Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

বিশ্বকাপ ক্রিকেট দল পরিচিতি: নেদারল্যান্ডস

Icon

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১৪:০৪

বিশ্বকাপ ক্রিকেট দল পরিচিতি: নেদারল্যান্ডস

নেদারল্যান্ডস ক্রিকেট দল। ছবি: সংগৃহীত

অংশগ্রহণ: ৫ বার
সেরা সাফল্য: আগের ৪ বারই (১৯৯৬, ২০০৩, ২০০৭ ও ২০১১) গ্রুপপর্ব থেকে বাদ
মোট ম্যাচ: ২০
জয়: ২
হার: ১৮

২০২৩ সালের বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে একমাত্র আইসিসি সহযোগী সদস্য নেদারল্যান্ডস। বিশ্বকাপের ১০ দলের মধ্যে তাদের মর্যাদা ‘আন্ডার ডগ’; কিন্তু পূর্ণ আইসিসি সদস্য আফগানিস্তান, বাংলাদেশ আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ডাচদের জয়ের রেকর্ড আছে। নেদারল্যান্ডস চমক দেখিয়েছে আইসিসি বিশ্বকাপ বাছাইয়ে। ১০ দলের বাছাইয়ের ‘এ’ গ্রুপে ডাচদের সঙ্গী ছিল জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নেপাল আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শুরুতেই স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের কাছে পরাজয়। পরবর্তী যুক্তরাষ্ট্র আর নেপালকে হারিয়ে প্রত্যাশিত জয়ের দেখা মেলে; কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নেদারল্যান্ডস যা করেছে, সেটা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। হারারেতে অনুষ্ঠিত ম্যাচের শুরুতে ক্যারিবিয়ানরা ৫০ ওভারে স্কোরবোর্ডে জমা করে ৬ উইকেটে ৩৭৪ রান। রানের পাহাড় টপকে ম্যাচ জিতবে নেদারল্যান্ডস, এমনটা ছিল ভাবনার বাইরে; কিন্তু ডাচরা ঠিকই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিল। তবে তার আগে ঘটেছিল ‘টাই’ নাটকের ঘটনা। তেজা নিদামানুরুর ৭৬ বলে ১১১, অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসের ৪৭ বলে ৬৭ রানের ঝকঝকে ইনিংস। ডাচরাও ঠিক ৩৭৪ রান করে! ম্যাচ ‘টাই’। 

সুপার ওভারে উইন্ডিজের পক্ষে হোল্ডারের এক ওভারে ৩০ রান তোলেন ডাচ ব্যাটার লোগান ভ্যান বিক। ৬ বলেই বাউন্ডারি, ৩ ছয় ও ৩ চার! বলওকরেন এই ভ্যান বিকই। তার ওভারটি ৩১ রানের লক্ষ্যে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২ উইাকেটে করতে পার মাত্র ৮ রান! শ্রীলঙ্কার কাছে হারলেও ওমান আর স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে ওঠে ফাইনালে। জায়গা করে নেয় ২০২৩ বিশ্বকাপে। ফাইনালে অবশ্য শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে রানার্স-আপ হিসেবেই এসেছে বিশ্বকাপে।

ওয়ানডে বিশ্বকাপে পঞ্চমবারের মতো অংশ নিচ্ছে নেদারল্যান্ডস। বিশ্বকাপে নামিবিয়া আর স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের রেকর্ড আছে ডাচদের। ভারতের মাটিতে ডাচরা বিশ্বকাপ খেলবে স্কট এডওয়ার্ডসের নেতৃত্বে। বাছাইপর্বে না থাকা অভিজ্ঞ রোলফ ফন ডার মারউই ও কলিন আকারম্যানকে রাখা হয়েছে স্কোয়াডে। এ ছাড়া ৩৫ বছর বয়সে জাতীয় দলে প্রথম ডাক পেয়েছেন সায়ব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেচট। ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেছিলেন তিনি।

২০১১ সালের পর ওয়ানডে বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া হল্যান্ড দলের অন্যতম ভরসা ম্যাক্স ও’দাউদ। এই ওপেনার দেশের হয়ে খেলেছেন তিনটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। অল-রাউন্ডার বাস ডি লিডের পারফর্মেন্সের ওপর নির্ভর করছে ডাচ সাফল্য। টুর্নামেন্টের ‘আন্ডার-ডগ’ হিসেবে ডাচরা থাকবে চাপহীন। রয়েছে অঘটন ঘটানোর পুরোনো অভ্যাস। তাই তাদের হালকা করে দেখার সুযোগ নেই।

দলীয় সর্বোচ্চ: ৩১৪/৪, নামিবিয়ার বিপক্ষে, ব্লুমফন্টেইনে ২০০৩ বিশ্বকাপে 

দলীয় সর্বনিম্ন: ১১৫, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, দিল্লিতে ২০১১ বিশ্বকাপে

বিশ্বকাপ দল: স্কট এডওয়ার্ডস (অধিনায়ক), ম্যাক্স ও’ডাউড, বাস ডি লিড, বিক্রম সিং, তেজা নিদামানারু, পল ভ্যান মিক্রিন, কলিন আকারম্যান, রোলফ ফন ডার, মারউই লোগান, ফন ভিক, আরিয়ান দত্ত, রায়ান ক্লেইন, ওয়েসলি বারেসি, সাকিব জুলফিকার, শারিজ আহমদ, সায়ব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেচট।

ব্যক্তিগত সেরা ব্যাটিং: ক্লাস-ইয়ান ফন নুরতউইক, ১৩৪*

নেদারল্যান্ডসের সাবেক এই মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা দারুণ। ক্যারিয়ারে মোট ৯টি ওয়ানডে খেলেছেন। সেই ৯টিই বিশ^কাপে। ৫টি ১৯৯৬ বিশ^কাপে, ৪টি ২০০৩ বিশ^কাপে। সেই ৯ ম্যাচে মোট ৩২২ রান করেছেন। তার মধ্যে ১৩৪ রানই করেছেন এক ম্যাচে। ২০০৩ বিশ^কাপে, নামিবিয়ার বিপক্ষে, দক্ষিণ আফ্রিকার ব্লুমফন্টেইনে। মজার বিষয় হলো, সেটাই ছিল ক্লাস-ইয়ান ফণ নুরতউইকের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ! তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে সেদিন নেদারল্যান্ডস ম্যাচটাও জিতেছিল ৬৪ রানে। ক্যারিয়ার-সেরা ইনিংস খেলে ম্যাচ জয়ে শেষ-আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের বিদায়টা স্মরণীয়ই করে রেখেছেন নুরতউইক।

ব্যক্তিগত সেরা বোলিং: টম ডি লিড, ৪/৩৫

নেদারল্যান্ডসের পক্ষে বিশ্বকাপে সেরা বোলিং কীর্তিটা ডানহাতি পেসার টম ডি লিডের দখলে। ২০০৩ বিশ্বকাপে শক্তিশালী ভারতকে ২০৪ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে রেকর্ডটা গড়েছেন তিনি। ৯.৫ ওভার বোলিং করে ৩৫ রান খরচায় ৪ উইকেট নিয়েছিলেন। আউট করেছিলেন শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, হরভজন সিং ও জহির খানকে। তার বোলিং কীর্তির হাসিটা অবশ্য ম্যাচ শেষে উবে যায়। ২০৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেদারলান্ডস যে মাত্র ১৩৬ রানেই অলআউট হয়ে ম্যাচটা হারে ৬৮ রানে। ২৯ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৪টি ম্যাচই টম ডি লিড খেলেন বিশ্বকাপে। ১৪ ম্যাচে তার মোট উইকেট সংখ্যাও ১৪টি।

স্কট এডওয়ার্ডস
ডাচদের ১৫ সদস্যের বিশ্বকাপ দলের ১৪ জনই বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন প্রথমবারের মতো। কারণ, নেদারল্যান্ডস সর্বশেষ বিশ্বকাপে খেলেছে ২০১১ বিশ্বকাপে। সেই দলের একমাত্র সদস্য হিসেবে ওয়েসলি বারেসি এবারও ডাচদের বিশ্বকাপ দলে। তবে ২০১১ বিশ্বকাপে দলের হয়ে ৬টি ম্যাচেই খেলা বারেসি নন, এবার দলের নেতৃত্ব ভার স্কট এডওয়ার্ডসের কাঁধে। প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নামবেন অধিনায়ক হিসেবে, স্কট এডওয়ার্ডস ভাগ্যবানই। দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের পাশাপাশি ২৭ বছর বয়সি অ্যাডওয়ার্ডসের নেতৃত্ব গুণও দারুণ। তার সুযোগ্য নেতৃত্বেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ডের মতো টেস্ট খেলুড়ে দলের স্বপ্ন ভেঙে ভারত বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে নেদারল্যান্ডস। ৩৮টি ওয়ানডে খেলা এডওয়ার্ডস ১৮টি ম্যাচেই দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার ৫টিতে জয়, ১২টিতে হার, একটিতে টাই। ৫ জয়ের ৪টিই গত জুন-জুলাইয়ে জিম্বাবুয়েতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ বাছাইয়ে। একমাত্র ‘টাই’ও ওই টুর্নামেন্টেই, শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। পরে সুপার ওভারে জেতে অ্যাওয়ার্ডসের নেদারল্যান্ডসই। বাছাইপর্বে অবিশ্বাস্য চমক দেখানো এডওয়ার্ডস বিশ্বকাপে চমক দেখানোর স্বপ্নই দেখছেন।

রায়ান কুক
১৩তম ওয়ানডে বিশ্বকাপে আইসিসির একমাত্র সহযোগী সদস্য হল্যান্ড। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে তারা জায়গা করে নিয়েছে ভারত বিশ্বকাপে। দলের প্রধান কোচ রায়ান কুক দারুণ সাহসী, রীতিমতো হুংকার দিয়েছেন। বলেছেন, কমপক্ষে পাঁচ-ছয়টি ম্যাচ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে আমরা ভারত এসেছি। এমনকি তারা সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখছেন, ‘আমরা চেষ্টা করব প্রতিটি ম্যাচই যেন জিততে পারি।’ রায়ান কুকের অধীনে ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চমক দেখায় হল্যান্ড। প্রথম রাউন্ডে আরব আমিরাত ও নামিবিয়াকে হারিয়ে পা রাখে সুপার-১২ পর্বে। সেখানেও জিম্বাবুয়ে ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারায়। সর্বশেষ আইসিসি ওয়ানডে সুপার লীগে ২৪ ম্যাচের মধ্যে ৩টি জয় পেয়েছে হল্যান্ড। দুটি আয়ারল্যান্ড আর একটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। রায়ান কুক ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ পর্যন্ত বাংলাদেশের ফিল্ডিং কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। এ ছাড়া আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ, দক্ষিণ আফ্রিকা টি-টোয়েন্টি লীগে সানরাইজার্স ইস্টার্ন কেপের ফিল্ডিং কোচের দায়িত্ব পালন করেন। হল্যান্ডের পঞ্চম ওয়ানডে বিশ্বকাপ মিশনে তিনি আসছেন প্রধান দ্রোণাচার্য হয়ে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫