
নারী কাবাডি দল। ফাইল ছবি
বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি। অথচ এ খেলাতেই অনেক পিছিয়ে রয়েছে দেশ। খেলাটির মান বৃদ্ধির ন্যূনতম চেষ্টা নেই কাবাডি ফেডারেশনের। নারী কাবাডিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান আরও করুণ। চলতি বছরে এশিয়ান গেমসে নারী কাবাডিতে ভারত স্বর্ণপদক জয় করে। চাইনিজ তাইপে রৌপ্যপদক পায় এবং ইরান ও নেপাল যৌথভাবে ব্রোঞ্জপদক জিতেছে। কিন্তু বাংলাদেশ কোনো পদকই জিততে পারেনি।
এর আগে ২০১২ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নেয় লাল-সবুজের দল। এশিয়ান গেমসে ২০১০ ও ২০১৪ সালে তৃতীয় হওয়ার পর ২০১৮ সালে সপ্তম হয় বাংলাদেশ। গত বছর ষষ্ঠ স্থান লাভ করে। দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে (সাফ গেমস) ২০০৬ সালে তৃতীয়, ২০১০ সালে রানার্সআপ, ২০১৬ সালে রানার্সআপ এবং ২০১৯ সালে তৃতীয় হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশ এক সময় কাবাডিতে আন্তর্জাতিক পদক লাভের যে সম্ভাবনা তৈরি করেছিল, সেটা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি ১১টি দল নিয়ে ঢাকায় শুরু হয়েছে নারী কাবাডি লিগ। পল্টনের জাতীয় কাবাডি স্টেডিয়ামে এই লিগে খেলছেন বেশ কয়েকজন বিদেশি খেলোয়াড়। তার মধ্যে নেপালের জাতীয় দলের খেলোয়াড় আছেন চারজন। গেল সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে হাংজু এশিয়ান গেমসে নারী কাবাডিতে এই নেপালের কাছে হেরে বাংলাদেশ ব্রোঞ্জ জিততে পারেনি। হাংজুর কাবাডি কোর্টে বাংলাদেশকে ৩৭-২৪ পয়েন্টে হারিয়ে দেয় নেপাল। এই প্রথম বাংলাদেশের নারীদের কাবাডি লিগে সেই নেপালের এবং ভারতের খেলোয়াড়রা খেলতে এসেছেন। মেঘনা কাবাডি ক্লাব নিয়ে এসেছে নেপালিদের। তারা হলেন- গঙ্গা ঘিমিরে, শ্রীজানা কুমারী থারু, অনুজা কুলং রাই ও জয়ন্ত বাডু। লিগে গতবারের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ পুলিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে এনেছে দুজন খেলোয়াড়। নারী কাবাডি লিগে বিদেশিরা এলেও বাংলাদেশের মেয়েদের এখনো সৌভাগ্য হয়নি বিদেশি লিগে খেলার। ৯ বছরের বিরতি শেষে ঢাকায় সর্বশেষ নারী কাবাডি লিগ হয়েছিল ২০২১ সালে।
তৃণমূলে কাবাডি চর্চা বাড়িয়ে নতুন প্রতিভা তুলে আনতে হবে। স্কুল ও কলেজে কাবাডি খেলা বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রো-কাবাডিতে খেলার সুযোগ করে দিতে হবে খেলোয়াড়দের। আর সরকারের উচিত কাবাডিকে জাতীয় খেলার যথাযথ সত্যিকারের মর্যাদা দেওয়া। এশিয়ান গেমস কাবাডিতে এ পর্যন্ত তিনবার রুপা জিতেছে বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশই ২০১০ থেকে এশিয়াডে পদকশূন্য। সর্বশেষ ২০১৯ সালে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে ঘাম ঝরিয়ে এসেছে ব্রোঞ্জ।
২০১২ সালে হওয়া সর্বশেষ মেয়েদের লিগে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড় রুপালি আক্তার। সে তুলনায় করপোরেট কাবাডি লিগেও আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারছেন না খেলোয়াড়রা। ছয় দলের জন্য বরাদ্দ ১৫ লাখ টাকা। এর মানে প্রতিটি দল পাবে আড়াই লাখ করে টাকা। একেকটি দলে খেলছেন ১৩ জন খেলোয়াড়। জনপ্রতি গড়ে ২০ হাজার টাকার কম পাচ্ছেন খেলোয়াড়রা। নারীদের পারিশ্রমিক না বাড়ালে তাদের খেলার মান উন্নত করা সম্ভব নয় বলেই মনে হচ্ছে।