Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

অলিম্পিকে ওয়াইল্ড কার্ডের অপেক্ষায় তারা

Icon

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২০, ১২:০৪

অলিম্পিকে ওয়াইল্ড কার্ডের অপেক্ষায় তারা

বেশিরভাগ সময়েই বাংলাদেশের অলিম্পিক মানেই ওয়াইল্ড কার্ডের ওপর ভরসা করা। কর্মকর্তাদের মতোই ক্রীড়াবিদরা অপেক্ষায় থাকেন বিশেষ এই সুযোগের। ব্যতিক্রম হয়নি এবারও। 

তবে ২০১৬ সাল থেকে কিছুটা হলেও পাল্টেছে পরিবেশ। চার বছর আগে ব্রাজিলের রিও অলিম্পিকে সরাসরি খেলার সুযোগ হয়েছিল সিদ্দিকুর রহমানের। এই গলফার বিশ্বের সেরা ৬০ জনের মধ্যে থাকায় ওয়াইল্ড কার্ড নয়, কোটা প্লেসের মাধ্যমেই সুযোগ পেয়েছিলেন। এবারের জাপানের টোকিও অলিম্পিকে সরাসরি খেলার সুযোগ পেয়েছেন রোমান সানা। এই আর্চার বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্চ জিতে নিজের যোগ্যতায় বিশ্বের সেরা এই আসরে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। 

এর বাইরে যাদের খেলার কথা অলিম্পিকে তাদের জন্য ওয়াইল্ড কার্ড ছাড়া আর কোনোভাবে খেলার সুযোগ নেই। সে কারণে তারা রয়েছেন অন্যের বদান্যতার অপেক্ষায়। অথচ সেই সুযোগের অপেক্ষায় চার বছর আগে যেমন থাকেননি সিদ্দিকুর আর এবার থাকেননি রোমান। তবে এর বাইরে কয়েকটি ডিসিপ্লিনের খেলোয়াড়দের থাকতে হচ্ছে। 

অলিম্পিকের মতো আসরে পদক জয়ের চেয়ে অংশগ্রহণই মুখ্য থাকে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের। যদিও নানা কারণেই এবারের আসর নিয়ে শুরু থেকেই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কারণ বিশ্বজুড়ে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। সরকারি হিসেবে চীনেই মৃত্যু সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে চলতি সপ্তাহের শুরুতে। পাশের দেশ কোরিয়ার অবস্থা বেশ খারাপ। দিনে দিনে যেমন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা ঠিক তেমনি বাড়ছে মৃত্যুর মিছিলও। চীনের পাশাপাশি দেশ জাপানও। সেখানে এরই মধ্যে ধরা পড়েছে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া রোগী। এছাড়া আরো ১৮৮টির মতো দেশে ছড়িয়েছে মরণ ব্যাধিটি। যার প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। 

এদিকে জাপানে আগামী জুলাইয়ে অলিম্পিক শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। বিশ্বের ২০৬টি দেশের প্রায় ১১ হাজার অ্যাথলেট অংশ নেয়ার কথা এবারের অলিম্পিকে। চীন বরাবরই অলিম্পিকের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। এখন তো গত দুই আসরে পদক তালিকার শীর্ষে পৌঁছে গেছে বিশ্ব অর্থনীতির সবচেয়ে শক্তিশালী দেশটি। তবে এবার অলিম্পিক নিয়ে শঙ্কা দেখছেন অনেকেই। করোনার প্রভাবে অলিম্পিক পিছিয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন জাপানের ভারপ্রাপ্ত অলিম্পিক মন্ত্রী সেইকো হাসিমোতো। তবে এই শঙ্কা উড়িয়ে দিলেন আন্তর্জাতিক অলিম্পিক সংস্থার (আইওসি) প্রেসিডেন্ট থমাস ব্যাচ। টোকিওতে ২০২০ সালে অলিম্পিক গেমস আয়োজন করার বিষয়ে আমরা বদ্ধপরিকর’। 

অলিম্পিকের জন্য প্রস্তুত হতে অ্যাথলেটদের অনুশীলন করে যাওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। পরে আইওসির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, টোকিওতে নির্ধারিত সময়েই সফলভাবে এবারের অলিম্পিক আয়োজন করতে চান তারা। এই মুহূর্তে আইওসির হাতে প্ল্যান ‘বি’ নেই। এদিকে জাপান সরকার ও আইওসি খতিয়ে দেখেছে নির্ধারিত সময়ে অলিম্পিক শুরু না হলে বিশাল অঙ্কের লোকসানে পড়তে হবে। 

বাড়তে বাড়তে ইতোমধ্যেই অলিম্পিকের বাজেট ১.৩০ ট্রিলিয়ন ইয়েন ছাড়িয়ে গেছে। ফলে জাপান সরকারও খুব করেই চাইছে নির্ধারিত সময়েই শুরু হোক বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ক্রীড়া আসর। জাপানে এই মুহূর্তে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা হাজার পেরিয়ে গেছে। দিনে দিনে আক্রান্তের সংখ্যা তেমন না বাড়লেও কোনোভাবেই কমছে না আতঙ্ক, যা সবদিক থেকেই পিছিয়ে দিচ্ছে পুরো দুনিয়াকে। বাংলাদেশেও এরই মধ্যে কয়েকটি আন্তর্জাতিক আসর স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি আরো কয়েকটি আসর যেখানে বাংলাদেশ অংশ নেয়ার কথা ছিল সেগুলো স্থগিত করা হয়েছে। এই যেমন এশিয়ান ভারোত্তোলন চ্যাম্পিয়নশিপ হওয়ার কথা ছিল কাজাখস্তানে। ভেন্যু পাল্টে সেটি উজবেকিস্তানে হওয়ার কথা থাকলেও গত সপ্তাহে সেটিও স্থগিত করা হয়েছে। এই আসরকে বাতিল বলা হলেও খুব বেশি বাড়িয়ে বলা হবে না। 

তবে অলিম্পিক নিয়ে বাংলাদেশ এসব ভাবনা ভাবতে চায় না। অংশগ্রহণের লক্ষ্যেই নিজেদের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে সবার আগের নামটি রোমান সানার। তার সঙ্গে টোকিও যাওয়ার চেষ্টায় থাকাদের অপেক্ষা বাড়ছে। জাপানের রাজধানী টোকিওতে আগামী ২৪ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে এবারের আসর। 

তীরন্দাজ রোমান সানা ছাড়াও সাতটি ডিসিপ্লিনে আরো বেশ ক’জন বাংলাদেশি ক্রীড়াবিদের অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। যাদের নাম পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিনের বিশ্ব ফেডারেশনের কাছে। এখনো চূড়ান্ত হয়নি অংশগ্রহণের তালিকা।

প্রতিবারই আসর শুরুর এক মাসেরও বেশি সময় আগে অংশগ্রহণকারীদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়ে থাকে। এবারো তেমনটি করা হবে বলে জানা গেছে। এবার যারা খেলবেন আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির বদান্যতায় ওয়াইল্ড কার্ডের মাধ্যমে। এর বাইরে অলিম্পিক খেলার আলোচনায় রয়েছেন আর্চারিতে ইতি খাতুন, সোমা বিশ্বাস ও বিউটি রায়- এই তিন তীরন্দাজের মধ্যে নেপাল এসএ গেমসে ইতি খাতুন তিনটি, সোমা বিশ্বাস দুটি ও শ্যামলী রায় একটি স্বর্ণপদক জেতেন। এদের মধ্য থেকে যেকোনো একজন ওয়াইল্ড কার্ড পেতে পারেন। কারাতে খেলার জন্য আন্তর্জাতিক কারাতে ফেডারেশনে পাঠানো হয়েছে হুমায়রা আক্তার অন্তরার নাম। নেপাল এসএ গেমসে একটি করে স্বর্ণ, রুপা ও ব্রোঞ্জ জিতেছেন অন্তরা। অলিম্পিকের জন্য তাই এই কারাতকেই বেছে নিয়েছেন কর্মকর্তারা। বক্সিংয়ের জন্য নাম পাঠানো হয়েছে মোহাম্মদ রবিনের। এসএ গেমসে ভারতের অন্যতম সেরা বক্সারের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন তিনি। মূলত লড়াই করার প্রচণ্ড মানসিকতার কারণেই রবিনকে বেছে নেয়া হয়েছে। 

এর বাইরে শুটিং থেকে আবদুল্লাহ হেল বাকি ও সৈয়দা আতকিয়া হাসান দিশার নাম পাঠিয়েছে শুটিং স্পোর্টস ফেডারেশন। তবে বিশ্ব অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) থেকে স্কলারশিপ প্রোগ্রামে থাকা চার শুটার শাকিল আহমেদ, রিসালাতুল ইসলাম, উম্মে জাকিয়া সুলতানা ও আনোয়ার হোসেনের নামও আমলে রেখেছে টোকিও অলিম্পিক কমিটি। এখান থেকে একজন কিংবা দু’জন শুটার ওয়াইল্ড কার্ড পেতে পারেন। 

এদিকে আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন (আইএএএফ) মাদার ডিসিপ্লিন হিসেবে পরিচিত অ্যাথলেটিক্সে মাত্র একটি কোটা দিতে চায় বাংলাদেশকে। যদিও আরেকটি কোটার জন্য ইতোমধ্যে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) মাধ্যমে আইএএএফের কাছে আবেদন করেছে বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন। 

জানা গেছে, একটি বা দুটি কোটা পেলেও সেখানে জায়গা হবে ১০০, ২০০ কিংবা ৪০০ মিটার স্প্রিন্টের অ্যাথলেটদের। সাঁতারে নাম পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই এখন। কারণ বিশ্ব সাঁতার ফেডারেশন (ফিনা) আয়োজিত ওয়ার্ল্ড সুইমিং চ্যাম্পিয়নশিপে যারা অংশ নিয়েছেন, তাদের মধ্য থেকেই কোটা দেবে ফিনা। ওয়ার্ল্ড সুইমিং চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছেন মাহফিজুর রহমান সাগর, আরিফুল ইসলাম ও জুনাইনা আহমেদ। এদের মধ্য থেকেই অলিম্পিকের কোটা দেবে ফিনা বলে জানা গেছে। 

সব মিলিয়ে যারা এখনো অপেক্ষায় রয়েছেন তাদের অপেক্ষাটা কতটা দীর্ঘ হবে কিংবা কে কে সুযোগ পাবে সেটি এখন দেখার বিষয়।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫