
আফগানিস্তান ক্রিকেট দল। ছবি: সংগৃহীত
অংশগ্রহণ: ৩ বার
সেরা সাফল্য: আগের দুই বারই (২০১৫ ও ২০১৯) গ্রুপপর্ব থেকে বাদ
মোট ম্যাচ: ১৫
জয়: ১
হার: ১৪
টানা তৃতীয়বারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে আফগানিস্তান। দলে রয়েছে রশিদ খানের মতো বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিনার। এশিয়া কাপ পর্যন্ত ৯৪ ম্যাচে ১৭২ ওয়ানডে উইকেটের মালিক তিনি। এক দিনের ক্রিকেটে পাঁচটি হাফসেঞ্চুরিও হাঁকিয়েছেন। আইপিএল অভিজ্ঞতায় পরিচিত ভারতীয় কন্ডিশনে রশিদ খান হয়ে উঠতে পারেন দুর্দমনীয়। এ ছাড়া অফ-স্পিনার মুজিব উর রহমান, অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবী দলের বড় সম্পদ।
রহমানুল্লাহ গুরবাজ উইকেট কিপিংয়ের সঙ্গে দলের ব্যাটিং ওপেন করবেন। আইপিএল মাতানো গুরবাজ দলের সেরা ব্যাটার। ২৬ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেই পেয়েছেন ৫ সেঞ্চুরির দেখা। অধিনায়ক হাশমতুল্লাহ শহীদি আর রহমত শাহরা ব্যাট হাতে জ্বলে উঠলে আফগানরা যে কোনও দলের বিরুদ্ধে অঘটন ঘটাতে সক্ষম।
২০২৩ সালে বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের লক্ষ্য অন্তত আইসিসি সহযোগী সদস্য হল্যান্ডের বিপক্ষে জয় । ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে আফগানরা জয় পায় স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে; যা ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৫ ম্যাচে তাদের একমাত্র জয়। ২০২৩ সালে নিজেদের অভিষেক বিশ্বকাপের সাফল্য ছাড়াতে মরিয়া আফগানিস্তান।
আফগানিস্তানের মূলশক্তি স্পিন বোলিং। পেস অ্যাটাকে ফজল হক ফারুকি মূল ভরসা। সঙ্গে আছেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। দীর্ঘদিন পর সুযোগ পেয়েছেন নাভিন উল হক, যিনি ২০২৩ সালের আইপিএলে খেলেছেন লক্ষ্ণৗে সুপার জায়ান্টসে।
২০২২-২৩ মৌসুমে আইসিসি ওয়ানডে সুপার লীগে আফগানিস্তান ছিল সপ্তম স্থানে। সেই কারণেই শ্রীলঙ্কা আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো সাবেক দুই বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নকে টপকে সরাসরি পেয়েছে বিশ্বকাপের টিকিট। বর্তমান আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে তাদের অবস্থান নবম। ২০২২ সালের নভেম্বরে ইব্রাহিম জারদানের সেঞ্চুরিতে আফগানিস্তান ৬০ রানে হারিয়ে দেয় শ্রীলঙ্কাকে। ২০২৩ সালের জুনেও তিন ম্যাচের সিরিজের শুরুতে আফগানিস্তান হারায় লঙ্কানদের; কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিরিজ হেরে যায় ১-২ ব্যবধানে। জুনেই বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে আফগানরা জয় পায় ২-১ ব্যবধানে। বাংলাদেশের মাটিতে প্রথম ম্যাচ হেরে ঘুরে দাঁড়ানো আফগানিস্তানের সিরিজ জয় ছিল দারুণ কৃতিত্বের। তবে এশিয়া কাপে কোন ম্যাচ জিততে পারেনি আফগানিস্তান। তার আগে পাকিস্তানের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে। বিশ্বকাপে নামার আগে টানা পাঁচটি এক দিনের ম্যাচ হারার রেকর্ড সঙ্গী হয়েছে দলটির। যা কিছুটা হলেও মানসিকভাবে পিছিয়ে রাখবে আফগানদের।
বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের প্রথম ম্যাচ বাংলাদেশের বিপক্ষে। ৭ অক্টোবর হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচ।
দলীয় সর্বোচ্চ: ২৮৮, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, হেডিংলিতে ২০১৯ বিশ্বকাপে
দলীয় সর্বনিম্ন: ১২৫, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, কার্ডিফে ২০১৯ বিশ্বকাপে
বিশ্বকাপ দল: হাশমতউল্লাহ শহীদি (অধিনায়ক), রহমানউল্লাহ গুরবাজ (উইকেটরক্ষক), রহমত শাহ, রিয়াজ হাসান, নাজিবউল্লাহ জাদরান, মোহাম্মদ নবী, ইকরাম আলিখিল, আজমতউল্লাহ ওমরজাই, রশিদ খান,আব্দুল রহমান, নূর আহমেদ, মুজিব উর রহমান, ফজল হক ফারুকি ও নাভিন উল হক।
ব্যক্তিগত সেরা ব্যাটিং: সামিউল্লাহ শিনোয়ারি, ৯৬
এ পর্যন্ত দুটি বিশ্বকাপে খেলা আফগানিস্তানের পক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি সামিউল্লাহ শিনোয়ারির দখলে। রেকর্ডটা তিনি গড়েছেন ২০১৫ সালে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপেই, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। প্রথমে ব্যাট করে স্কটল্যান্ড অলআউট হয় ২১০ রানে। ২১১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দলকে ১ উইকেটের নাটকীয় জয় এনে দেওয়ার পথে ৯৬ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন তিনি। তার ইনিংসের গুরুত্ব বোঝাতে একটি তথ্যই যথেষ্ট, ম্যাচে আফগানদের ৭ জন ব্যাটসম্যান আউট হন দুই অঙ্কের নিচে। তার মধ্যে দুজনে মারেন ‘গোল্ডেন ডাক’।
ব্যক্তিগত সেরা বোলিং: মোহাম্মদ নবী, ৪/৩০
এই রেকর্ডটা মোহাম্মদ নবী গড়েছেন ২০১৯ বিশ্বকাপে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, কার্ডিফে। শ্রীলঙ্কাকে ২০১ রানে বেঁধে ফেলার পথে নবী ৯ ওভারে ৩০ রান দিয়ে ৪ উইকেট লাভ করেন। তারপরও অবশ্য শ্রীলঙ্কাই ম্যাচটা জিতেছিল ৩৪ রানে। কারণ, নবীর আফগানিস্তান মাত্র ১৫২ রানেই গুটিয়ে যায়। বল হাতে কীর্তি গড়ার পর ব্যাট হাতেও ২৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন অধিনায়ক নবী; কিন্তু দলের অন্যদের ব্যর্থতায় তার কীর্তিটা হারের বেদনায় ঢেকে যায়। আফগানদের পক্ষে শাপুর জারদানও বিশ্বকাপে একবার ৪ উইকেট নিয়েছেন। তবে ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে রান দিয়েছিলেন ৩৮টি।
হাশমত উল্লাহ শহীদি
মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান, রহমত শাহদের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার থাকার পরও আফগানিস্তান দলের অধিনায়কত্বের ভার হাশমতউল্লাহ শহীদির কাঁধে। ভারত বিশ্বকাপেও আফগানদের নেতৃত্ব দেবেন তিনিই। ২০১৩ সালে অভিষেকের পর এ পর্যন্ত ওয়ানডে খেলেছেন ৬৪টি। খেলেছেন ২০১৯ বিশ্বকাপেও। ইংল্যান্ডের ওই বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচ খেলে করেছিলেন ১৯৭ রান। সাম্প্রতিক সময়ে ফর্মে রয়েছেন। ২০২৩ সালে ১১ ম্যাচ খেলে করেছেন ২৭০ রান। টপ অর্ডার, মিডল অর্ডার-দুই পজিশনেই ব্যাটিং করতে পারেন। আছে নেতৃত্বগুণও। ২০২২ সাল থেকে ওয়ানডে অধিনায়কত্ব করে আসা হাশমতউল্লাহ শহীদি ২৩টি ওয়ানডেতে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার ১১টিতে জয় উপহার দিয়েছেন দলকে, হেরেছেনও ১১টিতে। বাকি ম্যাচটিতে ফল হয়নি। ভারত বিশ্বকাপে আফগানিস্তান কতটা সফল হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করবে অধিনায়ক শহীদির পারফরম্যান্স এবং দল পরিচালনার ওপর।
জোনাথন ট্রট
২০২২ সালের জুলাইয়ে আফগানিস্তান দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নেন জোনাথন ট্রট। ইংল্যান্ডের গ্রাহাম থর্পের জায়গায় তাকে নিয়োগ দেয় আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি)। ইংল্যান্ড জাতীয় দলের সাবেক কোচ ট্রট অনূর্ধ্ব-১৯ দলের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের ব্যাটিং কোচ হিসেবে দেখা গেছে ৪১ বছর বয়সী সাবেক এই ডানহাতি ব্যাটারকে।
ট্রট ইংল্যান্ডের হয়ে ৫২ টেস্টে করেছেন ৩৮৩৫ রান। ৯টি সেঞ্চুরির (২টি ডাবল) পাশাপাশি আছে ১৯টি ফিফটি। ২০১০-১১ মৌসুমে ইংল্যান্ডকে অ্যাশেজ জেতানোর অন্যতম নায়ক ছিলেন তিনি। ওয়ানডে ক্রিকেটেও দারুণ সফল ট্রট। ২৮১৯ রান করেছেন ৬৮টি ওয়ানডে ম্যাচে। ৪টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি রয়েছে ২২টি হাফ-সেঞ্চুরি।
আফগানিস্তান দলে ট্রটের সহকারী হিসেবে কাজ করছেন রাইস আহমাদজাই। তিনি রাশিদ খানদের দলের ব্যাটিং কোচও। এ ছাড়া বোলিং কোচের দায়িত্ব পালন করছেন হামিদ হাসান আর ফিল্ডিং কোচ মির্জা শাফি।