Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

মার্কিন মুল্লুকে মেসির নতুন ইতিহাস

Icon

আহসান হাবীব সুমন

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১৪:০৯

মার্কিন মুল্লুকে মেসির নতুন ইতিহাস

লিওনেল মেসি। ছবি: সংগৃহীত

ইন্টার মিয়ামি। ২০১৮ সালে জন্ম নেওয়া দলটি কখনো শিরোপা জয় দূরে থাক, ব্যস্ত থেকেছে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে। কিন্তু সেই দলটি বদলে গেছে লিওনেল মেসি নামের ‘জিয়ন কাঠি’র ছোঁয়ায়। মেসির সান্নিধ্যে এসেই ইন্টার মিয়ামি পেয়ে গেছে নিজেদের ইতিহাসের প্রথম ট্রফি জয়ের স্বাদ। সেই সঙ্গে ফুটবল ইতিহাসে ট্রফি সংখ্যায় সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন মেসি নিজেও।

২০২৩ সালের আমেরিকান লিগস কাপ জিতে নিয়েছে ইন্টার মিয়ামি। ক্লাবের ইতিহাসে এই সাফল্য রূপকথা হিসেবে বিবেচিত হবে। যার একক কৃতিত্ব মেসির। ফাইনালসহ পুরো টুর্নামেন্টে ১০ গোল করে আর্জেন্টাইন খুদে জাদুকর জিতেছেন গোল্ডেন বুট এবং টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। 

চলতি বছরের জুলাইয়ে ইন্টার মিয়ামিতে নাম লেখান মেসি। ক্যারিয়ারের ১৭টি মৌসুম কেটেছে বার্সেলোনায়। পরবর্তী দুই মৌসুম পিএসজিতে। পেশাদার ক্যারিয়ারের ১৯ বছরে মেসির পাওয়ার কিছু বাকি নেই। ব্যক্তিগতভাবে রেকর্ড সাতটি ব্যালন ডি’অর আর তিনবার ফিফার বর্ষসেরা নির্বাচিত হয়েছেন। ইউরোপের সেরা গোলদাতার গোল্ডেন শ্যু জিতেছেন রেকর্ড ছয়বার। স্পেনের সেরা গোলদাতার ‘পিচিচি’ দখলে নিয়েছেন সর্বোচ্চ আটবার। ক্লাব পর্যায়ে চারটি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগসহ শিরোপা সংখ্যা ৪৪টি। যার মধ্যে আর্জেন্টিনাকে জিতিয়েছেন ফিফা বিশ্বকাপ, কোপা আমেরিকা আর লা ফিনালিসিমা। সব মিলিয়ে শিরোপা সংখ্যায় মেসি সর্বোচ্চ আসনে আসীন। ৪৩টি ট্রফি জয় করা ব্রাজিলিয়ান দানি আলভেজ পড়ে গেছেন পেছনে।

২০২২ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ জয়ের পরেই পূর্ণতা পেয়েছে মেসির ক্যারিয়ার। তাই তিনি ইউরোপের সর্বোচ্চ ক্লাব ফুটবলে আগ্রহ হারিয়েছেন। ফুটবল থেকে নতুন করে পাওয়ার কিছু নেই। ৩৬ বছরের মেসি ক্যারিয়ারের বাকি সময়টা উপভোগের ইচ্ছায় যোগ দেন ইন্টার মিয়ামিতে। তবে সেখানে মেসিকে দেখে অনেকেই নাক সিটকেছেন। ভক্তরা কিছুটা শঙ্কা বোধ করেছিলেন। নাক সিটকাবার কারণ, ইউরোপের ফুটবলের তুলনায় মার্কিন ফুটবলের অবস্থান। খোদ মার্কিন মুল্লুকেই জনপ্রিয়তায় ফুটবলের অবস্থান চতুর্থ। বেসবল, রাগবি আর বাস্কেটবলে বুঁদ হয়ে থাকা মার্কিন ক্রীড়ামোদীরা আগ্রহী নয় ফুটবল নিয়ে। শঙ্কার কারণ, মেজর লিগ সকারে ইন্টার মিয়ামির দুরবস্থা। চলতি বছর মেজর লিগ সকারে ১৫ দলের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে ইন্টার মিয়ামি। ভাবা যায়, মেসি যোগ দেওয়ার আগে টানা ১১ ম্যাচ জয়হীন ছিল ইন্টার মিয়ামি? নিজেদের হারিয়ে খুঁজছিল দলটি। এমন অবস্থায় মেসি একা ধুঁকতে থাকা দলকে কতটুকু টেনে নিতে পারবেন, আশঙ্কা ছিল ভক্তদের মনে। কিন্তু তিনি যে মেসি। অসম্ভবকে সম্ভব করে একাই দলকে এনে দিয়েছেন ক্লাবটির ইতিহাসের প্রথম শিরোপা। 

আমেরিকার লিগ কাপের ফাইনালে ন্যাশভিল স্পোর্টিং ক্লাবের মুখোমুখি হয়েছিল ইন্টার মিয়ামি। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের ম্যাচ ১-১ গোলে অমীমাংসিতভাবে শেষ হয়। ম্যাচের ২৩ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে মেসি দূরপাল্লার শটে করেন আসরে নিজের দশম গোল; যা ৫৭ মিনিটে ফিরিয়ে দেন ন্যাশভিলের ফাফা পিকাল্ট। খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেও অবিশ্বাস্য নাটক। দুই দলের ১১ জন করে খেলোয়াড় পেনাল্টি শট নেন। ফলাফল ইন্টার মিয়ামির পক্ষে ১০-৯। ম্যারাথন শুট আউটের প্রথম শটেও গোল করেছিলেন মেসি।

সির উপস্থিতিতে ইন্টার মিয়ামির খেলা যেন আমূল পাল্টে গেছে। জর্দি আলবা আর সার্জিও বুস্কেটসের মতো পুরনো সঙ্গীদের নিয়ে এসেছেন তিনি। যা তার আস্থা বাড়িয়েছে। মেসিকে পেয়ে রবার্ট টেলর আর জোসেফ মার্টিনেজরা এখন উজ্জীবিত। তারাও নিয়মিত গোল করছেন। এছাড়া কোচ হিসেবে আর্জেন্টিনার অভিজ্ঞ জেরার্ডো মার্টিনো শাপে-বর হয়েছে মেসি আর ইন্টার মিলানের জন্য। লিগ কাপে টানা জয়ে ট্রফি নিয়ে উল্লাস প্রমাণ করেছে ইন্টার মিয়ামি এখন অপ্রতিরোধ্য। শুধু তাই না, লিগ কাপের শিরোপা জয়ে ইন্টার পেয়ে গেছে কনকাকাফ চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার টিকিট। বলা যায়, হতদরিদ্র ইন্টার মিয়ামি আমেরিকা মহাদেশের কুলীন সম্প্রদায়ে নাম লিখিয়েছে চোখের পলকে। সেটা অবশ্যই মেসির কল্যাণে। 

মেসির এখনো মার্কিন লিগ সকারে অভিষেক হয়নি। আগামী ২৭ আগস্ট নিউইয়র্ক রেড বুলের বিপক্ষে আমেরিকান লিগে অভিষেক হতে পারে তার। তবে শুধু লিগ কাপে খেলেই মার্কিন ফুটবলকে দারুণভাবে নাড়া দিতে পেরেছেন আর্জেন্টাইন মহানায়ক। ইন্টার মিয়ামির খেলা দেখতে মাঠে আসছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ দর্শক। প্রতিদিন হচ্ছে দর্শকের নতুন রেকর্ড। শুধু মেসির কারণে ইনস্টাগ্রামে ইন্টারের ফলোয়ার ছাড়িয়েছে কয়েক মিলিয়ন। স্পেন, ইংল্যান্ড আর ফ্রান্সসহ সারা দুনিয়ার কোটি কোটি দর্শক লাইভ স্ট্রিমে দেখছে মিয়ামির খেলা। যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা শুধু মেসির কারণে সন্দেহ নেই। ইন্টার মিয়ামির লিগ কাপ জয়ের পর যা বহুগুণ বাড়বে, নিশ্চিত করে বলা যায়।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫