
গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
জয়ের জন্য যেখানে প্রয়োজন ২৯২ রান, সেখানে ৯১ রানেই নেই ৭ উইকেট। বাস্তববাদীরা তো বটেই অতি আত্মবিশ্বাসীরাও জয়ের আশা করবেন না। তবে দলটা যদি হয় অস্ট্রেলিয়া তাহলে বিশ্বাস হারানো কঠিন। সেই কাজটিই করে দেখালেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও প্যাট কামিন্স। আফগানিস্তানের বিপক্ষে অষ্টম উইকেটে ২০২ রানের অবিশ্বাস্য জুটি গড়েন তারা। তবে আলাদা করে ম্যাক্সওয়েলের কথা বলতে হবে। ১২৮ বলে ২০১ রানের ইনিংসটা তাকে অমরত্ব দিয়েছে। ম্যাক্সির পাশাপাশি এই ডানহাতি ব্যাটারের নামের পাশে জুড়ে দেওয়া হয়েছে ‘সুপার সাইক্লোন’ উপাধি। কারও কারও কাছে আবার তিনি ফিনিক্স পাখিও।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আফগানদের বিপক্ষে বিশ্বকাপ ম্যাচে ম্যাক্সওয়েল যেন সেই ফিনিক্স পাখি হয়েই আবির্ভূত হয়েছিলেন। ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আসা ক্রিকেটের নতুন এক মহানায়ক হিসেবেই নিজেকে জাহির করলেন। যার ব্যাটে রচিত হলো প্রত্যাবর্তনের নতুন, অবিস্মরণীয় এক গল্প। একশর নিচে ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর অজি শিবির রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। আফগানিস্তান কত রানে জিতবে, সেই হিসাব ধারাভাষ্যকররাও করতে শুরু করেছিলেন। অথচ সেখান থেকেই ভোজবাজির মতো পাল্টে গেল চিত্র। সেখানে একজন ম্যাক্সওয়েলই ব্যাটকে তরবারি বানিয়ে দিতে থাকেন একের পর এক চমক। তার খুনে ব্যাটিংয়ে সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যায়।
অথচ ম্যাক্সওয়েল যখন ক্রিজে আসেন তখন আজমতউল্লাহ ওমরজাই হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়ে। কোনোমতে বলটা রুখলেও এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দেননি। বল ব্যাটে লাগায় রিভিউ নিলেও কাজ হয়নি। এরপর ম্যাক্সি বল খেললেন আরও ১২৭টি। ততক্ষণে ওয়ানডে ক্রিকেটে নতুন ইতিহাসই লিখে ফেলেছেন তিনি। যার রেশ কতটা বিদ্যমান সেটা শচীন টেন্ডুলকার থেকে শুরু করে এমন কোনো কিংবদন্তি নেই যিনি ম্যাক্সওয়েলের প্রশংসা করছেন না। এই ইনিংস বিশ্বকাপ তো বটেই অনেকের কাছে ওয়ানডে ইতিহাসেরই সেরা ইনিংস। তার একের পর এক ডেলিভারি আছড়ে পড়ছিল সীমানায়, তখন ২২ গজ দূরে দাঁড়িয়ে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক কামিন্স উন্মতত্তা দেখে চলেছেন। দুইশ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটির পুরোটা সময় তিনি কাছ থেকে দেখেছেন ম্যাক্সওয়েলের অসহনীয় যন্ত্রণায় কাতরানো, মাঠ ছাড়তে চেয়েও লড়াই চালিয়ে নেওয়ার মানসিকতা এবং শেষ পর্যন্ত চোট এড়িয়ে দলকে জেতানোর অনন্য সাধারণ কীর্তি।
ওপেনিং ব্যাটার ছাড়া ম্যাক্সওয়েলের ইনিংসটিই সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। এর আগে জিম্বাবুয়ের চার্লস কভেন্ট্রির ছয় নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ১৯৪ রানের ইনিংসটিই ছিল সর্বোচ্চ। ১৯৮৩ সালে কপিল দেব ১৭৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। বিশ্বকাপে তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস খেলেন ম্যাক্সওয়েল। এর আগে ২৩৭ রান করেছিলেন মার্টিন গাপটিল ও ২১৫ রান করে ক্রিস গেইলও এই ক্লাবে জায়গা করে নিয়েছেন। রান তাড়ায় আবার ওয়ানডেতে এটিই ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।