
ফরোয়ার্ড হ্যারি কেন। ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান ফুটবল বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর ফরোয়ার্ড হ্যারি কেন। ক্লাব আর আন্তর্জাতিক ফুটবলে ব্যক্তিগত পর্যায়ে রয়েছে গর্ব করার মতো স্মরণীয় সাফল্য। অথচ দীর্ঘ ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে তার নেই কোনো দলীয় শিরোপা। যে কারণে অনেকেই হ্যারি কেনের নামের পাশে জুড়ে দিচ্ছেন ‘অপয়া’ শব্দটি!
১৯৯৩ সালের ২৮ জুলাই লন্ডনে জন্ম নেওয়া হ্যারি কেনের পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু টটেনহ্যাম হটস্পারে। ২০২২-২৩ মৌসুম পর্যন্ত স্পার্সদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২১৩ গোল করেছেন তিনি। অ্যালান শিয়েরারের (২৬০) পর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি। ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭ আর ২০২০-২১ মৌসুমে জিতেছেন ইপিএলের সর্বোচ্চ গোলদাতার ‘খেতাব’। আর সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে লন্ডনের ক্লাবের জার্সিতে কেনের গোলের সংখ্যা ২৮০টি।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে টটেনহ্যামের হয়ে দুটি ইংলিশ লিগ কাপ ফাইনাল খেলেছেন কেন। খেলেছেন ২০১৮-১৯ মৌসুমের উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালেও। কিন্তু প্রতিবার রানার-আপ ট্রফি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে কেনকে। আন্তর্জাতিক ফুটবলেও কেনকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে দুর্ভাগ্য। ইউরো-২০২০-এর ফাইনালে ওঠা ইংল্যান্ড হেরেছে ইতালির কাছে। ২০১৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপ আর ২০১৮-১৯ মৌসুমের উয়েফা নেশন্স লিগের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয় কেনের ইংল্যান্ড। অথচ কেন ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬২ গোলের মালিক। জিতেছেন রাশিয়া বিশ্বকাপের ‘গোল্ডেন বুট’।
২০১৭ আর ২০১৮ সালে ইংল্যান্ডের বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন কেন। ২০১৭ সালে ৫৬ গোল করে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফুটবল হিস্টোরি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্স (আইএফএফএইচএস) কর্তৃক বিশ্বসেরা ফরোয়ার্ড নির্বাচিত হন।
ক্যারিয়ারের শুরু থেকে ব্যক্তিগত সাফল্য লুটোপুটি খেয়েছে কেনের পায়ে। কিন্তু একটি দলীয় ট্রফির জন্য হাহাকার করছেন তিনি। সাফল্যের আশায় ২০২৩ সালের আগস্টে যোগ দেন বায়ার্ন মিউনিখে। ১১০ মিলিয়ন ইউরো চুক্তিতে কেন পরিণত হন বুন্দেস লিগার ইতিহাসে সবচেয়ে দামি ফুটবলার।
বায়ার্নে যোগ দেওয়ার পর কেনের শুভাকাঙ্ক্ষীরা মেতেছিল আনন্দে। বায়ার্ন মিউনিখ তো শুধু জার্মানি না, ইউরোপের অন্যতম সফল দল। যাদের ঝুলিতে আছে ৩৩টি বুন্দেস লিগা আর ৬টি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ। আর সব মিলিয়ে বায়ার্নের শিরোপা সংখ্যা ৮৩টি। সবচেয়ে বড় কথা, ২০১২-১৩ মৌসুম থেকে টানা ১১টি বুন্দেস লিগা গেছে বাভারিয়ানদের ঘরে।
বায়ার্নের হয়ে অভিষেকেই শিরোপা জয়ের সুযোগ এসেছিল কেনের সামনে। কিন্তু জার্মান সুপার কাপের ফাইনালে আরবি লিপজিগের কাছে হেরে যায় কেনের বায়ার্ন। দুর্ভাগ্যের এখানেই শেষ নয়। ২০২৩-২৪ মৌসুমের বুন্দেস লিগাও ফস্কে গেছে। ক্লাবের ১২০ বছরের ইতিহাসে প্রথম লিগ শিরোপা এনে দিয়ে লেভারকুসেন কোচ জাভি আলোনসো এখন সুপার-হিরো।
হ্যারি কেন কি বায়ার্নের হয়ে ব্যর্থ হয়েছেন? মোটেই না। চলতি মৌসুমে বাভারিয়ানদের হয়ে ৪১ ম্যাচে হাঁকিয়েছেন ৪০ গোল। লিগের ৩০ ম্যাচে ৩৩ গোল করে ‘গোল্ডেন-বুট’ জয়ও নিশ্চিতপ্রায়। সব মিলিয়ে ফর্মের তুঙ্গেই আছেন কেন। কিন্তু শিরোপা ভাগ্য যে কথা বলছে না কেনের পক্ষে।
ইংল্যান্ডের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড গ্যারি লিনেকার যেন অনুভব করতে পেরেছেন কেনের মর্মবেদনা। জানিয়েছেন, ‘নিজের সর্বোচ্চটা দিয়েও আপনি সব সময় ম্যাচ বা টুর্নামেন্টের ফলাফল নিজের পক্ষে আনতে পারবেন না। যদি না ভাগ্যদেবী সহায় হয়। যেমনটা খেলোয়াড় থাকাবস্থায় আমারও কেন যেন আর শিরোপা জয়টা হয়ে ওঠে না!’
চলতি মৌসুমে কেনের সামনে শিরোপা জয়ের দুটি সুযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠেছে বায়ার্ন। এ ছাড়া জার্মানির ম্যাটিতে অনুষ্ঠিতব্য ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে হ্যারি কেনের নেতৃত্বে খেলবে ইংল্যান্ড। দেখার বিষয় হচ্ছে, চ্যাম্পিয়নস লিগ আর ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে কেনের শিরোপা ভাগ্য বদলায় কিনা। তা না হলেও ত্রিশ বছর বয়সী কেনের সামনে নিশ্চিতভাবেই কয়েকটা মৌসুম রয়েছে শিরোপা জয়ের। এ ক্ষেত্রে লিওনেল মেসি হতে পারেন কেনের অনুপ্রেরণা।
মেসির আন্তর্জাতিক শিরোপা স্বপ্নপূরণ হয়েছে ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে পৌঁছে। ভাগ্য সহায় হলে ক্লাব তো বটেই, আন্তর্জাতিক শিরোপা নিয়েও উল্লাসে মেতে উঠতে পারেন কেন। তাতে ঘুচবে তার ‘অপয়া’ অপবাদ, এমন প্রত্যাশা সকল ফুটবলপ্রেমীর।