
জাতীয় নারী দলের খেলোয়াড়রা। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতির ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য নিয়ে যখন সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, ঠিক তখন সিঙ্গাপুরের মাটিতে আমাদের কিশোরীরা মাতৃভূমির জন্য বিরাট গর্ব বয়ে এনেছেন। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে তাদের এ অর্জনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে অচিরেই এশিয়ার অন্যতম সেরা ফুটবল দলে পরিণত হবে বাংলাদেশ। এমন স্বপ্নপূরণ এখন অনেকটাই নাগালের মধ্যে চলে এসেছে। কিশোরীদের এই পথেই মূল জাতীয় নারী দলও অনুপ্রেরণা লাভ করবে।
এশিয়া মহাদেশ তথা বিশ্ব ফুটবলে বাংলাদেশের পুরুষ দলের স্থান একেবারেই তলানিতে, ১৯২ নম্বরে। বিশ্ব নারী ফুটবলের র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪০ নম্বরে। শুধু এশিয়া অঞ্চলেই বাংলাদেশ রয়েছে ২৪ নম্বরে। তবে সুখের বিষয়, বয়সভিত্তিক নারী ফুটবলে বাংলাদেশ দল এখন গণ্য করা বা বিবেচনায় রাখার মতো পজিশন তৈরি করেছে।
এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপের আসরে আপাতত সেরা ১২’র মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। বাছাই পর্বের প্রথম রাউন্ডে বাংলাদেশের কিশোরীরা ‘ডি’ গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে। বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে ৬-০ গোলে তুর্কমেনিস্তানকে এবং দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিক সিঙ্গাপুরকে ৩-০ গোলে হারিয়ে পূর্ণ ৬ পয়েন্ট পেয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলা নিশ্চিত করেছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে ‘এ’ গ্রুপ থেকে থাইল্যান্ড, ‘এফ’ গ্রুপ থেকে ভারত, ‘বি’ গ্রুপ থেকে অস্ট্রেলিয়া, ‘জি’ গ্রুপ থেকে ফিলিপাইন, ‘সি’ গ্রুপ থেকে ভিয়েতনাম, ‘এইচ’ গ্রুপ থেকে ইরান এবং ‘ই’ গ্রুপ থেকে দক্ষিণ কোরিয়া। এই সাতটি ও সরাসরি মূলপর্বে জায়গা পাওয়া ইন্দোনেশিয়া, জাপান, উত্তর কোরিয়া ও চীন দলের সবাই র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের উপরে অবস্থান করছে। বিশ্ব র্যাংকিংয়ে অস্ট্রেলিয়া রয়েছে ১০ নম্বরে, জাপান ১১ নম্বরে, চীন ১৩ নম্বরে, দক্ষিণ কোরিয়া ১৭ নম্বরে, ভিয়েতনাম ৩৩ নম্বরে, থাইল্যান্ড ৪৪ নম্বরে, ফিলিপাইন ৪৯, ভারত ৬১ নম্বরে, ইন্দোনেশিয়া ৯৯, ইরান ৬৭ নম্বরে।
বাংলাদেশের কৃতিত্ব এটাই যে, অনেক শক্তিশালী দেশকে পেছনে ফেলে এই বয়সভিত্তিক আসরে আপাতত সেরা ১২টি দলের মধ্যে রয়েছে। আর দ্বিতীয় রাউন্ডের বাধা অতিক্রম করতে পারলে এশিয়ার সেরা ৮টি দলের মধ্যে চলে আসবে বাংলাদেশ। আর সেটা হলেই সৃষ্টি হবে নতুন এক ইতিহাস। ক্লাবভিত্তিক ফুটবলে একবার ঢাকা মোহামেডান এশিয়ার সেরা আটে পৌঁছেছিল। কিন্তু জাতীয় দল কিংবা জাতীয় বয়সভিত্তিক দল পুরুষ অথবা নারীরা এশিয়ান কোনো আসরে এমন কৃতিত্ব দেখাতে সক্ষম হয়নি।
মোট ৮ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দলগুলোকে নিয়ে চলতি বছরের ১৬ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ নারী ফুটবল বাছাই পর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলা। ভেন্যু এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ রাউন্ড থেকে সেরা ৪টি দল মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। ইন্দোনেশিয়ায় ২০২৪ সালের ৭ থেকে ২০ এপ্রিল এই আসরের মূলপর্ব অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের সামনে এখন সেরা আটে যাওয়া এবং মূলপর্বে খেলার হাতছানি।