
বাংলাদেশ ফুটবল দল। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য ২০২৩ সালকে সাফল্যমণ্ডিত ‘বছর’ হিসেবে বিবেচনা করা যেতেই পারে। সাফ ফুটবলের সেমিফাইনালে ওঠা কিংবা বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের প্লে-অফ রাউন্ড পেরিয়ে আসার সাফল্যের সঙ্গে ফিফা র্যাংকিংয়ে উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের।
অনেকেই মনে করছেন সাম্প্রতিক সাফল্যে ফুটবলের পালে নতুন হাওয়া লেগেছে। এখনই সময় ফুটবলের দৈন্যদশা থেকে বেরিয়ে আসার কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও (বাফুফে) নড়েচড়ে বসেছে। উদ্যোগ নিয়েছে একাডেমিভিত্তিক অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের।
যে কোনো দেশের ফুটবলের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে বয়সভিত্তিক দলের ওপর। অল্প বয়স থেকে বিভিন্ন একাডেমি থেকে ফুটবলে হাতেখড়ি নেওয়া ফুটবলাররাই জায়গা করে নেয় জাতীয় আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। সেই ভাবনা থেকে ফিফার অর্থায়নে প্রথমবার বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাফুফে একাডেমি চ্যাম্পিয়নশিপ’। বাফুফের তালিকায় ব্যক্তি উদ্যোগে প্রায় ২০০ ফুটবল একাডেমি রয়েছে। যার মধ্যে ১৭০টি অংশ নিচ্ছে বাফুফে একাডেমি চ্যাম্পিয়নশিপে। ১৯ ডিসেম্বর কমলাপুর স্টেডিয়ামে শুরু হবে একাডেমি চ্যাম্পিয়নশিপ। আশা করা হচ্ছে, একাডেমি চ্যাম্পিয়নশিপ বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। তবে জরুরি হচ্ছে টুর্নামেন্টের নিয়মিত আয়োজন। এ নিয়ে ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান ও বাফুফে সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভূইয়া মানিক বলেছেন, ‘ফিফা আমাদের ট্যালেন্ট ডেভেলপমেন্ট খাতে বিশেষভাবে কোটি টাকার মতো বরাদ্দ দিচ্ছে। আশা করছি ফিফার এ অর্থ দিয়ে এ প্রতিযোগিতা ভালোমতো সম্পন্ন করতে পারব।’
২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হবে সাফ ক্লাব কাপ চ্যাম্পিয়নশিপ। সাফের কম্পিটিশন কমিটির সভায় নতুন টুর্নামেন্টের ফরম্যাট ও বাইলজ চূড়ান্ত করা হয়েছে। সাফ সেক্রেটারি আনোয়ারুল হক হেলাল জানিয়েছেন, দক্ষিণ এশিয়ার সাত দেশের আট ক্লাব অংশ নেবে টুর্নামেন্টে। তবে এএফসি আসরে খেলা কোনো দল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে পারবে না। কারণ টুর্নামেন্টের খেলা আয়োজিত হবে এএফসি আসরের উইন্ডোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। সে ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী ক্লাবের নাম জমা দেবে সংশ্লিষ্ট দেশের ফেডারেশন।
বাংলাদেশের ফুটবলের সাম্প্রতিক সাফল্যে দারুণ খুশি বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। অর্থের জোগান পেলে ঘরোয়া ফুটবলে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) চালু করতে চান। তাতে রেফারিং নিয়ে বিতর্ক লাঘব হবে। পেশাদার লিগ কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইমরুল হাসানের হাতে। বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি আর বাফুফের সহ-সভাপতি হয়েও ইমরুল নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বাংলাদেশে এক সময় নিয়মিত জেলাভিত্তিক ফুটবল লিগ অনুষ্ঠিত হয়েছে। যা এখন প্রায় স্থবির। যদিও জেলাভিত্তিক ফুটবল লিগ বা টুর্নামেন্ট আয়োজনের দায়িত্ব স্থানীয় কমিটির। নিজস্ব অর্থায়নে তারাই আয়োজন করে লিগ। বিভাগীয় আর জেলা ক্রীড়া সংস্থার ফুটবল কমিটিকে শুধু তৎপর দেখা যায় বাফুফে নির্বাচনে। এ ছাড়া যেন আর কোনো কাজ নেই। বাফুফে সভাপতি জেলা কমিটির দায় নিতে রাজি নন। তিনি জানিয়েছেন, জেলা পর্যায়ের লিগ স্থানীয় কমিটিকেই করতে হবে। লীগ আয়োজনে বাফুফের পক্ষে ৬০-৭০ জেলাকে আর্থিক সহায়তা করাও সম্ভব না। জেলা লিগ কমিটির চেয়ারম্যান কয়েক লাখ টাকার সংস্থান করে প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে না পারলে সেটা দুঃখজনক। আবার এই অপরাধে লিগ কমিটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকারও বাফুফের নেই!
কাজী সালাউদ্দিন অনেক সমালোচনার পর সাফল্যের ছোঁয়া পেতে শুরু করেছেন। সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে তিনি বাফুফে সভাপতি পদে পুনরায় নির্বাচন করবেন। ২০২৪ সালে টানা পঞ্চমবারের মতো বাংলাদেশের ফুটবলের অভিভাবক হওয়ার জন্য নির্বাচনে লড়বেন সালাউদ্দিন। বলেছেন, ‘ফুটবলে আরও কিছু কাজ করার আছে আমার। আমরা সাউথ এশিয়ায় আধিপত্য করতে চাই। এর সঙ্গে মধ্য এশিয়াতে নিজেদের শক্তির জানান দিতে চাই। এটা করার জন্য আমি আরেকটা টার্ম নির্বাচন করব। আর এটাই হবে আমার শেষ নির্বাচন।’
সালাউদ্দিন সভাপতি থাকুন, কোনো সমস্যা নেই। মূল কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের ফুটবল উন্নয়ন। অতীতে বাফুফে সভাপতি নানারকম প্রতিশ্রুতি দিয়েও রক্ষা করতে পারেননি। কিন্তু আগামীতে কোনো বড় স্বপ্ন না দেখিয়ে ধীরে ধীরে ফুটবলের এগিয়ে যাওয়ার পথটা সালাউদ্দিন দেখাবেন, এটা সকলের প্রত্যাশা। ফুটবলার হিসেবে সালাউদ্দিন বাংলাদেশের কিংবদন্তি। অতীতের ব্যর্থতা ঝেড়ে সংগঠক হিসেবেও ‘সফল’ সালাউদ্দিনকে দেখতে চায় সবাই।