
বাংলাদেশ দল। ছবি: সংগৃহীত
স্পোর্টসে যোগ্যতা ও মেধায় জায়গা দখল করতে হয়। এখানে ‘ছেড়ে দিতে হবে স্থান’ কথাটি খাটে না। ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট বেশ জটিল। অল্প বলের খেলায় অঙ্ক বেশি। দুই-এক ওভার এদিক-ওদিক হলেই খেলা হাত থেকে বেরিয়ে যাবে। এ ফরম্যাটে বড় বড় দলই হালে পানি পায় না। বাংলাদেশও এই ফরম্যাটটির পাঠ সেভাকে সম্পন্ন করতে পারেনি। এখনো বিশ্ব দরবারের সঙ্গে লড়াই করার মতো দল তারা হয়নি। মাঝে মাঝে তারা বড় দলকে হারিয়ে দেয় বটে। তবে সেটার ধারাবাহিকতা থাকে না।
বোকা পরিসংখ্যান জানায়, ১০০ টি-টোয়েন্টি হারা প্রথম দল বাংলাদেশ (তখন ১৬৮টি ম্যাচ খেলেছে)! পরিসংখ্যান সব সময় আসল চিত্র না দেখালেও, পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা দেয় বটে!
ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের ফল বেশ ভালো। টেস্টেও তারা ধীরে ধীরে উন্নতি করছে। তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে একেবারে লেজেগোবরে অবস্থা। ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে গেছে (২০১৫)। আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তারা সেমিফাইনালে (২০১৭) খেলেছে। টেস্টে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে তারা হারিয়েছে। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বড় কোনো অর্জন নেই তাদের। সুপার এইট বা কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে পারেনি টাইগাররা। ২০০৭ সাল থেকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশ এখনো ‘আন্ডারডগ’ বা অ্যাভারেজ দল হিসেবে অংশগ্রহণ করতে গিয়েছে সেখানে। আবার অনেকে প্রশ্ন করে বেকায়দায় ফেলতে পারে, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকাও তো ভালো দল। তারাও কেন কোনো বিশ্বকাপ জেতেনি? এ প্রশ্নের উত্তর কঠিন হলেও, খেলার মান সবাই বোঝে। হার-জিত খেলায় থাকে। কিন্তু কীভাবে হারছে সেটা একটা ব্যাপার। আর ক্রিকেটারদের খেলার মান কতটা ভালো সেটাও নির্ভর করে।
আরও একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। আবার ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জেও খেলা রয়েছে দুটি। সে বিশ্বকাপে খেলার আগে যুক্তরাষ্ট্রের সিরিজ হেরে বসে আছে তারা। বাংলাদেশ টেস্ট খেলুড়ে দেশ। ২৪ বছর হয়ে গেছে সব ফরম্যাটে খেলে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেট দলটিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার ও ব্যবসায়ী রয়েছেন। তারা ক্রিকেটে ট্রায়াল দিয়ে টিকে গেছে ওই দলে। এমন দলের সঙ্গে হার মেনে নিতে পারেনি ক্রিকেট রোমান্টিকরা। আমেরিকানরা ক্রিকেট খেলে না। আর এই খেলাটির ব্যাপারে জানাশোনা নেই বললেই চলে। সেই তারা প্রবাসীদের নিয়ে দল গড়েছে। আর সে দল হারিয়ে দিয়েছে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া বাংলাদেশকে।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজ হারের পর বাংলাদেশ দলের অনুশোচনা তেমন নেই। সাকিব আল হাসান মনে করেন, ক্রিকেট বোর্ড সুযোগ সুবিধা দেয়নি। আর যা পেয়েছে তা যথেষ্ট নয়। অবশ্য অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত মনে করেন, এটা তো প্রস্তুতিমূলক সিরিজ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে তারা নিজেদের যাচাই করেছে মাত্র। আসল পরীক্ষা তারা বিশ্বকাপে দেবেন। সেখানে বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করছে দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস ও নেপাল। প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ লিপু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণার দিন বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে তাদের একটা ব্যবধান আছে। তাদের টপকাতে হলে ওভার পারফর্ম করতে হবে। এ ছাড়া আর কোনো পথ নেই।’
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের গ্রুপে শিরোপা জয়ী দল একমাত্র শ্রীলঙ্কা। আর কঠিন প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ওভাবে হারের পর আর কেউ বিশ্বাস করে না বাংলাদেশ সুপার এইটে যাবে!