Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

বিদেশি কোচদের ‘টেক্কা’ দিচ্ছেন আলফাজ

Icon

আহসান হাবীব সুমন

প্রকাশ: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:৫৩

বিদেশি কোচদের ‘টেক্কা’ দিচ্ছেন আলফাজ

আবাহনীর কোচ আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানির সঙ্গে মোহামেডানের কোচ আলফাজ আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

দেশের ফুটবল ইতিহাসে সাহেব আলী, আলী ইমাম, গফুর বালুচ, গোলাম সারোয়ার টিপু আর অমলেশ সেনরা পরিচিত ছিলেন খেলোয়াড় তৈরির কারিগর হিসেবে। সাম্প্রতিক সময়ে মারুফুল হক, সাইফুল বারী টিটুরাও সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। আর আলফাজ আহমেদ রয়েছেন আলোচনার শীর্ষে। 

বাংলাদেশের ফুটবল মানেই বিদেশি খেলোয়াড় আর কোচদের রাজত্ব। ২০২৩-২৪ মৌসুমে বসুন্ধরা কিংসে অস্কার ব্রুজেন, ঢাকা আবাহনীর আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানি, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রে নর্থ মেসিডোনিয়ার জুগোস্লোভ ট্রেংকোভস্কি আর বাংলাদেশ পুলিশ দলে রয়েছেন রোমানিয়ার আরসিতিয়া সিওয়াবা। বড় ক্লাবগুলো যেন দেশি কোচদের ওপর ভরসা রাখতে সাহস পায় না। অথচ নিকট অতীতে মারুফুল হক পেয়েছিলেন দুর্দান্ত সাফল্য। শেখ রাসেলকে ২০১২-১৩ মৌসুমে জিতিয়েছিলেন ঘরোয়া ‘ট্রেবল’। এ ছাড়া মোহামেডান, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের হয়েও শিরোপা জিতেছেন। শেখ জামালকে ২০১৪ সালে ভুটান থেকে কিংস কাপে বিজয়ী করে এনেছেন। ২০১৭ সালে তিনিই আরামবাগ ক্রীড়া সংঘকে জেতান স্বাধীনতা কাপ। এরপর দীর্ঘ ছয় বছর বাংলাদেশের কোনো কোচ ঘরোয়া শিরোপার মুখ দেখেননি। 

২০২৩ সালে মোহামেডানের হয়ে দেশীয় কোচদের মুখরক্ষা করেছেন আলফাজ। ফেডারেশন কাপের মাধ্যমে সাদাকালো শিবিরও কাটায় দীর্ঘ ৯ বছরের শিরোপা-খরা। আলফাজের অধীনে চলতি পেশাদার লিগের প্রথমপর্ব শেষে একমাত্র অপরাজিত দল মোহামেডান। ৯ ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে আলফাজের দল লিগ টেবিলের দ্বিতীয় অবস্থানে। ২২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে বসুন্ধরা কিংস। আর তিনে ১৫ পয়েন্ট পাওয়া আবাহনী। 

আলফাজের মোহামেডান কিংস অ্যারেনায় হারিয়ে দিয়েছে ব্রুজনের বসুন্ধরাকে; যা নিজেদের মাঠে যে কোনো প্রতিযোগিতায় বসুন্ধরার পরাজয়ের প্রথম ঘটনা। বিগত মৌসুমের ফেডারেশন কাপ সেমিতেও আলফাজের কাছে হেরেছিলেন ব্রুজন। এ ছাড়া চলতি ফেডারেশন কাপের গ্রুপপর্বে আলফাজের দল হারিয়েছে ক্রুসিয়ানির আবাহনীকে। লিগের প্রথমপর্বে ড্র হয়েছে দুই দলের ম্যাচ। মজার ব্যাপার হচ্ছে, জাতীয় দলে আর্জেন্টাইন ক্রুসিয়ানির শিষ্য ছিলেন আলফাজ। ২০০৫ সালে ক্রুসিয়ানির কোচিংয়ে করাচি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলেছিল আলফাজদের বাংলাদেশ। 

নিজের সময়ে দুর্ধর্ষ স্ট্রাইকার আলফাজকে বলা যায় বাংলাদেশের ফুটবলের শেষ ‘মহাতারকা’। লাল-সবুজের হয়ে মিয়ানমারে চার জাতি ট্রফি, দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের (এসএ) স্বর্ণ এবং সাফ গেমস শিরোপা জিতেছেন। ১৯৯৯ সালের এসএ গেমসের ফাইনালে কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিক নেপালের বিপক্ষে একমাত্র জয়সূচক গোল করেছিলেন আলফাজ। ক্লাব ফুটবলে মোহামেডান, আবাহনী, মুক্তিযোদ্ধা আর ব্রাদার্সের হয়ে দেশের প্রায় সব শিরোপা জিতেছেন। ১৯৯৪ সালে আবাহনীর হয়ে কলকাতায় জিতেছেন চার্মস কাপ। রুম্মান বিন ওয়ালি সাব্বিরের পর দেশের দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে ১৯৯৬ সালের আগস্টে জিতেছেন ‘এএফসি ফুটবলার অব দ্য মান্থ’ পুরস্কার। মোহামেডানের হয়ে লাওসের ইলেক্ট্রিসিটি ক্লাবের বিপক্ষে চার গোল করার স্বীকৃতি পান তিনি। এ ছাড়া ২০০০-০১ মৌসুমে চড়িয়েছেন কলকাতা  মোহনবাগান ক্লাবের বিখ্যাত ‘সবুজ-মেরুন’ জার্সি। 

ফুটবলার হিসেবে দুর্দান্ত সফল আলফাজ কোচিং পেশাতেও রাখছেন কুশলতার ছাপ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোচ ছিলেন ২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত। জিতেছেন আন্তঃবাহিনী চ্যাম্পিয়নশিপ। ছিলেন উত্তর বারিধারার প্রধান কোচ। তবে মোহামেডানের হয়েই কোচ হিসেবে তার উত্থান। ২০২৩ সালের মার্চে দায়িত্ব নিয়েই মোহামেডানের খেলোয়াড়দের মধ্যে সঞ্চার করেছেন আত্মবিশ্বাস। তার স্কোয়াডে তারকা উপস্থিতি নেই। তবে তিনি খেলোয়াড়দের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে জানেন। খেলোয়াড় হিসেবে উঁচুমানের কোচদের সান্নিধ্য পেয়েছেন। তাই ম্যাচ পরিস্থিতি বুঝতে পারার ক্ষমতায় তিনি অনন্য। 

আলফাজ আর মোহামেডানের সাফল্যে পরিষ্কার, আমাদের দেশীয় কোচদেরও যোগ্যতা রয়েছে বড় দল নিয়ন্ত্রণ করার। ব্রুজেন কিংবা ক্রুসিয়ানির মতো হাই-প্রোফাইল কোচদের সঙ্গে টক্কর দিয়ে এগিয়ে চলেছে তার দল। এতে জমেছে ঘরোয়া ফুটবলও। বিগত চার মৌসুমের পেশাদার লিগে বসুন্ধরার একক আধিপত্য দেখেছে সবাই। তারকা-সমৃদ্ধ দল গড়েও ঢাকা আবাহনী পারেনি বসুন্ধরার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে। বিগত মৌসুমের শেষভাগ থেকে বসুন্ধরা আর আবাহনীর জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে মোহামেডান। ফের চাঙ্গা হয়েছে ঘরোয়া ফুটবলের ‘ত্রিমুখী’ লড়াই। এই কৃতিত্ব আলফাজের। 

এদিকে চলতি মৌসুমের পেশাদার লিগেও চলছে বিদেশি ফুটবলারদের দাপট। প্রথম পর্বে সর্বোচ্চ আট গোল করেছেন বসুন্ধরার ডরিয়েল্টন গোমেজ। সাত গোলের দেখা পেয়েছেন ঢাকা আবাহনীর কর্নেলিয়াস স্টুয়ার্ট। ছয় গোলের তালিকায় মোহামেডানের সোলেমান দিয়াবাতে, শেখ রাসেলের ল্যান্ড্রি এন্ডিকুমানার সঙ্গে আছেন বসুন্ধরার রাকিব হোসেন। এ ছাড়া ব্রাদার্সের রাহুল আর পুলিশের গার্সিয়া পাঁচটি আর সুফিলের রয়েছে চারটি গোল।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫