Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

খেলোয়াড় সংকট নিরসনে বাফুফের অভিনব উদ্যোগ

Icon

আহসান হাবীব সুমন

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২৩, ১০:০৯

খেলোয়াড় সংকট নিরসনে বাফুফের অভিনব উদ্যোগ

বাফুফে ভবন। ছবি: সংগৃহীত

সদ্যই শেষ হয়েছে দেশের ঘরোয়া ফুটবল মৌসুম। ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে আগামী মৌসুমের দলবদলের আনুষ্ঠানিকতা। যা শেষ হবে ১৮ অক্টোবর। অতীতের মতো ফুটবলের দলবদল নিয়ে ক্লাব কর্মকর্তা আর সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস-উৎকণ্ঠা এখন আর কাজ করে না। কিন্তু পাঁড় ভক্তদের কাছে এখনো ফুটবলের দলবদল একেবারে গুরুত্বহীন হয়ে যায়নি। বিগত মৌসুমে বসুন্ধরা কিংস, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব কিংবা ঢাকা আবাহনী ক্রীড়া চক্র বাদ্যযন্ত্র আর ঘোড়ার গাড়িসহ সমর্থকদের নিয়ে যেভাবে খেলোয়াড় নিবন্ধনের আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিয়েছে, তাতে কিছুটা হলেও পাওয়া গেছে পুরনো দিনের জৌলুস।

দলবদল সামনে রেখে ইতোমধ্যে ক্লাবগুলো নিজেদের গোছাতে শুরু করেছে। বরাবরের মতো বসুন্ধরা কিংস গড়তে চলেছে তারকাখচিত দল। জাতীয় দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড় দেখা যাবে কিংসের তাঁবুতে। আনিসুর রহমান জিকো, তারিক কাজী, বিশ্বনাথ ঘোষ, তপু বর্মণ, সোহেল রানা, মতিন মিয়া, রাকিব হোসেন, শেখ মোরসালিন, সাদউদ্দিনসহ পুরনো স্কোয়াডের সেরাদের ধরে রাখছে করপোরেট ক্লাবটি। সঙ্গে যোগ হচ্ছে আবাহনীর সোহেল রানা, মোহাম্মদ হৃদয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের আমিনুর রহমান সজীব, ফর্টিস এফসির রফিকুল ইসলাম। সব মিলিয়ে দেশি খেলোয়াড় সংগ্রহে বসুন্ধরাকে টেক্কা দেওয়ার মতো কেউ নেই।

ফুটবলে বসুন্ধরা কিংসের আবির্ভাব উল্কার মতোই। মাত্র এক দশক আগে, ২০১৩ সালে ক্লাবটির জন্ম। পাইওনিয়ার লিগ হয়ে পেশাদার লিগে উত্তরণে খুব বেশি সময় নেয়নি দলটি। ২০১৮-১৯ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে অভিষেকের পর টানা চারবার শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়েছে বসুন্ধরা। দেশের কোনো পর্যায়ে টানা চার মৌসুম শিরোপা জয়ের রেকর্ড নেই কারও। একটা সময় দেশের ফুটবলে রাজত্ব করেছে মোহামেডান ও আবাহনী। টিম বিজেএমসি, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্ররা মাঝে মাথাচাড়া দিয়েছে। কিন্তু স্থায়িত্ব পায়নি তাদের সাফল্য। বর্তমানে মোহামেডানও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে শামিল। যদিও এক দশক শিরোপাশূন্য থাকা মোহামেডান বিগত মৌসুমে ঘরে তুলেছে ফেডারেশন কাপ। কিন্তু বসুন্ধরার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা তাদের পক্ষে কার্যত অসম্ভব।

বসুন্ধরা কিংসের দাপটে হাতছাড়া হয়ে গেছে ঢাকা আবাহনীর রাজত্ব। পেশাদার লিগের সর্বাধিক ছয়বারের চ্যাম্পিয়নরা বিগত মৌসুমে কোনো শিরোপা পায়নি। নতুন মৌসুমে আবাহনীর তিন খেলোয়াড় বাগিয়ে নিয়েছে বসুন্ধরা। ক্ষতিপূরণে আবাহনী দলে ভেড়াচ্ছে পুলিশ এফসির মো. রবিউল হাসান, শেখ রাসেলের মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও মোহামেডানের মেহেদি হাসানকে। ২০১৪-১৫ মৌসুমের পর লিগ শিরোপা জিততে পারেনি শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। আগামী মৌসুমে তারা মাঝারি মানের দল গঠন করতে চলেছে। ইতোমধ্যে ঢাকা আবাহনীর ফয়সাল আহমেদ ফাহিমকে চুক্তিবদ্ধ করেছে ক্লাবটি। ক্লাব সূত্রে জানা গেছে, যশোরের শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমি থেকে বেশ কয়েকজন ফুটবলারকে দলে ভিড়িয়েছে তারা।

মোহামেডান ঢাকার ফুটবলের অন্যতম সফল দল। কিন্তু কখনো পেশাদার লিগের শিরোপা পায়নি। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিসহ নানা ঘটনায় মাঝে মোহামেডান ছিল বিপর্যস্ত। বর্তমানে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে সাদাকালো শিবির। কিন্তু বসুন্ধরা কিংবা আবাহনীর তুলনায় মোহামেডানের আর্থিক সামর্থ্য কম। তাই তারুণ্যনির্ভর দলই ভরসা। বসুন্ধরার মাসুক মিয়া জনিকে দলে ভিড়িয়েছে বলে জানা গেছে মোহামেডানের ক্লাব সূত্রে।

বর্তমানে দেশে ফুটবলারের রয়েছে দারুণ সংকট। তারকা খেলোয়াড় যারা আছে তাদের ঠিকানা অবধারিতভাবে বসুন্ধরা। আর্থিক সামর্থ্যে বসুন্ধরার সঙ্গে কেউ টেক্কা দিতে পারছে না। দেশের ফুটবল ছাপিয়ে এশিয়ান স্তরে বসুন্ধরা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার নেশায় মত্ত। বসুন্ধরা ফুটবলের দলবদলের বাজার অস্থিতিশীল করছে, অভিযোগ অনেক ক্লাবের। তারা প্রাপ্যর চেয়ে বেশি অর্থ দিয়ে কিনছে খেলোয়াড়, দাবি ক্লাবগুলোর। এটা তারা করতেই পারে, আর খেলোয়াড়রা অর্থের জন্য খেলেন। তবে সমস্যা হয়েছে মোহামেডানসহ আর্থিক সমস্যায় থাকা ক্লাবগুলোর। নামে ‘পেশাদার লিগ’ হলেও ক্লাবগুলোর বেশিরভাগের নিজস্ব কোনো একাডেমি নেই। তাই খেলোয়াড় তৈরির ভরসা বাফুফে এলিট একাডেমি, বিকেএসপি আর যশোরের শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমির মতো প্রতিষ্ঠান। গত মৌসুমে লিগে এলিট একাডেমি থেকে ফুটবলার নিয়েছিল মোহামেডান। বাফুফের সঙ্গে সমঝোতায় নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকে একাডেমির ফুটবলাররা খেলেছেন।

আসন্ন মৌসুমে মোহামেডান, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ও শেখ রাসেল বাফুফের কাছে এলিট একাডেমির খেলোয়াড় চেয়েছে। সুযোগ বুঝে বাফুফে সরাসরি চুক্তিতে যাচ্ছে না কোনো ক্লাবের সঙ্গে। বরং ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের আদলে একাডেমির খেলোয়াড়দের নিলামে তোলার অভিনব সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা। রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে তরুণ ফুটবলারদের নিলামে অংশ নিতে পারবে যে কোনো ক্লাব। বেঁধে দেওয়া হবে ভিত্তিমূল্য। যার একটা অংশ পাবে বাফুফে। ২০২১ সালে শুরু হওয়া বাফুফের এলিট একাডেমিতে এখন পর্যন্ত ৬৩ জন ফুটবলার রয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে ২০ জন ফুটবলার উঠতে পারেন নিলামে।

শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র তারকাশূন্য হয়ে পড়ছে জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া, গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা, মিডফিল্ডার মোহাম্মদ ইব্রাহিম, ডিফেন্ডার ইয়াসিনদের হারিয়ে। তারা ইতোমধ্যে ফর্টিস এফসি থেকে দলে নিয়েছে জাতীয় দলের গোলরক্ষক মিতুল মারমা, রাইটব্যাক শাহিন মিয়াকে। ফর্টিসের নিজস্ব একাডেমি আছে। তারা খেলোয়াড় তৈরির চেষ্টায় আছে। এর বাইরে পুলিশ এফসি, চট্টগ্রাম আবাহনী, রহমতগঞ্জ এবং নবাগত গোপালগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব এবং ব্রাদার্স ইউনিয়ন তরুণদের দিকেই চোখ রাখছে। বাফুফের নিলামে তারাও অংশ নেবে। তাতে একাডেমির তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে যে কাড়াকাড়ি হবে, সন্দেহ নেই। বাফুফেও পাবে বাড়তি আয়ের পথ।

আগামী মৌসুমে প্রতিটা ক্লাব ছয়জন করে বিদেশি খেলোয়াড় রেজিস্ট্রেশন করাতে পারবে। যার মধ্যে একজন হতে হবে এএফসি সদস্যভুক্ত দেশের। দেশের ঘরোয়া ফুটবলের নতুন মৌসুম শুরু হচ্ছে আগামী ২৭ অক্টোবর থেকে। স্বাধীনতা কাপের মধ্য দিয়ে শুরু হবে নয়া মৌসুম। যেখানে অংশ নেবে ১৪টি দল। তবে এবার বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি দেওয়া হবে। যদি তারা দল চায়, তাহলে দিতে পারবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫