ভবিষ্যৎ শঙ্কায় নতুন প্রজন্ম আর লেগ স্পিনার হতে চায় না। বাংলাদেশের ক্রিকেটেও অনন্ত এক আক্ষেপের নাম এটি। হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো কেউ এলেও জাতীয় দলে স্থায়ী আসন করে নিতে পারেনি। সাম্প্রতিক সময়ের জুবায়ের হোসেন লিখন, তানভির হায়দার, আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের পর সবশেষ নাম রিশাদ হোসেন। বাংলাদেশে একজন হঠাৎ করে নিজের আগমনী বার্তা জানান দিলেও অবস্থান পোক্ত করতে পারেন না।

এই অবস্থার মধ্যে আবারও আশার আলো হয়ে নতুন লড়াইয়ে নেমেছেন রিশাদ। খেলাধুলায় ‘ভিনি, ভিডি, ভিসি’ এই তিনটি শব্দের বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম।’ কিন্তু লেগিদের ক্ষেত্রে যদি বলা হয়, ‘এলাম, খেললাম, হারিয়ে গেলাম’, তাহলে কি খুব বেশি বাড়িয়ে বলা হবে? 

অনেকের কাছে ব্যঙ্গাত্মক শোনালেও এটাকেই বাস্তবতা মানতে হবে। লাল-সবুজের জার্সিতে কোনো লেগ স্পিনার দলে সুযোগ পেলে পাল্টা প্রশ্ন শুনতে হয়, ‘জাতীয় দলে কত দিন টিকে থাকবেন?’ সেই টিকে থাকার পাল্টা প্রশ্নটা ধেয়ে আসে রিশাদের দিকেও! ২১ বছর বয়সী লেগ স্পিনারের আগে বেশ কয়েকজনের ক্ষেত্রেও ঠিক একই প্রশ্ন উঠেছিল। সম্ভাবনা জাগিয়ে অলক কাপালির অকালে হারিয়ে যাওয়ার পর থেকেই লেগ স্পিনার খোঁজার কাজ চললেও প্রত্যাশা মেটানোর ধারেকাছেও যাওয়া সম্ভব হয়নি। এরপর ২০১৫ সালে সুযোগ পেয়ে জুবায়ের হোসেন লিখন টি-টোয়েন্টিতে খেলেছেন মোটে এক ম্যাচ। কয়েক বছর পর দাপুটে শুরু করা আমিনুল ইসলাম বিপ্লব যেন ‘বিপ্লব’ ঘটানোর আগেই চলে গেলেন আলোচনার বাইরে। 

জাতীয় দলের হয়ে কেউ সুযোগ পেয়ে যেমন নিজেকে মেলে ধরতে পারেনি ঠিক তেমনি কাউকে আবার পর্যাপ্ত সুযোগও দেওয়া হয়নি। সেই স্বপ্ন অঙ্কুরোদ্গম হওয়ার আগেই যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। রিশাদের হাত ধরে আবারও বাংলাদেশের ক্রিকেটে একজন লেগির আগমন ঘটেছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই যেখানে লেগ স্পিনারদের জয়জয়কার সেখানে রিশাদের যাত্রাটা কত ব্যাপ্তির হয় সেটাই এখন প্রশ্ন? বিশেষজ্ঞ একজন লেগ স্পিনারের সংকট যেমন অনেক পুরনো ঠিক তেমনি বাংলাদেশের হাহাকারটাও বাড়ছে। গত এক দশকে অনেকটা বিজ্ঞাপনের মতো লেপ্টে আছে, ‘আমরা একজন লেগ স্পিনার খুঁজছি যিনি দলকে সার্ভিস দিতে পারেন।’ লেগ স্পিনার নেই সেøাগানের সময়ে ধূমকেতুর মতো এসেছিলেন কয়েকজন। কোনো সংস্করণেই কবজির মোচড়ে বল ঘোরানোর মতো স্পিনাররা দলে থিতু হতে পারেননি। নিরন্তর সেই অনুসন্ধানে আশা হয়ে রিশাদ জ্বলজ্বল করছেন। 

গেল বছর চট্টগ্রামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হওয়া রিশাদকে ঘিরেই এখন স্বপ্ন আবর্তিত হচ্ছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে আলোচনায় ছিলেন। প্রথম ম্যাচে ২৪ রানে ১ উইকেট পাওয়ার পর বৃষ্টিবিঘিœত দ্বিতীয় ম্যাচে দাপট দেখিয়েছিলেন এই লেগি। সেই ম্যাচে কিউই ব্যাটারদের আটকে রাখতে ৩ ওভার বল করে মাত্র ১০ রান দিয়েছিলেন। রিশাদের পারফরম্যান্সে বেশ খুশি কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে থেকে দলের অধিনায়ক, নির্বাচকরা সবাই। বিসিবির নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন আশা রাখার পক্ষেই বলেছেন। তবে সবচেয়ে জুতসই মূল্যায়ন করেছেন ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক নাজমুল আবেদিন ফাহিম, ‘লেগ স্পিনারদের যত্ন নিতে হয়। শুরুতে বেশি বেশি সুযোগ না দিলে পরিণত হতে পারে না তারা। আমি আশা করব রিশাদের বেলায় লিখন কিংবা বিপ্লবদের যা করা হয়েছে সেটি করা হবে না। লেগিদের প্রমাণ করার ক্ষেত্র ক্রিকেট বোর্ডকে তৈরি করতে হবে যাতে ভবিষ্যতের রাস্তা প্রশস্ত হয়।’ 

ক্রিকেট বিশ্বে এখন লেগ স্পিনারদের জয়জয়কার চলছে। টি-টোয়েন্টির সেরা বোলারদের তালিকায় লেগিদের দাপট থাকলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটে চলছে হাহাকার। এবার সেই আক্ষেপ থেকে কি মুক্তি দিতে পারবে রিশাদ?