Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

পেলে: এক ফুটবল কিংবদন্ততির আখ্যান

Icon

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:৩১

পেলে: এক ফুটবল কিংবদন্ততির আখ্যান

ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কিংবদন্তি পেলে। ছবি- সংগৃহীত

‌‘আপনি যেকোনো খেলোয়াড়কে যা করতে দেখেন, পেলে সেটা প্রথমেই করেছিলেন’। পেলেকে নিয়ে এমনই মন্তব্য করেছেন এই প্রজন্মের অন্যতম সেরা র স্ট্রাইকার আর্লিং হালান্ড। ক্রীড়াজগতের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র ব্রাজিলিয়ান এই কিংবদন্তির জন্মদিন আজ। গতবছরই পরপারে পাড়ি জমিয়েছিলেন এই ফুটবল কিংবদন্তি।

১৯৫০ সাল। বিশ্বযুদ্ধের দামামা শেষে প্রথম বিশ্বকাপ। আয়োজক লাতিনের দেশ ব্রাজিল। ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব তখনও অপরিচিত ব্রাজিলিয়ানদের কাছে। তবে ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা তাদের অবিরাম। সেই বিশ্বকাপের ফাইনালে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ উরুগুয়ে। পুরো দেশ অপেক্ষায় প্রথম বিশ্বকাপের। তবে মারাকানার ঐতিহাসিক ফাইনালে অঘটনের জন্ম দিয়ে বিশ্বকাপ ঘরে তোলে উরুগুয়ে। 

সেদিনের ফাইনালের পর সাও পাওলোর এক কিশোর তার বাবাকে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ব্রাজিলকে অন্তত একটা বিশ্বকাপ এনে দেবেন। সেই কিশোর ঠিকই কথা রেখেছিলেন। তবে একটি না, তিনটি শিরোপা এনে দিয়েছিলেন দেশকে। ফুটবল বিশ্বে অজস্র রথী-মহারথীদের ভিড়ে যাকে বিবেচনা করা হয় সর্বকালের সেরা হিসেবে। নাম তার পেলে। গতবছর পরপারে পাড়ি জমানো এই ফুটবল কিংবদন্তির ৮৩তম জন্মদিন আজ। 

১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরের ট্রেস কোরাকয়েসের এক বস্তিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন পেলে। তার মা-বাবা নাম রেখেছিলেন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসনের সঙ্গে মিল রেখে। পেলের পুরো নাম ‘এডসন অরান্তেস দো নাসিমেন্তো’। অবশ্য বস্তির বন্ধুরা পেলেকে চিনত ‘ডিকো’ নামে।

নাম এডিসনের সঙ্গে মিললেও পেলে ছিলেন খেলার জগতের মানুষ। সম্ভবত তাকে দেওয়া হয়েছিল ফুটবল খেলার সর্বোচ্চ গুণাগুণ। ফুটবলটা ব্রাজিলে ধর্মের মতই। মুখের কথা ফোটার আগেই সেখানে বাচ্চাদের সখ্যতা হয় গোলাকার ওই বলের সঙ্গে। সাও পাওলোর ছেলে পেলের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি ব্যতিক্রম ছিল না। 

গলিতে ফুটবল খেলে খুব ছোট বেলাতেই দৃষ্টিকাড়েন পেলে। অর্থাভাবে অনুশীলনের জন্য বল কেনার অবস্থা নেই। পুরোনো মোজায় খবরের কাগজ মুড়িয়ে ফুটবল বানিয়ে খেলতেন। কিন্তু কাগজের সেই বলেই নিজের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন তিনি। তার এই প্রতিভা চোখে পড়ে যায় সান্তোসের গ্রেট ওয়ালডেমার ডি ব্রিটোর। পেলে জীবনের মোড় ঘুরে যায় তখনই। সে সময় পেলের বয়স ছিল ১৫ বছর। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সান্তোস ক্লাবে, যোগ দেন ‘বি’ টিমে। সহজাত প্রতিভা দেখিয়ে এক বছরের মধ্যেই  মূল দলে নিজের জায়গা করে নেন পেলে। আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

১৯৫৮ বিশ্বকাপেই বাবাকে দেওয়া কথা রেখেছিলেন পেলে। মারিও জাগালো, ভাভা, দিদি, গারিঞ্চাদের সঙ্গে কিশোর পেলে ব্রাজিলকে এনে দেন তাদের প্রথম বিশ্বকাপ। ফাইনালে সুইডেনের বিপক্ষে তার গোল বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা গোল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

১৯৬২ বিশ্বকাপটা জিতলেও তাতে খুব বেশি অবদান রাখা হয়নি পেলের। ইনজুরিতে মাঠের বাইরে ছিলেন বেশিরভাগ সময়। আর সত্তরে তো হাজির হয়েছিলেন ইতিহাসে সেরা দল নিয়ে। অলস্টার সেই দলে ছিলেন কার্লোস আলবার্তো, রিভেলিনো, জাইরজিনহোদের নিয়ে গড়া সেই ব্রাজিলকে একবাক্যের বিশ্বের সেরা দল মেনে নেন বোদ্ধারা। মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত সেই আসরেও শিরোপা জেতেন পেলে।  

ক্যারিয়ারে এক হাজার ৩৬৬ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন এক হাজার ২৮৩টি। আর ব্রাজিলের জার্সিতে ৯২ ম্যাচে ৭৭টি গোল করেন তিনি। কদিন আগেই যে রেকর্ড ভেঙেছিলেন নেইমার। 

অনেকেরই ধারণা, পেলে ইচ্ছে করেই ইউরোপের প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে যাননি। তবে বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। পেলের অনন্য ফুটবলশৈলীর কথা বিবেচনায় নিয়ে তাকে জাতীয় সম্পত্তি ঘোষণা করেছিল নিজ দেশের সরকার। আশঙ্কা ছিল, ইউরোপিয়ানদের কড়া ট্যাকেলের কারণে নষ্ট হয়ে যেতে পারে তার ক্যারিয়ার। 

কিংবদন্তি এই ফুটবলার পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন গত বিশ্বকাপের সময়ে। চিরবিদায়ের আগে দেখেছেন ব্রাজিলের হার। একরাশ কষ্ট নিয়েই বিদায় বলেছিলেন পৃথিবীতে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫