Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

মোহামেডানের রেকর্ড ছুঁয়ে চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা

Icon

আহসান হাবীব সুমন

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:১১

মোহামেডানের রেকর্ড ছুঁয়ে চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা

স্বাধীনতা কাপের ইতিহাসে বসুন্ধরা এখন মোহামেডানের সমান সর্বোচ্চ তিনটি শিরোপার মালিক।

২০২৩-২৪ মৌসুমে বাংলাদেশের প্রথম ঘরোয়া ট্রফি নিজেদের করে নিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। ফাইনালে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে হারিয়ে স্বাধীনতা কাপ জিতেছে বসুন্ধরা। টানা দ্বিতীয় স্বাধীনতা কাপ জয়ের মাধ্যমে ছুঁয়েছে মোহামেডানের রেকর্ডও। স্বাধীনতা কাপের ইতিহাসে বসুন্ধরা এখন মোহামেডানের সমান সর্বোচ্চ তিনটি শিরোপার মালিক। 

১৮ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে মোহামেডানের বিরুদ্ধে ২-১ গোলে জিতেছে বসুন্ধরা কিংস। বসুন্ধরার হয়ে গোল করেছেন রাকিব হোসেন আর ডরিয়েল্টন গোমেজ। মোহামেডানের একমাত্র গোলদাতা সানডে ইমানুয়েল। স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে যে কোনো বিচারে মোহামেডানের বিপক্ষে বসুন্ধরাই ছিল ফেভারিট। জাতীয় দলের রাকিব হোসেন, সাদউদ্দিন, সোহেল রানা, বিশ্বনাথ ঘোষদের সঙ্গে ব্রাজিলীয় ডরিয়েল্টন, মিগুয়েল ফেরেরা আর রবসন রবিনহোদের বসুন্ধরা দেশের সেরা শক্তি। সেমিফাইনালে ঢাকা আবাহনী ক্রীড়া চক্রকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে বসুন্ধরা দেখিয়েছে নিজেদের শক্তি। তুলনায় সোলেমান দিয়াবাতে, মোজাফফরভ, সানডে, জাফর ইকবাল, আরিফ হোসেন আর কামরুল ইসলামদের নিয়ে বেশ সাদামাটা মোহামেডান দুর্দান্ত লড়াই করেছে কিংসের বিপক্ষে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই মোহামেডানের ওমর বাবুকে ফাউল করে লাল কার্ড দেখেন কিংসের উইঙ্গার রফিকুল ইসলাম। ১০ জনের বসুন্ধরাকে সামলে ওঠার সময় দেয়নি সাদাকালো শিবির। মোজাফফরভের কর্নার থেকে উড়ে আসা বল হেডে জালে জড়ান সানডে। কিন্তু সেই গোল মোহামেডান ধরে রাখতে পারেনি বেশিক্ষণ। মিনিট দুয়েকের মধ্যে ম্যাচে সমতা ফেরান বসুন্ধরার রাকিব। আর ৮৬ মিনিটে মোহামেডানের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন ডরিয়েল্টন। তাতেই শিরোপা জয়ের উল্লাসে মাতে কিংস শিবির।

স্বাধীনতা কাপে সর্বোচ্চ তিনটি করে গোল করেছেন বসুন্ধরার ডরিয়েল্টন, ঢাকা আবাহনীর জোনাথন ফার্নান্দেজ আর শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের হিগোর লিয়েতে। বাংলাদেশের একমাত্র ফুটবলার হিসেবে আসরে দুটি গোল করেছেন রহমতগঞ্জের শামিন ইয়াসির জুয়েল। রহমতগঞ্জ সেমিফাইনালে উঠে চমক দেখালেও হেরে যায় মোহামেডানের কাছে।

১৯৭২ সালে প্রথম অনুষ্ঠিত হয় স্বাধীনতা কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট। প্রথম আসরেই ইস্ট এন্ড ক্লাবকে হারিয়ে শিরোপাজয়ী মোহামেডান। পরে ১৯৯০ আর ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা কাপ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯১ সালের শিরোপা যায় মোহামেডানের ঘরে। ২০১৪ সালে শেষবার মোহামেডান জিতেছিল স্বাধীনতা কাপ। আর বসুন্ধরা স্বাধীনতা কাপ জিতেছে ২০১৮, ২০২২ ও ২০২৩ সালে। সর্বশেষ টানা তিনটি আসরেই ফাইনালে খেলেছে বসুন্ধরা।

২০২৩ সালে মোহামেডান ফেডারেশন কাপ জিতেছে। কোচ আলফাজ আহমেদের অধীনে যা মোহামেডানের ঐতিহাসিক সাফল্য। এক সময় দেশের ফুটবলের যে কোনো আসরে মোহামেডানের রানার-আপ হওয়াও ব্যর্থতা হিসেবে গণ্য হয়েছে। কিন্তু পেশাদার লিগ শুরুর পর সাফল্য ক্রমশ ‘সোনার হরিণ’ হয়ে ওঠে মোহামেডানের জন্য। ২০১৪ সালের পর দীর্ঘ ৯ বছরের শিরোপা আক্ষেপ মিটেছিল ফেডারেশন কাপে। কিন্তু খুব কাছে গিয়েও সাদাকালোদের ছোঁয়া হলো না স্বাধীনতা কাপের ট্রফি।

বসুন্ধরা কিংসের উত্থান বাংলাদেশের ফুটবলে উল্কার মতো। এখন পর্যন্ত চারটি পেশাদার লিগে অংশ নিয়ে জিতেছে চারটি শিরোপাই; যা বাংলাদেশের ফুটবলে অনন্য রেকর্ড। সঙ্গে চার মৌসুমে দুটি ফেডারেশন কাপ আর তৃতীয় স্বাধীনতা কাপের ট্রফি যোগ হয়েছে বসুন্ধরার নামের পাশে। কোনো সন্দেহ নেই, বসুন্ধরাকে টেক্কা দেওয়ার মতো দল এই মুহূর্তে বাংলাদেশে নেই। তাই তো বসুন্ধরা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে স্বপ্ন দেখছে এশিয়ার ক্লাব ফুটবলে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার। চলতি ২০২৩-২৪ মৌসুমের এএফসি ক্লাব কাপের গ্রুপ পর্ব থেকে কিংসকে বিদায় নিতে হয়েছে দুর্ভাগ্যজনকভাবে। শেষ ম্যাচে রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্তে উড়িষ্যা এফসির বিপক্ষে লাল কার্ড দেখেন গফুরভ। শেষ পর্যন্ত কলিঙ্গা স্টেডিয়ামে ০-১ গোলে ম্যাচ হেরে যায় বসুন্ধরা। কিন্তু রেফারির একপেশে সিদ্ধান্তে নিজেদের বিদায় মেনে নিতে পারেনি দলটি। রেফারির পক্ষপাতিত্ব নিয়ে এএফসি আর ফিফাতেও নালিশ জানাতে চায় তারা।

স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে গোপালগঞ্জের শেখ মনি স্টেডিয়ামে দেখা গেছে উপচেপড়া দর্শক। ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে মোহামেডান আর বসুন্ধরার সমর্থকরা ছুটে গেছেন প্রিয় দলকে সমর্থন দিতে। তাতে ফাইনালের গ্যালারি ছিল জমজমাট, যা এক সময় দেশের ঘরোয়া ফুটবলে নিয়মিত দৃশ্য ছিল। চলতি বছরেই কুমিল্লায় ফেডারেশন কাপ ফাইনালের পর গোপালগঞ্জেও ছিল উল্লেখযোগ্য দর্শকের উপস্থিতি। দেশের ফুটবল পুনরায় জাগছে, এটা আশার কথা।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫