সৌদি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কতটা প্রস্তুত ইউরোপ

আহসান হাবীব সুমন
প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩:১৫

ফাইল ছবি
ফুটবল মানেই ইউরোপ আর ল্যাটিন আমেরিকার দাপট। আন্তর্জাতিক ফুটবলে দুই মহাদেশকে ছাপিয়ে আজতক মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি কেউ। ক্লাব ফুটবলে ইউরোপের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার সামর্থ্য দেখাতে পারেনি খোদ ল্যাটিন আমেরিকা। অথচ সেই ইউরোপকে কাঁপিয়ে দিয়েছে সৌদি আরব। ২০২৩ সালে সৌদি ক্লাবগুলো ভিড়িয়েছে বিশ্বের প্রায় সকল বড় তারকা ফুটবলারকে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, নেইমার জুনিয়র, করিম বেঞ্জেমা, এনগোলো কন্তে, রবার্টো ফিরমিনহো, সাদিও মানে, রিয়াদ মাহরেজসহ বিশ্বের প্রায় সব প্রতিষ্ঠিত তারকার ঠিকানা এখন সৌদি পেশাদার লিগ। বলা যায়, ইউরোপকে উজাড় করে দিয়ে নিজেদের সমৃদ্ধ করার পথ খুঁজে নিয়েছে সৌদি আরব।
ইউরোপের ধনী আর সেরা ক্লাবগুলোর কাছে সৌদি আরব পরিণত হয়েছে আতঙ্কে। কখন কোন খেলোয়াড়কে তারা ছিনিয়ে নেবে, ঠিক নেই। রুবেন নেভেস আর গ্যাব্রি ভেইগারাও পেট্রো ডলারে আকৃষ্ট হয়ে পাড়ি জমাচ্ছেন সৌদি আরবে। তরুণ খেলোয়াড়দের দিকে সৌদির এই মনোযোগ চিন্তায় ফেলে দিয়েছে ইউরোপের বনেদি ক্লাবগুলোকে।
সৌদির ক্লাব ফুটবলের উত্থানকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন ইউরোপের ফুটবলের শাসক সংস্থা ‘উয়েফা’ সভাপতি আলেকসান্দের চেফেরিন। তার বক্তব্য ছিল, শুধু বয়স্ক তারকাদের নিয়ে সৌদি ঘরোয়া ফুটবলের চেহারা বদলাবে না। তাদের প্রয়োজন তরুণ প্রতিভা আর বিশ্বমানের কোচ। ২৬ বছর বয়সী পর্তুগিজ রুবেন নেভেস আর ২১ বছরের স্প্যানিশ তরুণ ভেইগাকে দলে নিয়ে সৌদি যেন উয়েফা সভাপতির তাচ্ছিল্যের জবাব দিয়েছে। এছাড়া সৌদির বিভিন্ন ক্লাবে এখন কাজ করছেন আর্জেন্টিনার র্যামন দিয়াজ, পর্তুগালের লুইস ক্যাস্ত্রো আর জর্জ হেসুস, সাবেক যুগোস্লাভিয়ার স্লাভেন বিলিচের মতো কোচ। যারা ইউরোপের নামি ক্লাব আর আন্তর্জাতিক ফুটবলে হাত পাকিয়ে এসেছেন।
ইউরোপের ফুটবল সাম্রাজ্য একদিনে গড়ে ওঠেনি। ক্লাব সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে ইউরোপের হাত ধরে। অতীতে চীন, জাপান চেষ্টা করেছে ইউরোপের সাম্রাজ্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চেয়ে পারেনি। তবে সৌদি আরব ক্লাব ফুটবলে যে বিপ্লবের সূচনা করেছে, তা সহসা থামার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং সৌদির দেখানো পথে মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশগুলো চলতে শুরু করলে ইউরোপকে সত্যিকার অর্থেই বিপদে পড়তে হবে। যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি, কাতার আর চীনের বিনিয়োগকারীরা ইউরোপের অনেক বড় ক্লাবের মালিক। তাদের এই বিনিয়োগ ইউরোপের ফুটবলের বিশ্বব্যাপী চাহিদার কারণে। কিন্তু সৌদি আরব এখন নিজেদের ফুটবলের বাজার তৈরিতে মনোযোগ দিয়েছে। মার্কিন ফুটবলের পেছনে দাঁড়িয়ে গেছে অ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠান। ইউরোপকে এখন পড়তে হচ্ছে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে।
তাই ইউরোপকে নতুন করে হিসাব কষতে হচ্ছে। ইউরোপের ভরসা এখন তরুণরা। তরুণ প্রতিভায় এখনো ইউরোপ সমৃদ্ধ। সময়ের সেরা কিলিয়ান এমবাপ্পে, আর্লিং হালান্ড, জুড বেলিংহ্যাম, ভিনিসিয়াস জুনিয়র, মার্কাস রাশফোর্ড, এন্টোনি আর এঞ্জো ফার্নান্দেজরা ইউরোপকে আশা দেখাচ্ছেন। এমবাপ্পে এখন ইউরোপের সবচেয়ে বড় তারকা। পিএসজির হয়ে সর্বশেষ চারটি ফরাসি লিগ ওয়ানে বর্ষসেরা ফুটবলার আর পাঁচটি গোল্ডেন বুট জিতেছেন। একটি বিশ্বকাপ রয়েছে ২৪ বছর বয়সী এ তারকার ভাণ্ডারে। তরুণ খেলোয়াড়দের মধ্যে কিলিয়ান এমবাপ্পে সবচেয়ে ধারাবাহিক। এমবাপ্পেকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত ম্যানচেস্টার সিটির হালান্ড। বিগত মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সেরা গোলদাতা, সেরা খেলোয়াড় আর সেরা উদীয়মান তারকার পুরস্কার জিতেছেন। সিটিজেনদের হয়ে প্রথম মৌসুমেই করেছেন ৫২ গোল। ম্যানসিটির ‘ট্রেবল’ জয়ে বড় অবদান রাখা হালান্ড চলতি বছর ব্যালন ডি’অর পুরস্কারে মেসির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। রিয়াল মাদ্রিদে খেলা ভিনিসিয়াস জুনিয়র ইতোমধ্যেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বড় তারকা হিসেবে। তার সঙ্গে ২০২৩-২৪ মৌসুমে যোগ দিয়েছেন ইংলিশ মিডফিল্ডার বেলিংহ্যাম। বুন্দেস লিগায় মৌসুম সেরা হয়েছেন।
যে কোনো দেশের ঘরোয়া ফুটবলের প্রধান আকর্ষণ তারকা ফুটবলার। ইতালি, ইংল্যান্ড, স্পেন, জার্মানি কিংবা ফরাসি লিগ বনেদিয়ানায় এগিয়ে তারকাসমৃদ্ধ ক্লাবের কারণে। ইতোমধ্যে এমাবাপ্পে, হালান্ড, ভিনিরা তারকাখ্যাতি পেয়েছেন। বেলিংহ্যামরা তারকা হয়ে ওঠার পথে। এখনো ব্যালন ডি’অর আর ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয় ইউরোপিয়ান আসরের পারফর্ম্যান্সভিত্তিক। বিশ্বসেরা ফুটবলার নির্বাচনে যে পয়েন্ট সিস্টেম, তাতে ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগের সঙ্গে অন্যদের পার্থক্য আকাশ-পাতাল। যে কারণে পাঁচ শীর্ষ লিগের বাইরে ইউরোপের অন্যান্য লিগে বেশি গোল কিংবা অতিমানবীয় পারফর্ম্যান্স করেও ফুটবলাররা নির্বাচিত হন না প্রাথমিক সেরার তালিকায়। এটা ইউরোপের বড় সুবিধা। নিকট ভবিষ্যতে এমবাপ্পে, হালান্ড কিংবা ভিনিরা ব্যালন ডি’অর আর ফিফার স্বীকৃতি পেয়ে গেলে তারাই হয়ে উঠবেন ফুটবলের ‘আইকন’। আর ইউরোপ পেয়ে যাবে লড়াইয়ের অক্সিজেন।