অজ্ঞাতে, এমন বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই।
ইতোমধ্যে জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার গোলাম সারোয়ার টিপু, দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু, আব্দুল গাফফার, হাসানুজ্জামান খান বাবলু, কায়সার হামিদ, শফিকুল ইসলাম মানিক, ইমতিয়াজ সুলতান জনি, সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালী সাব্বির ও শেখ আসলামরা সাক্ষাৎ করেছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের সঙ্গে। সাবেক ফুটবলার আব্দুল গাফফারের নেতৃত্বে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে তারা মন্ত্রীর হাতে একটি স্মারকলিপি জমা দেন; যেখানে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ও সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর স্বেচ্ছায় পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে।
সাবেক তারকা ফুটবলার আব্দুল গাফফার বলেন, ‘সাবেক ফুটবলার হিসেবে দেশ ও জনগণের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমরা ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছি। ’