
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ছবি: সংগৃহীত
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো; নিঃসন্দেহে ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। কিন্তু বিগত দুটি মৌসুম কেটেছে নিদারুণ ব্যর্থতায়। আন্তর্জাতিক কিংবা ক্লাব পর্যায়ে কোনো শিরোপা জিততে পারেননি; যা তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বিরল ঘটনা। ব্যক্তিগতভাবেও খেলার মাঠে ক্রমশ যেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন। অনেকেই আবার বয়সের ভারে ন্যুব্জ রোনালদোর ক্যারিয়ারের শেষটাও দেখে ফেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু না, রোনালদো ফুরিয়ে যাননি। ৩৮ বছর বয়সে টগবগে যুবকের মতোই তিনি ফিরে এসেছেন। আল নাসরকে প্রথমবারের মতো এনে দিয়েছেন আরব ক্লাব চ্যাম্পিয়নস কাপ জয়ের স্বাদ।
২০২৩ সালের আরব চ্যাম্পিয়নস কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল সৌদি আরবের দুই চির-প্রতিদ্বন্দ্বী আল নাসর ও আল হিলাল। কিং ফাহাদ স্টেডিয়ামে হাড্ডাহাড্ডি ১২০ মিনিটের লড়াইয়ে আল নাসর জিতেছে ২-১ গোলের ব্যবধানে। ফাইনালে জোড়া গোল করেন রোনালদো। পুরো টুর্নামেন্টে ছয় গোল করে পর্তুগিজ মহানায়ক জিতেছেন সেরা গোলদাতার ‘গোল্ডেন বুট’।
আরব চ্যাম্পিয়নস কাপ আল নাসর আর সৌদির ফুটবলে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সন্দেহ নেই। আরব ক্লাব চ্যাম্পিয়নস কাপ সৌদি ঘরোয়া টুর্নামেন্ট নয়। এটি আরব ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত আন্তর্জাতিক ক্লাব আসর। ২০২৩ সালে যা অনুষ্ঠিত হয়েছে কিং সালমান আরব ক্লাব চ্যাম্পিয়নস কাপ নামে। এতে অংশ নেয় আফ্রিকা আর মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশের সেরা ক্লাবগুলো। ১৯৮১-৮২ মৌসুমে প্রথম মাঠে গড়ায় আসরটি। বিগত দুটি মৌসুম করোনা মহামারির কারণে আসর বসেনি। এবার আরব কাপ শুরু হয়েছিল মার্চে। আসরে অংশ নেয় আফ্রিকা আর মধ্যপ্রাচ্যের ৩৭টি ক্লাব। যাদের মধ্যে দুই ফাইনালিস্ট আল নাসর ও আল হিলালসহ ১০টি দল সরাসরি অংশ নেয় চূড়ান্ত পর্বে। বাকি ৬ দলকে পেরিয়ে আসতে হয়েছে বাছাই পর্বের বাধা। ১৬ দলকে চার গ্রুপে ভাগ করে শুরু হয় চূড়ান্ত পর্ব ।
আরব কাপের শিরোপা সৌদি আরবের ঘরোয়া ফুটবলের জন্যও হতে পারে নতুন মাইলফলক। সম্প্রতি আরবের ক্লাব ফুটবলে বসেছে বিশ্বতারকাদের মেলা। রোনালদো, করিম বেঞ্জেমা, সাদিও মানে, রবার্তো ফির্মিনহো, রুবেন নেভেস, রিয়াদ মাহরেজদের মতো তারকা যোগ দিয়েছেন সৌদির বিভিন্ন ক্লাবে। বিশ্ব তারকাদের উপস্থিতিতে সৌদির ঘরোয়া ফুটবল লাভবান হবে সন্দেহ নেই। কিন্তু তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অন্যান্য মহাদেশের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারবে কিনা সেই প্রশ্ন রয়ে গেছে। আপাতত আরব কাপের ‘অল সৌদি ফাইনাল’ আফ্রিকা মহাদেশকে টেক্কা দিয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
আরব কাপ রোনালদোর ক্যারিয়ারেও যোগ করেছে নতুন মাত্রা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আল নাসর ক্লাবে নাম লেখান পর্তুগিজ মেগাস্টার। মৌসুমের অর্ধেকটা খেলে পাননি কোনো শিরোপার দেখা। তার উপস্থিতিতে সৌদি আরবের কিংস কাপ আর সুপার কাপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয় আল নাসর। পেশাদার লিগেও রানার্স আপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় ক্লাবটিকে । যা হতাশ করেছে খোদ সিআর-সেভেনকে। নতুন মৌসুমে আল নাসরকে শিরোপা এনে দেওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার ঘোষণা আকারে দিয়ে রেখেছিলেন তিনি। কথা রেখেছেন রোনালদো। আল নাসরকে জিতিয়েছেন আরব কাপ। নিজেও কাটিয়েছেন শিরোপা খরা। ২০২০-২১ মৌসুমে জুভেন্টাসের হয়ে কোপা ইতালিয়া ছিল তার শেষ শিরোপা। শেষবার সেরা গোলদাতা হয়েছিলেন ২০২০-২১ মৌসুমের সিরি ‘এ’ আসরে। পরবর্তী সময়টা গেছে নিদারুণ ব্যর্থতায়। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আর পর্তুগালের হয়ে কাতার বিশ্বকাপে নিজের ছায়া হয়ে কাটিয়েছেন। জায়গা হারিয়েছিলেন মূল একাদশে। সেই রোনালদো দাপটের সঙ্গে ফিরে এলেন আরব ক্লাব চ্যাম্পিয়নস কাপে।
রোনালদোর ভাণ্ডারে আছে পাঁচটি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি। সদ্য যোগ হয়েছে আফ্রিকা আর এশিয়া মহাদেশ মিলিয়ে গঠিত আরব বিশ্বের সেরার ট্রফি। রোনালদোর পরবর্তী লক্ষ্য আরব পেশাদার লিগ আর এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা। এশিয়ার সেরা ক্লাব কাপ ট্রফি জিততে পারলে তিনিই হবেন তিন মহাদেশের সেরা ক্লাব আসরের শিরোপাজয়ী ইতিহাসের প্রথম ফুটবলার। সেটা তিনি করে দেখাতে পারবেন কিনা বোঝা যাবে মৌসুম শেষে।